করোনার উপসর্গ নিয়ে দেশের ১২ জেলায় ২১ জন মারা গেছেন। এদের কেউ কেউ করোনা পজিটিভি ছিলেন। অনেকেই বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। আবার কেউ কেউ উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হলো।
বেনাপোল
যশোরের শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়নের হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে ইয়াকুব আলী (৫৫) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বুধবার (১০ জুন) রাতে গ্রামের বাড়িতেই তিনি মারা যান। ইয়াকুব আলী কয়েকদিন আগে হৃদরোগের চিকিৎসা নিতে ঢাকায় যান। সেখানে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা-নীরিক্ষা শেষে করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। বিষয়টি পরিবারের কাউকে না জানিয়েই বুধবার তিনি ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে আসেন এবং রাতেই নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান।
বৃহস্পতিবার (১১ জুন) শার্শা উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলক কুমার মন্ডল এবং শার্শা উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খোরশেদ আলম চৌধুরী ইয়াকুবের বাড়ি লকডাউন করে দেন।
সিরাজগঞ্জ
করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় শুকুর আলী (২৯) নামে এক যুবক। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় উল্লাপাড়ার দুর্গানগর ইউনিয়নের বজ্রাপুর গ্রামের বাড়িতে তিনি মারা যান। কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে গাজীপুরের কাপাশিয়ায় কাজ করতেন তিনি।
শুক্কুরের ভাই শাহাদত আলী বলেন, দু’দিন আগে গাজীপুর থেকে বাড়ি আসার পর তার তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে তাকে নেওয়া হয়। ভেন্টিলেশন নেই জানিয়ে তাকে সদর উপজেলার বাগবাটি কোভিড হাসপাতালে যেতে পরামর্শ দেওয়া হয়। সেখানে গেলেও ভর্তি না করে কোভিড পরীক্ষার সনদ চাওয়া হয়। এরপর শহীদ এম.মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যান। সেখানে গিয়ে করোনার পরীক্ষা করাতে পারিনি। রাতে বিনা চিকিৎসায় মারা যান তার ছোট ভাই।
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, তার যে করোনার উপসর্গ ছিল, সকালে তিনি হাসপাতালে আসলেও প্রকাশ করেননি।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, মারা যাওয়ার পর জানা গেছে যে তার শরীরে করোনার উপসর্গ ছিল। সে যে করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেছেন বিষয়টি আমরা মোটেই অবগত নই।
উল্লাপাড়ার ইউএনও আরিফুজ্জামান জানান, আপাতত বাড়িটি লকডাউনসহ সারাদিন যেখানে যেখানে তিনি ঘুরেছেন সেসব স্থান ও ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৯৩ জনের মৃত্যু হলো। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৬৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো তিন হাজার ৭৭১ জনে। বুধবার জেলা সিভিল সার্জন অফিসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
নরসিংদী
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার ভিটি মরজাল গ্রামে করোনা উপসর্গ নিয়ে টুটুল মিয়া (২৪) নামে এক যুবক মারা গেছেন। বুধবার দুপুরে কোভিড ডেডিকেটেড নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নমুনা দিতে যান তিনি। তবে নমুনা দেওয়ার আগেই সেখানে তার মৃত্যু হয়। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) এএনএম মিজানুর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
টুটুলের পরিবার জানায়, সে কয়েকদিন ধরে জ্বর, শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। পরে নমুনা দেওয়ার জন্য নরসিংদী জেলা হাসপাতালে যায় সে। নমুনা দেওয়ার আগেই সে মারা যায়।
আরএমও জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেন তিনি। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় আগে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির আধা ঘণ্টার মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া
করোনার উপসর্গে ব্রাহ্মবাড়িয়ায় তাহসিন আক্তার জনি (৩২) ও শরিফ উদ্দিন (৩৫) নামে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। নবীনগরে করোনা উপসর্গ নিয়ে তাহসিন বুধবার সকালে পৌর এলাকার মাঝিকাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মারা যায়। তিনি সিলেটে কৃষি বিপণন অধিদফতরে কর্মরত ছিলেন।
এলাকাবাসী ও স্বজনেরা জানান, সপ্তাহ খানেক আগে সিলেট থেকে বাড়িতে আসার পর ঠান্ডা, কাশি ও জ্বরে ভুগছিলেন তাহসিন। নিজ বাড়িতে আইসোলোশনে ছিলেন তিনি। বুধবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনার উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হয়। পরিবারে চার বোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড় এবং সংসারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম। তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরে উপজেলা ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করা হয়।
নবীনগর উজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুম জানান, তাহসিনের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। যারা তার সংস্পর্শে এসেছিল তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, নাসিরনগরে বুধবার সকালে ফান্দাউক ইউনিয়নের আতিকুড়া গ্রামের বাড়িতে মারা যায় শরিফ। গত কয়েকদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট ও সর্দি কাশিতে ভুগছিলেন। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
পরিকল্পনা পরিদর্শক শরিফ উদ্দিন ফান্দাউক ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক (এফপিআই) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা আশরাফি জানান, নিহতের বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আরও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।
