অনবরত কেঁদে চলেছেন শিশু আকিফা খাতুনের বাবা হারুন উর রশিদ। কখনো উচ্চ স্বরে, কখনো বা নীরবে। সঙ্গে আকুলিবিকুলি বিলাপ, ‘আমারে ছাইড়া কোথায় গেলি, মা। আমি কী নিয়ে বাঁচবো। কারে কোলের মধ্যে নিয়ে ঘুমাবো? মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে কারে কোলে নিয়ে বসে থাকবো?’
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে আকিফার লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স কুষ্টিয়ার চৌড়হাস মোড়ে আকিফাদের বাড়িতে এসে পৌঁছায়। এরপর নিহতের আত্মীয়-স্বজনের কান্না-আর্তনাদে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠে।
বৃহস্পতিবার (৩০ আগস্ট) ভোর ৫টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আকিফার মৃত্যু হয়। এর আগে গত মঙ্গলবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় পথচারী মা-মেয়েকে ধাক্কা দেয় যাত্রীবাহী একটি বাস। এতে মা রিনা বেগম ও শিশু আকিফা খাতুন গুরুতর আহত হয়। ঘটনাটি পাশের একটি জুয়েলারির দোকানের সিসি টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, কুষ্টিয়া শহরের চৌড়হাস এলাকায় আকিফাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছেন মা রিনা খাতুন। থেমে থাকা একটি বাসের সামনে দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় বাসটি কোনও ধরনের হর্ন না দিয়েই আচমকা মা-সন্তানকে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে মায়ের কোল থেকে ছিটকে রাস্তায় গিয়ে পড়ে আকিফা।
এ ঘটনার পর প্রথমে আকিফাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিশুটির অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার ভোররাত সাড়ে চারটায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি মারা যায়।
নিহত আকিফার ভাই রোহান বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে আমার মা এবং ছোট বোন পোড়াদহের খুদ্দআইলচারায় নানাবাড়ি বেড়াতে যাচ্ছিলেন। তারপর ওই ঘটনা। আমাদের তিন ভাই-বোনের মধ্যে আকিফা সবার ছোট। আমাদের আদরের বোনটাকে এভাবে হারাতে হবে, ভাবিনি।’
কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) শেখ ওবায়দুল্লাহ বলেন, ‘পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দিলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন–