X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
২৯ বৈশাখ ১৪৩২

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৫ বধ্যভূমির অধিকাংশই অরক্ষিত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০৯:০০আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:৪৬

শহীদ স্মৃতিসৌধ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা ও চেতনাদীপ্ত জেলা হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়। এ জেলার সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ৭৩ কিলোমিটার সীমান্তপথ হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে জেলাটির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। সম্মুখ যুদ্ধের নানা ঘটনাসহ অর্ধ লাখ মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। কালের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য স্মৃতিসৌধ। অরক্ষিত রয়েছে অসংখ্য বধ্যভূমি।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের গবেষকরা জানান, মুক্তিযুদ্ধের ২ ও ৩ নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে। যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ভারতে যাতায়াত করতেন। আবার দেশের বিভিন্ন এলাকার ছাত্র, যুবকসহ মুক্তিকামী জনতা মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিতে নৌকাসহ বিভিন্নভাবে সীমান্তে পাড়ি দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওপর দিয়ে ভারতে প্রবেশ করতেন। তাদের অনেকেই ভারতে যাওয়ার সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকারদের হাতে আটক হয়ে অমানবিক নির্যাতনের পর গণহত্যার শিকার হন। গণহত্যার শিকার হয়েছেন শরণার্থীরাও। সীমান্তবর্তী হওয়ায় এ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে অনেক বেশি। যার ফলে মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অন্তত ৫০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কয়েকজন গবেষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ৯ মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার বিভিন্ন স্থানে তুমুল লড়াই হয়েছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। এসব শহীদের মধ্যে অন্য জেলার বাসিন্দারাও ছিলেন। প্রায় ৩৪৩ জনকে গণহত্যার পর তাদের লাশ জেলার বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা দেওয়া হয়। কিছু লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় নদী ও খালে।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষকেরা জানান, ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামে পাকিস্তানিদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোস্তাফা কামাল। এছাড়া আখাউড়া উত্তর ইউনিয়নের আজমপুর, রাজাপুর ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় বড় ধরনের লড়াই হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে শত্রুমুক্ত করতে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে জেলার আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় মিত্রবাহিনী পাক বাহিনীর ওপর বেপরোয়া আক্রমণ চালাতে থাকে। ১ ডিসেম্বর আখাউড়া সীমান্ত এলাকায় ২০ হানাদার নিহত হয়। ৩ ডিসেম্বর আখাউড়ার আজমপুরে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। সেখানে ১১ হানাদার নিহত হয়। শহীদ হন ৩ মুক্তিযোদ্ধা।

এরই মাঝে বিজয়নগর উপজেলার মেরাশানী, সিঙ্গারবিল, মুকুন্দপুর, হরষপুর, আখাউড়া উপজেলার আজমপুর, রাজাপুর এলাকা মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে যায়। ৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদাররা পিছু হটতে থাকলে আখাউড়া অনেকটাই শত্রুমুক্ত হয়ে যায়। সেখানে রেলওয়ে স্টেশনের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর দুই শতাধিক সেনা হতাহত হয়। ৬ ডিসেম্বর আখাউড়া সম্পূর্ণভাবে হানাদার মুক্ত হয়। 

পৌর এলাকার পৈরতলা বধ্যভূমি এরপর থেকে চলতে থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত করার প্রস্তুতি। মুক্তি বাহিনীর একটি অংশ ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ দিক থেকে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক দিয়ে এবং মিত্রবাহিনীর ৫৭তম মাউন্ট ডিভিশন রেজিমেন্টের সদস্যরা আখাউড়া-ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেললাইন ও উজানীসার সড়ক দিয়ে অগ্রসর হতে থাকে। শহরের চতুর্দিকে মুক্তিবাহিনী অবস্থান নিতে থাকায় পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় ৬ ডিসেম্বর রাজাকারদের সহায়তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে.এম লুৎফুর রহমানসহ জেলা কারাগারে আটক অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালাতে থাকে। পরে ৮ ডিসেম্বর কোনও ধরনের প্রতিরোধ ছাড়াই ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত হয়।

এরপর মুক্তিযুদ্ধে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল জোনের অর্থনীতি বিষয়ক চেয়ারম্যান জহুর আহমেদ চৌধুরী ও তার সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নেতা অ্যাডভোকেট আলী আযম ভূইয়াসহ অন্যারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। একই দিন সন্ধ্যায় জেলার সরাইল উপজেলাও শত্রুমুক্ত হয়। 

জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, মুক্তিযোদ্ধা ও গণপূর্ত বিভাগের তালিকা মতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৫টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এগুলোর অধিকাংশই রয়েছে অযত্নে, অবহেলায়। বেশির ভাগ বধ্যভূমিতে নেই সীমানা প্রাচীর। বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণও করা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলার বধ্যভূমির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে ৯টি, আশুগঞ্জে ৪টি, সরাইলে ৪টি, নাসিরনগরে ১টি, আখাউড়ায় ৫টি, কসবায় ৪টি, নবীনগরে ৪টি ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ৪টি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বধ্যভূমি ও স্মৃতিসৌধের কথা তুলে ধরা হলো।

