কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটকের পৈতৃক ভিটার একটি অংশ ভেঙে অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ করছে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রাজশাহীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও চলচ্চিত্র সংগঠনের কর্মীরা। ইতোমধ্যে গ্যারেজ নির্মাণ না করার দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ শরীফুল হকের হাতে এ স্মারকলিপি তুলে দেওয়া হয়। রাজশাহীর প্রগতিশীল ১৩টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ স্মারকলিপি তুলে দেন।
এসময় রাজশাহী ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি আহসান কবীর লিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ বকুল, কবি ও কবিতার সংগঠন ‘কবিকুঞ্জের’ সভাপতি অধ্যাপক রুহুল আমিন প্রামানিক, ঋত্বিক ঘটক ফিল্ম সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ ইসলাম মাসুদ, নাট্য সংগঠন ভোর হলোর সভাপতি কামার উল্লাহ সরকার কামাল উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক কুমার ঘটক রাজশাহী মহানগরীর মিঞাপাড়ার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এখানে কেটেছে তার শৈশব, কৈশোর ও তারুণ্যের একটি অংশ। এই বাড়িতে কিছু সময় বসবাস করেছেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীও। এই বাড়িতে থাকার সময়ই ঋত্বিক ঘটক রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহী কলেজে পড়েছেন। তিনি রাজশাহী কলেজ এবং মিঞাপাড়ার সাধারণ গ্রন্থাগার মাঠে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে নাট্যচর্চা করেছেন। ঋত্বিক ঘটক রাজশাহীতে ‘অভিধারা’ পত্রিকা সম্পাদন করেছেন। বিলুপ্ত কল্পনা হলের ‘ভাবীকাল’ নামে একটি চলচ্চিত্রের ব্যানারও এঁকেছেন বলে জানা যায়। এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৯ সালে নামমাত্র মূল্যে তার পৈতৃক বাড়িটি রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজকে ইজারা দেওয়া হয়। তারাই এখন সম্পূর্ণ বাড়িটি ব্যবহার করছে। বাড়িটির এক অংশে ইতোমধ্যে বহুতল ভবন করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আরেক অংশে যেসব কক্ষে ঋত্বিক ঘটকের পরিবারের সদস্যরা থাকতেন, সেসব কক্ষও ব্যবহার করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তারই একটি অংশ ভেঙে অস্থায়ী সাইকেল গ্যারেজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিককর্মীরা এ সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা দ্রুত এমন কাজ বন্ধ করে ঋত্বিকের পৈতৃক ভিটা সংরক্ষণ করে হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। একইসঙ্গে এই ভিটায় ঋত্বিক ঘটক স্মৃতি জাদুঘর গড়ে তোলারও দাবি জানান তারা।
এদিকে রাজশাহী হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ডা. আনিসুর রহমান বলেন, এনিমি প্রোপার্টি হিসেবে সরকার ৩৪ শতক জমি কলেজের নামে লিখে দেয়। সে হিসেবে পুরো বাড়িটিই কলেজের জন্য বরাদ্দকৃত জমি। এখন বাকি কক্ষগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, তবে কলেজ আরও সচ্ছল হলে তখন ওইসব বাড়িও ভাঙা পড়বে। আর যে কক্ষটি ভাঙা পড়ছে সেই কক্ষটির অবস্থা জরাজীর্ণ ছিল বলে দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ( সার্বিক) মুহম্মদ শরীফুল হক বলেন, আমরা স্মারকলিপি পেয়েছি। কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাজ বন্ধ করতে বলেছি। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমস্যার সমাধান বের করা হবে বলে জানান তিনি।