মারাত্মক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে পাহাড়ি জনপদ খাগড়াছড়ির অধিকাংশ বাজার, আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনগুলো। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বহুতল ভবনগুলোতে নেই অগ্নিপ্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। ভবন নির্মাণে মানা হচ্ছে না বিল্ডিং কোডের শর্ত। এজন্য বেড়েই চলেছে আগুন লাগার ঘটনা। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে ৪৭টি। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকার।
খাগড়াছড়ি জেলার নয় উপজেলার মধ্যে কয়েকটিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ইউনিট থাকলেও দুর্গম পাহাড়ি জনপদ যাতায়াতের সমস্যা ও পানি সংকটের কারণে অগ্নিকাণ্ডকে মোকাবিলা করা সম্ভব হচ্ছে না। জনসচেতনতাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবকেও দুষছেন ভুক্তভোগীরা।
খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙা উপজেলার খেদাছড়া বাজারে আগুন লাগে গত ২৯ নভেম্বর ভোরে। মুহূর্তে ভস্মীভূত হয় ২০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ব্যবসায়ীদের আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা। এর আগে খাগড়াছড়ি বাজারে গত ১২ অক্টোবর রাতে বৈদ্যুতিক শটসার্কিটের আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দশটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। চোখের সামনে আগুন জ্বলতে দেখেও নির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রায় এক কোটি টাকার।
এ বিষয়ে খাগড়াছড়ির সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সভাপতি অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আইনের তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে খাগড়াছড়িতে নদী, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাট করে অনেক বাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বা স্থাপনায় আগুনের ঘটনা ঘটলেও পানির অভাবে ফায়ার সার্ভিস বা উদ্ধারকর্মীরা চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেন না। এ বিষয়ে যথাযথ আইগত ব্যবস্থা নিলে শৃঙ্খলা আসবে এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাও কমবে। মানুষের জীবন ও সম্পদেরও নিরাপত্তা থাকবে।’
স্থানীয় সাংবাদিক ও পরিবেশকর্মী প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে এখনও বিল্ডিং কোড মানা হচ্ছে না। নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় সব স্থাপনায়। ফলে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে প্রায়শই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফায়ার সার্ভিস ইউনিট খাগড়াছড়িতে খুবই সক্রিয় থাকলেও অনেক সময় দুর্গম জনপদে যেতে যেতে সব শেষ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় গিয়ে পানির উৎস না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না।’
খাগড়াছড়ি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী লিয়াকত আলী বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেক ব্যবসায়ী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জনসাধারণকে বিল্ডিং কোড অনুসরণ করতে বাধ্য করতে হবে।’
খাগড়াছড়ির ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক মো. দিদারুল আলম বলেন, ‘শুধুমাত্র সচেতনতার অভাব, অসতর্কতা ও নিম্নমানের বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আমরা প্রত্যেক বছর সপ্তাহ জুড়ে সচেতনতামুলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পাশাপাশি বছর জুড়েই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতার জন্য কাজ করছি। তারপরেও কমানো যাচ্ছে না অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা। এ ব্যাপারে সচেতন না হলে অগ্নিকাণ্ড ঘটতেই থাকবে।’
খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম বলেন, ‘অগ্নিজনিত ক্ষতিরোধ ও সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করা হচ্ছে। আইন না মানলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
খাগড়াছড়ির সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ‘শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীলতা নয়, অগ্নিজনিত ক্ষতি থেকে রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে।’ সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোকে নিরাপত্তায় আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।