নবীনগর উপজেলার খাড়ঘর বধ্যভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার বধ্যভূমি

১৯৭১ সালের ১৬, ২০ ও ২১ নভেম্বর রাতের আঁধারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে আটক বৃদ্ধিজীবিসহ বন্দিদের বের করে দক্ষিণ পৈরতলা রেলওয়ে ব্রিজের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়। পরে সেখানে তাদেরকে মাটি চাপা দেওয়া হয়। সেখানে প্রায় পাঁচশ নিরীহ লোককে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এরমধ্যে ৬ জনের নাম পাওয়া গেছে। গণকবরটিতে নামমাত্র একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে।

কুরুলিয়া খালের পাড় বধ্যভূমি

ব্রাহ্মণবাড়িয়া হানাদারমুক্ত হওয়ার মাত্র দুই দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর রাতে জেলা কারাগার থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক লুৎফুর রহমান, সরাইলের আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়া, তার ছোট ভাই সৈয়দ আফজল হোসেনসহ প্রায় ৫০ জনকে বের করে পৌর এলাকার কাউতলী মহল্লার পশ্চিমে কুরুলিয়া খালের পাশে নিয়ে হত্যা করা হয়। ৮ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত হলে অধ্যাপক লুৎফুর রহমানের লাশ কাউতলী গ্রামের কবরস্থানে এবং অ্যাডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়া ও তার ছোট ভাই সৈয়দ আফজল হোসেনের লাশ সরাইল পারিবারিক কবরস্থানে নিয়ে দাফন করেন স্বজনেরা। বাকি লাশগুলো বধ্যভূমিতে পচে-গলে যায়। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এই বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করা হয়নি। এ নিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন।

নবীনগর খারঘর বধ্যভূমি
’৭১-এর ১০ অক্টোবর সকালে নবীনগর উপজেলার বড়াইল ইউনিয়নের খারঘর গ্রামে পাকিস্তানি সেনা ও রাজাকার বাহিনী প্রবেশ করে গ্রামের নিরীহ ৫১ জনকে হত্যা করে। এদের মধ্যে ৪৩ জনকে খারঘর কবরস্থানের দুটি গণকবরে দাফন করা হয়। পার্শ্ববর্তী গ্রামের ৮ জনকে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে কবর দেওয়া হয়। খারঘর গণহত্যার শহীদদের স্মরণে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। বধ্যভূমির জায়গাটি সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।

সরাইলের ধর্মতীর্থ বধ্যভূমি
১৯৭১ সালের ৬ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ (হালে ধরন্তি) এলাকায় স্থানীয় রাজাকার প্রধান ও সরাইল থানা শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল মন্নাফ ঠাকুর এবং এ রহমান খানসহ কয়েকজন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে ১৮ অক্টোবর পাক বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার ও শান্তিবাহিনী সরাইল উপজেলার চুন্টা ও কালীকচ্ছ ইউনিয়নের শতাধিক নারী-পুরুষকে (যাদের অধিকাংশ সংখ্যালঘু) ধরে এনে নির্যাতন শেষে এখানে হত্যা করে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ধর্মতীর্থ গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রশিদ বলেন, পাকিস্তানি সেনারা নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে এখানে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সেই জায়গাটি এখনও অরক্ষিত। তিনি সেটি সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে দাবি জানান।
বর্তমান জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের নির্দেশে ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সরাইলের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এস.এম মোসা বধ্যভূমির জায়গাটি চিহ্নিত করে মাঝখানে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। বর্তমানে সেই সাইনবোর্ডটিও জরাজীর্ণ।

আখাউড়ায় বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধিসৌধ সরাইল বিটঘর বধ্যভূমি
সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের বিটঘর গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা। এই গ্রাম থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর গেরিলা হামলা চালাতেন, সরাইল থানাও আক্রমণ করেন। ৩০ অক্টোবর বিটঘর গ্রামের পার্শ্ববর্তী বেড়তলা গ্রামে পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের ঘণ্টাব্যাপী সম্মুখ যুদ্ধ হয়। ওইদিন সন্ধ্যার পর বিটঘর গ্রামের পার্শ্ববর্তী দুর্গাপুর গ্রামে এক পাক সেনাকে হত্যা করে গ্রামবাসী। তার প্রতিশোধ নিতে পরদিন সকালে স্থানীয় রাজকারদের সহায়তায় জেলার সরাইল ও আশুগঞ্জ উপজেলা থেকে দুই শতাধিক পাক সেনা গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। এরপর নির্বিচারে শুরু করে হত্যাকাণ্ড। জাফর খালের পাড়ে একেসঙ্গে ৮-১০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করতে থাকে। গ্রামের ৮০ জনকে হত্যা করে পাক সেনারা। ওইদিন তাদের হাতে শহীদ হন গ্রামের পল্লি চিকিৎসক খালেক ডাক্তারের চার সন্তান। লাইন থেকে দৌড়ে পালিয়ে বেঁচে যান গ্রামের মন্তাজ উদ্দিন, আশকর আলী ও সফর আলী।

