বাম্পার ফলন হলেও করোনায় পরিবহন ব্যয় চার থেকে পাঁচ গুণ বেড়ে যাওয়ায় তরমুজের দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। আর পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কমেছে পাইকারও। তরমুজ কেনায় কোনও প্রতিযোগিতা না থাকায় যে যার মতো করে দাম বলছেন। ফলে উৎপাদন খরচও উঠাতে পারছেন না কৃষক। উৎপাদন ব্যয় মেলাতে তিন থেকে চার দিন তরমুজ নিয়ে বরিশাল নগরীর পোর্ট রোড খালে অবস্থান করতে গিয়ে খরচ আরও বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তরমুজ উৎপাদনকারী কৃষকরা।
কৃষকরা জানিয়েছেন, এ বছর হেক্টর প্রতি কৃষকের তরমুজ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। তরমুজ বিক্রির পর হেক্টর প্রতি আয় হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। করোনায় পরিবহন মালিকরা সিন্ডিকেট করায় আড়তদাররাও সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে বলছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। তারা আরও জানান, পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় আড়তদারের সংখ্যা কমে যাওয়ায় কোনও প্রতিযোগিতা নেই। আর যে কয়জন পাইকারি দরে তরমুজ কিনছেন তারা তেমন দাম বলছেন না। দাম পেতে দুই-চার দিন নগরীর পোর্টরোড খালে অপেক্ষা করলেও কোনও লাভ হয় না। বরং কয়েকদিনের খরচ মিলে দাম মূলত কমে কৃষকের টাকা।
এ বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলায় ২৪ হাজার ৬৮৮ হেক্টর জমিতে ১০ লাখ মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদন হয়েছে। সর্বোচ্চ ১২ কেজি এবং সর্বনিম্ন তিন থেকে পাঁচ কেজি ওজনের তরমুজ উৎপাদন হওয়ায় দারুন খুশি ছিলেন কৃষক। কিন্তু সে খুশি স্থায়ী হয়নি। ক্ষেত থেকে তরমুজ তুলে আড়তে নিয়ে আসার পর দাম শুনে কৃষকের মাথায় বাজ পড়ার মতো অবস্থা।আড়তদাররা যে দাম বলছেন তাতে উৎপাদন ব্যয় দূরের কথা, বছরে জমির ভাড়া বাবদ যে টাকা গুনতে হবে তাও মিলছে না। এরপর যারা দাদন নিয়েছেন তারা আড়তদারের নির্ধারিত মূল্যে তরমুজ বিক্রিতে বাধ্য হওয়ায় বড় ধরনের লোকসানে পড়তে যাচ্ছেন।
বরিশাল বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র থেকে জানা গেছে, এ বছর বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরমুজ চাষ হয়েছে পটুয়াখালী জেলায়। সেখানে ১৪ হাজার ৮২২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। পর্যায়ক্রমে ভোলায় সাত হাজার ৭২২ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৮ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন, বরগুনায় এক হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ৬৯ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন, বরিশাল জেলায় ৩৫১ হেক্টর জমিতে ১৪ হাজার ৪০ মেট্রিক টন, পিরোজপুরে ৪৬ হেক্টর জমিতে এক হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন এবং ঝালকাঠির ১৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে ৬শ’মেট্রিক টন তরমুজ।
আড়তদার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, ‘তরমুজ কেনার পর তা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে হয়। এখন করোনায় সীমিত আকারে ট্রাক চলাচল করায় মালিক পক্ষ সিন্ডিকেট করে পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি করায় আমাদেরও সেভাবে তরমুজ কিনতে হচ্ছে। এখানে আমাদের কোনও সিন্ডিকেট বা কোনও অপরাধ নেই। পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষক যেমন ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে একইভাবে আমরাও লোকসানের মুখে পড়েছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক আফতাব উদ্দিন বললেন, ‘বেশিরভাগ কৃষক পাইকারদের কাছ থেকে দাদনে টাকা নিয়ে তরমুজ চাষ করায় সঠিক মূল্য না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কৃষকদের লোকসান পুষিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রনোদনার দাবি জানাবো।’