X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেলা প্রশাসকের নির্দেশেও দখলমুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধার দোকান

এস এম আববাস
০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:৪৩আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২০, ০০:৪৯

জেলা প্রশাসকের নির্দেশেও দখলমুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধার দোকান

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান বাজারে মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন শাহের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে রাখার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিবি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, জমি দখলের উদ্দেশে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিনের লোকেরা  মুক্তিযোদ্ধার  দোকানে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ঘটনার পর জেলা প্রশাসক ওই দোকানের তালা খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু বিগত পাঁচ মাসেও এর কোনও সুরাহা হয়নি। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হয়। ফলে মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের পরিবার এখন মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেনের পারিবারিক কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক পণ্যের দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয় রইচ উদ্দিনের লোকেরা। এই ঘটনার পর আফজাল হোসেনের ছেলে সজীব ভাঙ্গুড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে ভাঙ্গুড়া থানা পুলিশ তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পায়। তবে বিবি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিন পুলিশকে জানায়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে ওই দোকানে তালা মারা হয়েছে। ফলে জমিসংক্রান্ত বিরোধ হিসেবে বিষয়টি আমলে নিয়ে দোকানের তালা খোলার বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারেনি পুলিশ।

এই পরিস্থিতিতে মুক্তিযোদ্ধার ছেলে সজীব গত বছরের ৪ ডিসেম্বর জমি সংক্রান্ত জমির দলিল, রেকর্ড, খাজনা পরিশোধের রশিদ, সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপতত্রের অনুলিপিসহ ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টি নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সহকারী ভূমি কমিশনারকে (এসি ল্যান্ড) তদন্তের নির্দেশ দেন। এসিল্যান্ড সার্ভেয়ার পাঠিয়ে সরেজমিন তদন্তের ব্যবস্থা নেন। সার্ভেয়ারের কাছে মাদ্রাসার ম্যনেজিং কমিটি জমির মালিকানার সপক্ষে কোনও কাগজপত্র দাখিল করতে পারেনি।

মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন শাহ বলেন, ‘আমার ছেলে সজীবের নামে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। জমির মালিকানা আমার ছেলের নামে।  নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছে সে। অথচ গত আগস্ট মাসে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিন দোকানে জোর করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনায় ভাঙ্গুড়া থানায় ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহীর কাছে অভিযোগ দেওয়া হলেও প্রভাবশালীদের কারণে পুলিশ ওই তালা খুলে দিতে পারেনি। এ কারণে পাঁচ মাস ধরে পরিবার নিয়ে কষ্টের মধ্যে জীবন-যাপন করছি।’

জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে ভূমি অফিসের সার্ভেয়ারের নেতৃত্বে একটি টিম সরেজমিন পরিদর্শনের পর উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। লোকজনের উপস্থিতিতে জমির মালিকানার সপক্ষে মুক্তিযোদ্ধার ছেলের মালিকানার কাগজপত্র দাখিল করা হয়। তবে মাদ্রাসার মালিকানার পক্ষে কোনও কাগজপত্র দেখাতে পারেননি সভাপতি রইচ উদ্দিন। 

জেলা প্রশাসকের নির্দেশেও দখলমুক্ত হয়নি মুক্তিযোদ্ধার দোকান

জানতে চাইলে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনসহ বসেছি। জেলা প্রশাসক পুরো বিষয়টি শুনেছেন। বিষয়টির সঙ্গে যেহেতু সরকারের সরাসরি স্বার্থ জড়িত নেই, সে কারণে এসিল্যান্ড সেভাবে এখানে এখতিয়ার দেখাতে পারেন না।  যেহেতু এখানে দেওয়ানি বিষয় রয়েছে, সেহেতু চাইলে তারা আদালতে যেতে পারেন। ’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসক আমার সামনেই উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য বলেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের এ বিষয়ে এখতিয়ারও রয়েছে। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জেলা প্রশাসক এই নির্দেশনা দিয়েছেন।’    

ভাঙ্গুড়া উপজেলার এসিল্যান্ড (অতিরিক্ত দায়িত্ব) রাফিউল আলম বলেন, ঘটনার পর জমির মালিকানা নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।  জমির মালিকানা কার তা জানতে চাইলে রাফিউল আলম বলেন, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছ থেকে জানতে পারবেন।

ভাঙ্গুড়া উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোকসেদ আলী বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। সবার উচিত একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো। সেক্ষেত্রে আইনগত কাগজপত্র দেখে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি অবমুক্ত করে দিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিবি দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রইচ উদ্দিন বলেন, জায়গা (জমি) তারা কিনেছে, কিন্তু মাদ্রাসার জায়গা তারা কি কিনতে পারে? মাদ্রাসার জায়গা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন তারা (সজীব)। পরে একইভাবে দলিলপত্র করে নিয়েছেন, রেকর্ড থাকলেই কি জমি পাওয়া যায়?  তাই তার কাছ থেকে জমি ও ঘর উদ্ধার করতে তাকে দোকান থেকে নামিয়ে দিয়ে তালা মারা হয়েছে।

মাদ্রাসার জমি তারা (মুক্তিযোদ্ধার পরিবার) মাদ্রাসার কাছ থেকে কেনেনি। অন্য লোকের কাছ থেকে কিনেছে—বলেও উল্লেখ করেন রইচ উদ্দিন।

তবে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোকসেদ আলী বলেন, দোকানটি বছরের পর বছর ধরে চালাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সবাই জানে দোকানটির মালিক মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন শাহের ছেলে সজীব।

 

/এমআর/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
ফিরেই ফর্টিসকে বিধ্বস্ত করলো মোহামেডান
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে পদ্মা নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
রাশিয়ায় বন্ধ হলো জাতিসংঘের নজরদারি সংস্থার কার্যক্রম
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
ওজন কমিয়ে সাকিব পুরো ফিট, সন্তুষ্ট সহকারী কোচ
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা
চিয়া সিড খাওয়ার ৮ উপকারিতা