পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নতুন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের রাজ্যসভার সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ছাড়া অন্য কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। মনোনয়ন প্রত্যাহারও করেননি তিনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শমীকই হলেন বিজেপির নতুন রাজ্য সভাপতি।
বিজেপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) এই ঘোষণা করা হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাচন আধিকারিক রবিশঙ্কর প্রসাদ এদিন দুপুরে শমীকের হাতে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার শংসাপত্র তুলে দেবেন।
শমীক ভট্টাচার্যের সভাপতি হওয়া নিয়ে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডার বাসভবনে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দলের রাজ্যসভার সাংসদকে আসন্ন দায়িত্বের আভাস দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পেয়ে বুধবার সকালের উড়ানে কলকাতায় যান শমীক। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফোনও করেন বিজেপির দিল্লির নেতৃত্ব। এর পরে সল্টলেকে বিজেপির দফতরে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেন তিনি। শমীকের সঙ্গে ছিলেন সুকান্ত মজুমদার এবং বিধানসভার বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীও।
শমীক ভট্টাচার্যের রাজনৈতিক জীবনের একটা বৃত্ত যেন সম্পূর্ণ হল। মাত্র আট বছর বয়সে ১৯৭১ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে (আরএসএস) যোগ দেন। এরপর দক্ষিণ হাওড়া মণ্ডলের যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদক হন। একটানা ১১ বছর যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন পোড়খাওয়া এই রাজনীতিবিদ। পরপর তিনবার রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও সামলেছেন। দলের জাতীয় কার্যকরী সমিতির সদস্য ছিলেন। রাজ্যের কোর কমিটিতেও ছিলেন তিনি।
২০১৪ সালের বিধানসভা উপনির্বাচনে জয়ী হন বসিরহাট দক্ষিণ থেকে। যদিও সেই জয়ের পর পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে তাকে। ২০১৬ সালের ভোটে আবার বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে দীপেন্দু বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দমদম কেন্দ্রে লড়ে সৌগত রায়ের কাছে পরাজিত হন। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে রাজারহাট গোপালপুরে লড়েন। কিন্তু হেরে যান তৃণমূলের অদিতি মুন্সির কাছে। বর্তমানে রাজ্যসভা সদস্য হওয়ার পাশাপাশি দলের মুখপাত্রও তিনি।
তবে দায়িত্ব নেওয়ার বছর খানেকের মধ্যেই অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়বেন শমীক। সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে হবে তাকে। তিনি যে 'টিম ওয়ার্কে' বিশ্বাসী সেই আভাস দেন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সংঘবদ্ধভাবে বিজেপি লড়াই করবে। পরাজয় নিশ্চিত জেনেও যারা ঘাম ঝরিয়েছেন, তারাও থাকবেন। আর যারা নতুন এসেছেন, সক্রিয়ভাবে বিজেপি করছেন, তারাও থাকবেন। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন। পুরনোদেরও বুঝতে হবে, সংগঠনে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ নিতে হয়। কুমোরটুলি থেকে অর্ডার দিয়ে আনা যায় না। ফলে নতুন-পুরনোর বিতর্ক কিছু থাকবে না।