পঞ্চগড়ে একটি পরিত্যক্ত চা বাগানে দুটো বাচ্চাসহ একটি চিতাবাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে এমন সংবাদে ওই চা বাগানসহ আশপাশের সব জঙ্গল কেটে ফেলেছে প্রশাসন। তবে সেখানে মেলেনি বাঘের অস্তিত্ব। এ ঘটনায় বাঘ ধরা অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেন বাঘ ধরা অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এসময় বনবিভাগের কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দুটি বাচ্চাসহ একটি চিতা বাঘ ওই এলাকার চা বাগান ও জঙ্গলে লুকিয়ে আছে এবং স্থানীয়দের গরু, ছাগল, কুকুর মেরে ফেলছে এমন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়দের আতঙ্ক কমাতে সেখানে বাঘ ধরতে অভিযান শুরু করে বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসন। ৫০ জনের বেশি শ্রমিক দিয়ে কাটা হয় জঙ্গল, পরিষ্কার করা হয় পরিত্যক্ত চা বাগান। শুক্রবার থেকে ওই চা বাগান ও জঙ্গল কাটা শুরু হয়। শনিবার বিকেলে জঙ্গল ও বাগান কাটা শেষ হলেও বাঘের দেখা মেলেনি।
উপজেলা প্রশাসন, বনবিভাগসহ স্থানীয়দের ধারণা, মানুষের কোলাহলের কারণে বাঘগুলো হয়তো রাতের আঁধারে চাওয়াই নদী পেরিয়ে ভারতে ফিরে গেছে অথবা অন্যত্র সরে গেছে। ফলে অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করলেও বাঘ কোথায় পালালো অন্যত্র সরে গেল কিনা, আবার ফিরে আসবে কিনা এমন আতঙ্ক রয়েই গেছে স্থানীয়দের মধ্যে।
গত বুধবার স্থানীয় এক লোকের একটি গরু বাঘ হত্যা করেছে এমন খবরে জেলা প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি এবং যার গরু হত্যা হয়েছে তিনি বাঘ দেখেছেন বলে দাবি করতে থাকেন। সীমান্তবাসীদের বিএসএফ সদস্যরা দুটো বাচ্চা নিয়ে একটি চিতাবাঘ নদী পার হয়ে এপারে এসছে এমন তথ্য দেওয়ায় বিষয়টি নিয়ে ভীষণ আতঙ্ক তৈরি হয় সীমান্তবর্তী গ্রামবাসীদের মধ্যে। তাদের আতঙ্ক কমাতে সন্ধ্যার পর বাইরে না থাকা, একা ঘুরে না বেড়ানো এবং পরিত্যক্ত চা বাগানটির আশেপাশে তাদের না আসতে মাইকিং করে অনুরোধ জানায় প্রশাসন ।
এরপর বৃহস্পতিবার দিনাজপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে গাজীপুর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক-এর ভেটেরেনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ মো. জহুর আমীন এবং ওয়ারলেস স্কাউট আতিকুল ইসলাম প্রথমে পুরো বাগানে তল্লাশি করেন। এরপর তাদের উপস্থিতিতে বাগান কাটা শুরু হয়।
লোকজনসহ প্রশাসন সেখানে নরম মাটিতে বাঘের পায়ের দাগ দেখেছেন এমন কথা এর আগে চাউর হয়েছিল। প্রশাসন তা অস্বীকার করেনি। তবে শুক্রবার বিকেলে ভেটেরেনারি সার্জন হাতেম সাজ্জাদ জানান, যে পায়ের চিহ্ন সেখানে পাওয়া গেছে সেগুলো চিতাবাঘের নাও হতে পারে। আবার হলেও উৎসুক জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে বাঘ তার স্থান পরিবর্তন করতে পারে। তবে আমরা এখনও বাঘের কোনও সন্ধান পাইনি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আমরা শ্রমিক লাগিয়ে পরিত্যক্ত চা বাগানের চা গাছ কাটার কাজ শুরু করি। শনিবার শ্রমিকের সংখ্যা বাড়িয়ে সকাল থেকে আবারও চা গাছ কাটার কাজ শুরু করা হয়। স্থানীয়রাও দা দিয়ে চা গাছ কেটে বাড়ি নিয়ে যায়। সন্ধ্যার আগেই বাগানের গাছ কাটা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু এর মধ্যে বাঘের কোনও দেখা পাওয়া যায়নি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ হোসেন বলেন, গ্রামবাসীদের সন্দেহের পর আমরা শুক্রবার সকাল থেকেই পরিত্যক্ত চা বাগানের গাছ কাটার অনুমতি দেই। শনিবার বিকেলের মধ্যে বাগানের সব গাছ কাটা শেষ হয়। গাছ কাটা শেষ করার পর বন বিভাগের কর্মকর্তা, প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, পুলিশ, ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার মানুষজন উপস্থিত হয়ে সেখানে বাঘের অস্তিত্ব পাইনি। একারণে বাঘ খোঁজার অভিযান সমাপ্তির ঘোষণা দেই।