X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেঁদেকেটে বিদায় নিলেন এসপি হারুন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
০৭ নভেম্বর ২০১৯, ২০:৩০আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০১৯, ২২:২৪

বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে কাঁদছেন এসপি হারুন (ছবি– প্রতিনিধি) জেলা পুলিশের দেওয়া বিদায়ী সংবর্ধনায় চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে অঝোরে কেঁদেছেন সদ্য পুলিশ হেডকোয়ার্টারে বদলি হওয়া নারায়ণগঞ্জের বিতর্কিত পুলিশ সুপার (এসপি) হারুন অর রশীদ। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। এর আগে এসপি হিসেবে পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বিদায় নেন হারুন অর রশীদ।

জেলা পুলিশের দেওয়া বিদায় সংবর্ধনায় বক্তব্য দিতে গিয়ে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ও সন্তানকে তুলে নিয়ে আসার বিষয়ে এসপি হারুন বলেন, ‘গাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য পাওয়ায় রাসেলের বাড়িতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে অভিযান চালানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তার ছেলে ও স্ত্রীকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

বিতর্কিত এসপি হারুন অর রশীদ দাবি করেন, ‘আমার কোনও সহকর্মীর মাথায় কেউ যদি অস্ত্র তাক করে ভয়ভীতি দেখায়, আমরা কী তাকে আইনের আওতায় আনবো না? ক্ষমতা বা বড়লোক বিবেচনা না করে অপরাধীকে অপরাধী হিসেবে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।’

অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হওয়ার পরই পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাশেমের ছেলে ও আম্বার গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আজিজ রাসেলের বাসায় তল্লাশি চালানো হয় দাবি করে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়টি তদন্তে বের হয়ে আসবে।’ এ কথা বলেই তিনি অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন।

নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করেছেন দাবি করে এই বিতর্কিত এসপি মন্তব্য করেন, ‘পুলিশের পক্ষে সবাইকে খুশি করা সম্ভব না।’

এসপি হারুনকে দেওয়া বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, র‌্যাব-১ সিও কাজী শামসের উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাছুম, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলামসহ অনেকে।

এর আগে গত ৩ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপ-সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার পদ থেকে মোহাম্মদ হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহার করে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের টিআর শাখায় বদলির আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও এসপি হারুন নারায়ণগঞ্জে অবস্থান করছিলেন। অবশেষে আজ বৃহস্পতিবার নতুন এসপি মনিরুল ইসলামকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে অফিস থেকে বিদায় নেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর রাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে বাসা থেকে তুলে আনার অভিযোগ ওঠে এসপি হারুন ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিমের বিরুদ্ধে। শওকত আজিজ রাসেলকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলে নাটক সাজিয়ে দুই নম্বর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেন এসপি মো. হারুন অর রশিদ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, ১ নভেম্বর রাত পৌনে ১টায় নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে শওকত আজিজ রাসেলের গাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ চালক সুমনকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় গাড়িতে থাকা শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারা রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে। পরে দুপুরের দিকে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এমএ হাশেম ও বড় ছেলে আজিজ আল কায়সার টিটু এসপি অফিস থেকে ছেলের বউ ও নাতিকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। তবে শওকত আজিজ রাসেল ও ড্রাইভার সুমনকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা দায়ের করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু বিপত্তি বাধে শওকত আজিজ রাসেলের বাসার সিসিটিভি ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে। বিষয়টি খোলাসা হয় যে চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশন থেকে নয়, শওকত আজিজ রাসেলের বাসা থেকে স্ত্রী ও ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। এরই মধ্যে দুই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন শওকত আজিজ রাসেল। তবে ছয় দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আছেন রাসেলের ড্রাইভার সুমন।

জামিন পেয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে শওকত আজিজ রাসেল জানান, চার কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছিলেন এসপি হারুন। চাঁদা না দেওয়ায় নারায়ণগঞ্জে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। চাঁদা না দেওয়ার কারণেই ঢাকা ক্লাবের সামনে থেকে তার গাড়ি গায়েব করে দেয় পুলিশ। তার একদিন পর গায়েব হন তার স্ত্রী ও সন্তান। তাকে ফাঁসানোর জন্য গাড়িতে বিপুল পরিমাণ মাদক ও গুলি রেখে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। আর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা।

আরও পড়ুন-মিথ্যে মামলায় শওকত আজিজকে ফাঁসাতে এসপি হারুনের ফাঁদ! 

/এমএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
‘খেলাধুলার মাধ্যমে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরা দ্রুত নেতৃত্ব দিতে সক্ষম’
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