আম্পানের আঘাতের ৯০ দিন পর আবার প্লাবিত খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলা এবার আমাবস্যার প্রবল জোয়ারের পানিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) কয়রায় ৫টি স্থান ভেঙে ৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ১০ হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি উপচে পড়েও প্লাবিত হচ্ছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে ২নং কয়রা, গোবরা, ৩নং কয়রা ও বেদকাশি গ্রাম। বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো আটকানোর চেষ্টা করছে। এর আগে বুধবার কয়রা উপজেলার কাজী পাড়া, পুটিহারী, হরিণখোলা, কাশিরহাট খোলা, ঘাটাখালি প্লাবিত হয়েছিল।
এছাড়া পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীর পানির চাপে হাড়িয়ার বাঁধ বুধবার ভেঙে মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়। স্থানীয় লোকজন বৃহস্পতিবার স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধটি আটকানোর কাজ করে।
কয়রার সামাজিক সংগঠন জাগ্রত যুব সংঘের সহ-সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, জোয়ারের পানির চাপে কয়রার হরিণখোলা, গাটাখালী ও ২নং কয়রায় ৫টি স্থানের বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে আরও চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ২৫০০ পরিবার সংকটে পড়েছেন। সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ আটকানোর কাজ বিকাল ৪টা থেকে শুরু করেছে। হঠাৎ করে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে কয়রা ডুবেছে।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম বলেন, জোয়ারের পানির চাপে ঘাটাখালী, ২ ও ৩নং কয়রায় বাঁধ ভেঙে গেছে। সাধারণ মানুষের চেষ্টায় বাঁধ আটকানোর কাজ চলছে। আর কিছু জায়গায় গ্রামে পানি প্রবেশ করছে।
উত্তর বেদকাশি গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, অতিরিক্ত পানি বাড়ায় কয়রার উত্তরবেদকাশি আবারও লবণ পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
কয়রার গাজী পাড়ার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আম্পানের পর কোনোমতে ঘরে ফিরে বসবাস করছিলাম। কিন্তু জোয়ারের পানিতে আমরা ফের প্লাবিত হয়েছি। এখন আমার ঘরে পানি।’
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, হঠাৎ করে বুধবার জোয়ারের অতিরিক্ত পানির তোড়ে বাঁধ উপচে বিভিন্ন গ্রামে পানি ঢুকেছে। এতে নতুন করে ভোগান্তি তৈরি হয়েছে। বৃহস্পতিবারও ৫টি জায়গা ভেঙেছে।
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, জোয়ারের পানির চাপে বিভিন্ন স্থান ভেঙে ও সড়ক উপচে গ্রামে পানি প্রবেশ করছে। জোয়ার কমলে এসব স্থানে প্রয়োজনীয় মেরামত করা সম্ভব হবে। আর বিভিন্ন স্থানে স্বেচ্ছাশ্রমের কাজে বস্তা সরবরাহ করা হচ্ছে।
এদিকে পাইকগাছার সোলাদানার ভাঙ্গাহাড়িয়ার ভাঙ্ন স্থানীয় লোকদের নিয়ে বুধবার বিকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত মেরামত করেছে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান এসএম এনামুল হক। এসময় পাইকগাছা উপজেলা ইউএনও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে সবাইকে বাঁধ মেরামত কাজে উৎসাহ দেন।
জোয়ারের পানির চাপে বুধবার পাইকগাছার বয়ারঝাপায় ঝুঁকিপূর্ণ ভাঙা হাড়িয়া ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। জোয়ারের পানির তোড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ২৫০টি চিংড়ি ঘের ভেসে যায়। মাজরাবাদ, বয়ারঝাপা ও টেংরামারী গ্রাম প্লাবিত হয়। এ ৩টি গ্রামে ১৫ হাজার মানুষ এখন দুর্ভোগে রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী ফরিদউদ্দীন জানান, ইতোপূর্বে ৪ বার সরকারি ও স্থানীয়ভাবে বাঁধ মেরামত করা হলেও টেকসই মেরামতের অভাবে বারবার পাইকগাছার এ এলাকাটি ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকছে। স্থায়ী বাঁধ মেরামতের জন্য ৩ লাখ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ইউপি মেম্বর কল্যাণী মণ্ডল বলেন, ‘বাঁধ ভেঙে তিনটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। ১৫ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা আপাতত আটকানে হয়েছে। এখানে দ্রুত টেকসই বাঁধ দেয়ার ব্যাপারে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।