X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘাত থামছে না পাহাড়ে, রাঙামাটিতেই ১১ মাসে ২২ খুন

জিয়াউল হক, রাঙামাটি
০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:৪১আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:২৫

আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিরোধে রাঙামাটিতে খুন হওয়া তিন জন পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরও পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে বিরোধ ও সংঘাত যেন কমছেই না। বরং দিন দিন বাড়ছে। আধিপত্য বিস্তার ও আদর্শিক দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছেন সাধারণ পাহাড়িরাই। চুক্তির ২২ বছর পর এই সংঘাতে মারা গেছে অন্তত হাজার খানেক মানুষ। গত ১১ মাসে শুধু রাঙামাটিতে সংঘাতে  প্রাণ গেছে ২২ জনের। প্রথমে  শান্তিচুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ দু’টি গ্রুপ থাকলেও বর্তমানে আরও দু’টি গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে সংঘাত আরও বেড়েছে।

সংঘাত দৃশ্যমান হলেও আঞ্চলিক কোনও সংগঠনই তা মানতে রাজি নয়। তারা বলছে, আদর্শগত সংগ্রাম চললেও তারা বলছে সংঘাত নেই।  আবার প্রত্যেকেই সংঘাতের নিরসনও চান।

আদর্শগত দ্বন্দ্বের চেয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ক্রমেই দ্বন্দ্ব, সংঘাত, আতঙ্ক  এবং ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে পাহাড়ে। আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধের জেরে  হামলা-পাল্টা হামলা, চোরাগোপ্তা হামলা, গোলাগুলির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। এছাড়া অপহরণ, গুমের ঘটনাও ঘটছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকের  অভিযোগ, শহর কিংবা শহরতলীর তুলনায় দুর্গম এলাকার বাসিন্দারা বেশি অসহায়। পৃথক চারটি ধারার রাজনীতির কাছে তারা জিম্মি। একটি দলের পক্ষে অবস্থান বা সমর্থন করলে অন্যটি ক্ষুব্ধ হয়। প্রায়ই তাদের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়।  প্রতিবাদ করলে বা নীরব থাকলেও খুন, গুম বা অপহরণ হতে হয়। সহিংসতা থেকে বাদ পড়েন না হেডম্যান বা কার্বারি, ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য কিংবা গ্রামের মুরব্বিরা।

ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলের সভাপতি শ্যামল কান্তি চাকমা বলেন, ‘প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ-এর জন্য আজ  পাহাড়ে এত সংঘাত। তারা তখন চুক্তি বিরোধিতা না করলে হয়তো পাহাড়ে আজ  চারটি আঞ্চলিক সংগঠন হতো না। পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ হোক এটা আমরা সবসময় চাই। এজন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু সন্তু লারমার জেএসএস ও প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ-এর কারণে এটি বন্ধ হচ্ছে না। তারা মুখে হানাহানি বন্ধের কথা বললেও সাধারণ পাহাড়িরা তাদের কথা বিশ্বাস করে না। তরা উভয়ে বিশ্বাসঘাতক।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) দলের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘পাহাড়ে কোনও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে  আমাদের দল জড়িত ছিল না। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আমরা গণতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। চুক্তি বাস্তবায়ন হলে যাদের বেশি ক্ষতি হবে তারাই চুক্তি বাস্তবায়নে বাধা তৈরি করছে। আমরাও চাই পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থা বিরজমান থাকুক। সবাই নিরাপদে শান্তিতে বসবাস করুক।’

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক) যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি অংগ্য মারমা বলেন, ‘শাসক গোষ্ঠীর কারণে  পাহাড়ে সংঘাত বন্ধ হচ্ছে না। গত ১০ নভেম্বর মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় জেএসএস ও ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) দলগুলো ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও হানাহানি বন্ধে সবাইকে  ঐক্যবন্ধ হওয়ার আহ্বানকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু তারপরও বন্ধ হচ্ছে না।’

চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন চাই। চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য এলাকায় সমস্যা সমাধান হবে না। পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধানের জন্যই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু ২২ বছর হতে চললেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়নি। চুক্তি  বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা বলতে পারি না পার্বত্য অঞ্চলের সমস্যা সমাধান হয়েছে।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, পাহাড়ে শান্তি স্থাপনের জন্য চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে আইন যদি তার নিজস্ব গতিতে চলতে পারে তাহলে এখানে শান্তি আসতে বাধ্য। শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় আঞ্চলিক সংগঠনের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে হতাশা। আর এই কারণে হানাহানিও বাড়ছে। প্রাণহানির ঘটনা কমাতে হলে রাষ্ট্রকে ও শান্তিচুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে যেসব দল রয়েছে তাদেরকে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই পাহাড়ে শান্তি আসবে।’

শিক্ষাবিদ প্রফেসর বাঞ্ছিতা চাকমার মতে, পাহাড়ে শান্তি ফেরাতে হলে সবপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। তাহলেই পাহাড়ে অবশ্যই শান্তি ফিরবে। আমরা সবাই চাই পাহাড়ে হানাহানি বন্ধ হোক। 

আরও পড়ুন:

‌যে কার‌ণে বান্দরবা‌নে শা‌ন্তিচু‌ক্তির বর্ষপূ‌র্তি পালন কর‌বে না জেএসএস

শান্তিচুক্তির ২২ বছর: কতটা শান্তি ফিরলো পাহাড়ে?

পাহাড়ে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর কাছে ভারী অস্ত্র, অসহায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

 

 

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ভারতকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খসড়া সূচি করেছে পাকিস্তান
ভারতকে নিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খসড়া সূচি করেছে পাকিস্তান
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
টিপু-প্রীতি হত্যা: আ.লীগ নেতাসহ ৩৩ জনের বিচার শুরু
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
ঘনঘন শ্যাম্পু ব্যবহারে চুল রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন সমাধান
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড