কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম সোনারপাড়া গ্রামে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে মাথা ন্যাড়া করে অমানবিক নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত ৫ আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হেলাল উদ্দিন এই আদেশ দিয়েছেন।
তারা হলেন ওই এলাকার মৃত শফির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ (৫০), মোহাম্মদের ছেলে শফি আলম (৩০), রফি আলমের ছেলে জাহিদ হোসেন (৩৫), মৃত হোছন আলীর ছেলে আবদুস শুক্কুর (৪৮) ও মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ ইসলাম ওরফে কৈ সালাম (৩২)। এর আগে আসামিরা জামিনের আবেদন জানিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। ঘটনার মূলহোতা জালাল আহমদ পলাতক রয়েছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পশ্চিম ঘোনার পাড়ার ছৈয়দ আহমদ নামের যুবককে মাথা ন্যাড়া করে অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুরো দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পরে উখিয়ায় ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে উখিয়া থানা পুলিশ। নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদ ওই এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে।
অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান রেজা জানান, ঘটনায় জড়িত ও মামলার ২ নম্বর থেকে ৬ নম্বর আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করেন এবং আসামিদের জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
অভিযোগ মতে, গরু চুরির অভিযোগ এনে ছৈয়দ আহমদকে রাতভর নির্যাতনের পর ২৭ সেপ্টেম্বর সকালে মাথা ন্যাড়া করে ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনকারী স্থানীয় জালাল আহমদ নির্যাতনের সময় ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে পরে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত জালাল আহমদসহ ৬ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদের বোন জোবাইদা বেগম।
জোবাইদা বেগম দাবি করেন, স্থানীয় শামসুল আলমের ছেলে জালাল আহমদ বিনা অপরাধে আমার ভাই ছৈয়দ আহমদকে সোনারপাড়া বাজার থেকে ধরে নিয়ে গরু চুরির অভিযোগে নির্যাতন করে। সারারাত বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে বেঁধে গলায় জুতার মালা পরিয়ে কোদাল দিয়ে মাথা ন্যাড়া করে দেয়। পরে কোদাল দিয়ে ন্যাড়া মাথায় আঘাত করেন। এ ঘটনায় আমার ভাই জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ রফিক ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
জোবাইদা বেগম বলেন, নির্যাতনের শিকার আমার ভাই এখন গুরুতর অসুস্থ। সে উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার নাক এবং মুখ দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ কারণে আমি সুষ্ঠু বিচার চেয়ে অভিযুক্ত জালাল আহমদসহ চারজনকে আসামি করে উখিয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
তার দাবি, জালাল আহমদ মানবপাচারসহ বহু মামলার আসামি। বর্তমানে নদীপথে মানবপাচার বন্ধ থাকায় নতুন করে ইয়াবার কারবারে জড়িয়ে পড়েছে জালাল আহমদ। তার অপকর্মের খবর পুলিশকে বলে দিয়েছে সন্দেহে আমার ভাইকে গরু চুরির অপবাদ দিয়ে নির্যাতন করেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ রফিক বলেন, নির্যাতনের শিকার ছৈয়দ আহমদ স্থানীয় দোকানদার। তাকে জালাল আহমদ গরু চুরির অভিযোগে বাজার থেকে ধরে নিয়ে বেঁধে রাখেন। তাকে মারধরও করা হয়। যে গরুটি চুরির অভিযোগ তোলা হয় সেটি মালিকের বাড়িতেই ছিল। তবুও অপরাধী হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। কিন্তু মারধর করা ঠিক হয়নি। এভাবে নির্যাতন করা অমানবিক।
এ বিষয়ে জালাল আহমদ ঘটনার পর পর বলেন, এলাকায় যাতে আর কোনও সময় গরু চুরির ঘটনা না ঘটে, সেজন্য পুরো এলাকাবাসীকে শিক্ষা দিতে এমনটি করা হয়েছে।