X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৩ আষাঢ় ১৪৩২

‘ভাইঙতে ভাঙতে এইবার বাড়ির কাছত নদী আইসছে’

নীলফামারী প্রতিনিধি
২১ অক্টোবর ২০২০, ১০:২১আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২০, ১০:২১

নদী ভাঙন



‘বাড়ি থাকি অনেক দূরত ছিল নদী। ভাইঙতে ভাইঙতে এইবার বাড়ির কাছত নদী আইসছে। ২-৩ বার বাড়ি সরে নিয়াও এবার আর বাঁচার উপায় নাই। কী করমো হামরা দিশায় না পাই।’ কথাগুলো বলছিলেন, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলাম।

 

জেলার সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ৪ নদী ও একটি খাল ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩০ কিলোমিটার খনন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।  এর মধ্যে খরখরিয়া, জমুনেশ্বরী, চিকলী, ধাইজান ও চারালকাটা নদী খনন করা হলেও পাড়, গাছ ও ঘাস না লাগায় ৩ মাসের মাথায় ৪৪টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এসব এলাকার মসজিদ, মন্দির, কবরস্থান, বাড়ি, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাট, এলজিইডির দুটি ব্রিজ রয়েছে হুমকির মুখে।

ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান, মাজেদা বেগমের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়সারা ভাবে চারালকাটা নদী খননের ফলে এলাকাবাসী খুবই আতঙ্কে আছে। নদী ভাঙনের বালু ফসলি জমিতে পড়ে এবারের ধান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে।
আজহারুল ইসলাম জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড এখন কাজের নয়-ছয় করে কোনও রকমে লোক দেখানো নদী খনন করেছে। সরকারের টাকা খরচ তো ঠিকই হয়, কিন্ত কাজের কাজ কিছুই হয় না।  

নদী ভাঙন
আম্বিয়া বিলাপ করে বলেন, ‘নদী ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির গোরোত চলি আইসছে। দুই দিন পর বাড়িও থাইকবে না। হামরা পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবেই ভয়ের মধ্যে আছি। ঘরত এবার ধান চাউল ও তুলতে পারি নাই। কী খেয়া থাকমো হামরা।’
ওই এলাকার ইউপি সদস্য জোনাব আলী খান বলেন, ডাঙ্গাপাড়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চারালকাটা নদী দায়সারা খনন করায় এলাকার মসজিদ, মন্দির, কবর স্থান, বাড়ি, রাস্তা ঘাট, হুমকির মুখে আছে। এবারে এই নদীর বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাপক হারে ভাঙতে শুরু করেছে। এলাকার আড়াইশ’ একর জমিতে বালু দিয়ে ভরপুর হয়ে গেছে। নদীর বালু ধান ক্ষেতে পড়ে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করে থাকি। এবার আলুও হবে না। মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে ভেবে কূল পাচ্ছি না। এসব বিষয় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা বলেন, বাজেট আসলে কাজ হবে। কবে আসবে বাজেট, এলাকা বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন,  ‘আমার নিজ অর্থায়নে যতটুকু পারি রাস্তা মেরামত করছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে রাস্তা মেরামতের জন্য আবেদন করলেও কোনও রকম সাড়া পাইনি। একটু বৃষ্টি হইলে লোকজন বাড়ি থেকে বের হতে পারে না। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার অনুরোধ, নদীর বাঁধ ও ব্লক করে দিয়ে এলাকাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।’

নদী ভাঙনে ভুক্তভোগীরা

জানতে চাইলে সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণকমল চন্দ্র সরকার বলেন, নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের আওতায় আমরা ১৩০ কিলোমিটারসহ ৪টি নদী, খাল খনন করেছি। এসব নদী খনন করায় পার্শ্ববর্তী এলাকার পানি নদীতে পড়ছে। যার কারণে নদীর পানি প্রবাহের ধারা পরিবর্তন হওয়ায় ৪ নদীর ৪৪টি পয়েন্টে ভাঙনের দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নদী ভাঙন রোধকল্পে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রকল্প উপস্থাপনা করেছি। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে আমরা নদী ভাঙন রোধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। কিন্তু নদী খননে অনিয়ম ও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধের বিষয়টি তিনি কৌশলে এড়িয়ে যান।

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে মনোনিবেশের নির্দেশ
রাজস্ব বিভাগের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাজে মনোনিবেশের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