সেদিন গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া গ্রামের আশকর আলী (৭০) ও শহীদ মাহফুজ মিয়ার বড় ভাই মন্তাজ উদ্দিন জানান, নিহতদের লাশ দাফন করতে ২-৩ দিন সময় লেগেছিল। অধিকাংশ কবরে ৪ থেকে ৫ জনের লাশ দাফন করা হয়। গ্রামের মালেকা খাতুন, পেশকার খাতুন, নূর জাহান বেগম, জুবেদা খাতুন, রাফিয়া খাতুন, ফুলবানুসহ একাধিক নারী জানান, ওইদিন কারও স্বামী, কারও ভাই, কারও ছেলে নৃশংস গণহত্যার শিকার হন।

ছেলামত আলী জানান, ওইদিন পাঞ্জাবিরা (পাকবাহিনী) তার তিন ভাই হামদু মিয়া, নান্নু মিয়া এবং জজ মিয়া, দুই চাচাতো ভাই শামসু মিয়া ও জমশু মিয়া এবং চার মামা দারু মিয়া, ইসলাম উদ্দিন, ইউসুফ আলী ও শুকুর মাহমুদ এবং চাচাতো মামা মাহফুজ মিয়াকে হত্যা করে।
গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী, গ্রামের শওকত আলী (৮০) জানান, পাক সেনারা সরাইল থেকে হেঁটে এবং জাফর খাল দিয়ে নৌকায় করে গ্রামে প্রবেশ করে গণহত্যা শুরু করে। লোকজনকে ঘর থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে জাফর খালের পাড়ে হত্যা শেষে লাশ খালের পানিতে ফেলে দেয়। গ্রামের পুরুষ যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই হত্যা করেছে। তার প্রতিবেশী ভাতিজা মফিজ এবং মামাতো ভাই নূরুল হক ওরফে নুরু মিয়াকেও ওইদিন হত্যা করা হয়।

গণহত্যায় শহীদ সামসু মিয়ার স্ত্রী মালেকা খাতুন বধ্যভূমিতে থাকা ১৫ শতক জমি তার স্বামীসহ সকল শহীদের স্মৃতি রক্ষার্থে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য দান করেন। ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্তমান জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খানের উদ্যোগে সেখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। স্মৃতিসৌধে ৮টি স্মৃতিফলকে ৮০ জন শহীদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।  

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্তিযুদ্ধের গবেষক, সাহিত্য একাডেমির সভাপতি, প্রবীণ সাংবাদিক ও কবি জয়দুল হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এখন পর্যন্ত ৩৫টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে। গণকবর রয়েছে ১৮০টি। জেলায় গণহত্যা হয়েছে ৩৪৩টি।  ইতোমধ্যেই অনেক গণকবর ও বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। নদী ভাঙন, বাড়ি-ঘর নির্মাণ, ফসলি জমির কারণে অনেক বধ্যভূমি নিশ্চিহ্ন হয়েছে। তিনি দ্রুত গণকবর, বধ্যভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আল-মামুন সরকার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলার আখাউড়া উপজেলার তন্তর এলাকা দিয়ে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে নৌকাযোগে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে গমন করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয় শেখ জামাল। যুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর পরবর্তী সরকারগুলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ করেছিল। কারাগারে আটক মুক্তিযুদ্ধের ঘাতকদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় মুক্ত করে দেওয়া হয়। জেনারেল ওসমানীর স্বাক্ষর করা মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ অকার্যকর করে সর্বক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করে।  

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পুনর্জাগরণ শুরু হয়। বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন, গণকবর ও বধ্যভূমি চিহ্নিত করে এগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক হায়ত উদ্-দৌলা খান বলেন, দুই বছর আগে এ জেলায় যোগ দেওয়ার পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছি। যতদিন থাকবো বধ্যভূমি সংরক্ষণের চেষ্টা করে যাবো। 

/আরআইজে/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
থাইল্যান্ডে গেছেন মির্জা ফখরুল
লিবিয়ায় নিরাপত্তা সংকট: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ
লিবিয়ায় নিরাপত্তা সংকট: প্রবাসী বাংলাদেশিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশনে শিক্ষার্থীরা
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ঘিরে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদে ১১০ নাগরিকের বিবৃতি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনকে ঘিরে বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদে ১১০ নাগরিকের বিবৃতি
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
আসন্ন বাজেটে নতুন কী থাকছে
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
রংপুরের হাসপাতাল নেপাল ও ভুটানের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে: প্রধান উপদেষ্টা
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
একাত্তরে গণহত্যায় সহযোগিতায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যার আহ্বান এনসিপি’র
একাত্তরে গণহত্যায় সহযোগিতায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক অবস্থান ব্যাখ্যার আহ্বান এনসিপি’র