বগুড়া
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল আইসোলেশন ইউনিট ও টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে বৃহস্পতিবার পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বগুড়ায় ২২ জন মারা গেলেন।
তারা হলেন, বগুড়া বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের গণিতের প্রভাষক শহরতলির বারপুর এলাকার আবু ইউসুফ আলী (৩৭), সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইদুর রহমান (৬৮), সদরের ধাওয়াপাড়া সালেহা খাতুন (৪৯), ধরমপুর এলাকার ইলিয়াস প্রামানিক (৬০) ও শিবগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম (৫০)।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, আবু ইউসুফ আলী শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। বৃহস্পতিবার তাকে অচেতন অবস্থায় আইসোলেশনের ভর্তি করা হয়। দুপুর ১টার দিকে তিনি মারা যান। সাইদুর রহমান শ্বাসসকষ্ট নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান। সালেহা খাতুন জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বুধবার রাতে আইসোলেশনে ভর্তি হন। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা গেছেন। তিন জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ কররা হয়েছে।
বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার প্রতিষ্ঠানের প্রভাষক আবু ইউসুফ আলী হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন। তার করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন বগুড়ার অর্গানাইজার মিজানুর রহমান জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ইলিয়াস প্রামানিক ও রাত ১টায় জাহাঙ্গীর আলম মারা যান। তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ
করোনায় আক্রান্ত হয়ে তামান্না খাতুন (২০) নামে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী নার্সিং কলেজের ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে চিকিৎসকসহ ১৮ জন নতুন করে
আক্রান্ত হয়েছেন।
তামান্নার মামা মামা হাসিবুল হাসান জানান, আম গাছ থেকে পড়ে আহত হয় তামান্না। প্রথমে তাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর ২৮ মে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যখন ভর্তির সময় তার করোনার কোনও উপসর্গই ছিল না। হাসপাতালে ভর্তির পর তার
করোনাও উপসর্গ দেখা যায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরে তার নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠায়। সোমবার তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার ভোর রাতে সে মারা যায়।
সিভিল সার্জন ডা: জাহিদুল ইসলাম জানান, তামান্নার মৃত্যুর পর বকেয়া বিল নিয়ে ঝামেলার কারণে লাশ হস্তান্তরে বিলম্বিত হয়। স্বজনরা বিষয়টি জানালে আমার রেফারেন্স দিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
হিলি
দিনাজপুরের হিলিতে করোনার উপসর্গ নিয়ে সাহেব আলী (৬০) নামের এক ব্যক্তির বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধ সাভার থেকে বাড়িতে এসেছিলেন। বুধবার নিজ বাড়িতে মারা যান।
হাকিমপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা.নাজমুস সাঈদ বলেন, সম্প্রতি সাহেব আলী সাভার থেকে হিলির জাংগই গ্রামে তার নিজ বাড়িতে আসেন। তার জ্বর, সর্দি ছিল। সংবাদ পেয়ে আমরা তার ও পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে গত সপ্তাহে পাঠিয়েছি। তবে পরীক্ষা জট হওয়ায় এখন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে তিনি মারা গেলেন। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক তার দাফন হয়েছে।
বরিশাল
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক বৃদ্ধার (৭০) মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ জুন) মারা যাওয়া ওই বৃদ্ধার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া এলাকায়।
হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান জানান, ৬ জুন বেলা ১২টার দিকে করোনার উপসর্গ নিয়ে ওই রোগী করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। মঙ্গলবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
কুমিল্লা
কুমিল্লায় করোনার উপসর্গে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে আরও ৫৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৫১৪ জন। জেলার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. শাহাদাত হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানিয়েছেন, করোনার উপসর্গে মনোহরগঞ্জ ও সদর দক্ষিণের দু’জন মারা যান।
টাঙ্গাইল
টাঙ্গাইলে করোনার উপসর্গ নিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। নতুন করে আরও ১৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন ডা. ওয়াহীদুজ্জামান বলেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে দেলদুয়ার উপজেলার একজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনায় মোট ছয় জনের মৃত্যু হলো।
নওগাঁ
নওগাঁয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও চার জন আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিন জনই ইসলামী ব্যাংক নওগাঁ শাখার কর্মকর্তা এবং অন্যজন শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকার মগবাজার এলাকায় একটি ব্যাংকের সিকিউিরিটি গার্ড হিসেবে চাকরি করতেন। জ্বর, সর্দি নিয়ে তিনি ৫ জুন বাড়িতে আসেন। পরীক্ষার জন্য নমুনা দিয়ে হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। তার অবস্থার অবনতি হলে ৮ জুন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ৯ জুন সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। সিভিল সার্জন ডা. আখতারুজ্জামান আলাল ্ তেথ্য জানিয়েছেন।