X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বাবার সঙ্গে আর ইফতার করা হবে না তানিয়ার

বিজয় রায় খোকা, কিশোরগঞ্জ
০৮ মে ২০১৯, ১৭:৪৩আপডেট : ০৯ মে ২০১৯, ১০:৪৪

তানিয়ার বাবা গিয়াসউদ্দিন

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় শোকে স্তব্ধ এবং হতভম্ব এলাকার লোকজন। বাড়ির কাছে নিজের এলাকায় মেয়েটি এমন ঘটনার শিকার হবে তা ভাবতে পারছেন না কেউই। যে মেয়েটি শক্ত হাতে পরিবারের হাল ধরেছিলেন তাকে হারিয়ে এখন দিশেহারা স্বজনরা। কারও সান্ত্বনায় থামছে না তাদের কান্না আর হাহাকার।

চার ভাই ও দুই বোনের সংসারে তানিয়া ছিলেন সবার ছোট। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে নার্সের চাকরি করতেন। তার পিঠাপিঠি বড় ভাই কফিল উদ্দিন সুমন পিজি হাসপাতালের ব্রাদার। তারা দুজনে মিলেই পরিবারটি টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। মাত্র তিন মাস আগে দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগে তাদের মা মারা যান। বাবা গিয়াসউদ্দিন একা হয়ে যাওয়ায় তাকে সঙ্গ দিতে ছুটিছাটা নিয়ে প্রায়ই গ্রামে যেতেন তানিয়া। বাবাকে সান্ত্বনা দিতেন, স্বপ্ন দেখাতেন। রোজা উপলক্ষে বাবা ও ভাইদের সঙ্গে ইফতার করতে বাড়ি আসছিলেন তিনি। কিন্তু পরিবারটির সব স্বপ্ন, সব আনন্দ চুরমার করে দিয়েছে সোমবার রাতের ওই নৃশংস ঘটনা। এসব কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদছিলেন তানিয়ার দুই ভাই। বোনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাইছিলেন তারা।

শাহীনুর আক্তার তানিয়া

তানিয়ার ভাই কফিল উদ্দিন সুমন বলেন, ‘বিমানবন্দর থেকে আমার বোন স্বর্ণলতা বাসে করে বাড়িতে আসছিল। কটিয়াদি আসার পর বাসে কোনও যাত্রী ছিল না। পরে বাসটি পিরিজপুরের পথে নীরব জায়গায় থামায় চালক। আমার বোনকে ধর্ষণ করে হত্যা করে কুলাঙ্গাররা। আমার বোনের হাত-পা ভাঙা ও গলায় ওড়না পেঁচানো ছিল এবং মুখের মধ্যে টিস্যু পেপার গুঁজে দেওয়া হয়েছিল। আমি এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিনের বিলাপে কাঁদছে গ্রামবাসীও। তারা জানান, এই মেয়েটি পরিবারের প্রতি অত্যন্ত আন্তরিক ছিল। নিজের কথা কখনো চিন্তা করতো না। তার স্বপ্নজুড়ে ছিল কেবল বাবা আর ভাইবোন। মেয়েটি লেখাপড়া করে ইবনে সিনায় সেবিকার চাকরি নিয়েছিল। তার স্বপ্ন ছিল সরকারি সেবিকা হওয়ার। গত শনিবার তানিয়া বাবাকে ফোন করে বাড়ি আসার খবর জানিয়ে বলেছিল, পাঁচ দিনের ছুটি পেয়েছে সে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে রোজা পালন করতে বাড়ি আসছে। সবাই খুশি হয়ে মেয়ের পথ চেয়ে বসেছিলেন। কিন্তু লাশ হয়ে বাড়ি ফিরল তানিয়া।

তানিয়াদের বাড়িতে এলাকাবাসীর ভিড়

তানিয়ার বাবা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের জন্য মেয়েটা যা করার দরকার চাকরি করে সবই করতো। কিন্তু এই শয়তানের দলেরা আমার মেয়েটার জীবন শেষ করে দিলো। যা ক্ষতি করার তো সবই করলো। আমি আমার মেয়ের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।’

ময়নাতদন্ত শেষে তানিয়ার লাশ গতকাল মঙ্গলবার রাতেই মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে।

তানিয়ার বাবা গিয়াসউদ্দিন বাদী হয়ে বাজিতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় স্বর্ণলতা বাসের চালক গাজীপুরের কাপাসিয়ার নূরুজ্জামান ওরফে নূর মিয়া (৩৮) ও হেলপার একই এলাকার লালন মিয়াকে (৩২) সোমবার (৬ মে) রাতেই পুলিশ আটক করেছে। পাশাপাশি ওই বাসের পিরিজপুর ও কটিয়াদীর দুই লাইনম্যানসহ আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই পাঁচজনকে আট দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন কিশোরগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুনের আদালত।

উল্লেখ্য, সোমবার রাতে ঢাকার বিমানবন্দর থেকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের পিরিজপুর রুটে চলাচলকারী ‘স্বর্ণলতা’ পরিবহনের বাসে নার্স শাহীনুর আক্তার তানিয়াকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বাজিতপুর উপজেলায় কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের বিলপাড় গজারিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরি ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের মো. গিয়াসউদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালের কল্যাণপুর ক্যাম্পাসে সেবিকা পদে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (৬ মে) রাতে ঢাকা থেকে কটিয়াদী ও বাজিতপুরের পিরিজপুর হয়ে নিজ গ্রামে ফিরছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন- 

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর হত্যা: আটক ৫ জনকে ৮ দিনের রিমান্ড

কিশোরগঞ্জে চলন্ত বাসে নার্সকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ, আটক ২

/এফএস/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
কলকাতা স্টেশনে অর্থ পাচারের অভিযোগে গ্রেফতার বাংলাদেশি
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
তীব্র গরমে নির্বাচনি প্রচারণায় আ.লীগ নেতার মৃত্যু
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
দেশে আগ্রাসী শাসন চলছে: দিলারা চৌধুরী
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু