X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের সময় কদর বাড়ে মুণ্ডা সম্প্রদায়ের

খুলনা প্রতিনিধি
০১ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:০২আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০১৬, ১৫:০২

কয়রার মুণ্ডা পরিবার

নিজ যোগ্যতা দিয়ে সমাজের জায়গা করার প্রচেষ্টার কমতি নেই আদিবাসী মুণ্ডা সম্প্রদায়ের লোকজনের। এ সম্প্রদায়ে আগে শিক্ষিত মেলা ভার ছিল। সময় পাল্টেছে, এখন অনেকেই শিক্ষিত। তবে শিক্ষিত হওয়ার পরও তারা চাকরি পাচ্ছেন না। এছাড়া নানা সুযোগ-সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত।

এইচএসসি শিক্ষার্থী প্রমীলা বলেন, ‘পড়াশোনা শিখে কোনও কাজে আসছে না। শুধু ভোটের সময় আমাদের কদর বাড়ে। ভোটের পর জনপ্রতিনিধিরা আমাদের খোঁজও রাখেন না। নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিগুলোও তারা ভুলে যান। বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়।’

কয়রা উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি (আদিবাসী) মুণ্ডা সম্প্রদায়ের ৯৫ বছরের তারাপদ মুণ্ডা এভাবেই তুলে ধরলেন এই সম্প্রদায়ের চিত্র। তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত ছেলে-মেয়েরা চাকরি পেতে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালোও করে। কিন্তু চাকরি পায় না।’

কেবল তারাপদ মুণ্ডাই নন, এমন হতাশা প্রকাশ করেছেন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এই সম্প্রদায়ের নবীন ও প্রবীণ সদস্যরা।

মুণ্ডা পরিবার

কয়রা সদর ইউনিয়নের ২নং কয়রা, মাঝের আইট এবং ৬নং কয়রার টেপাখালী গ্রাম, উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের বতুল বাজার, পশুর তলা, বড়বাড়ি, শেখ সরদার পাড়া, নোনা দিঘীর পাড়, হরিহরপুর ও কাটকাটা, দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের বীনাপানি এলাকার ১২টি গ্রামে বর্তমানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজার সদস্য বাস করছেন। তাদের পেশা মূলত কৃষিকাজ।

তারাপদ মুণ্ডা বলেন, ভারতের রাঁচি থেকেই এখানে এসেছেন বলে তার স্মরণে আছে। পাগলা সর্দার নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম কয়রার বেদকাশি এসে বসবাস শুরু করেন। সেই থেকে এখানে বংশানুক্রমে তাদের বসবাস।

তিনি বলেন, মুণ্ডাদের গোত্রীয় রীতিনীতিও অত্যন্ত চমকপ্রদ। প্রতি এক বছরের জন্য তারা নিজেদের মধ্য থেকে রাজা নির্বাচন করেন। বিভিন্ন এলাকার গোত্র প্রধানরা এক হয়ে ঠিক করেন রাজা। সর্বশেষ রাজা নির্বাচিত হয়েছেন গীরেন মুণ্ডা। এর আগে ছিলেন তার বাবা অর্জুন। এছাড়াও ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের প্রধানদের রাজা মন্ত্রীর মর্যাদা দেন। সেটা রাজার ইচ্ছাতেই সম্পন্ন হয়। প্রায় ১৫ বছর আগে সর্বশেষ রাজা নির্বাচন করা হয়। আধিপত্য বিস্তার অথবা ব্যক্তি বা অন্য গোত্রের সঙ্গে কোনও বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিলে সকলে রাজার স্মরণাপন্ন হন। রাজা ওই সমস্যার সমাধান করেন। শাস্তির ধরণটিও ভিন্ন। শাস্তি হিসেবে অভিযুক্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে নির্দিষ্ট পরিমাণ লোককে খাওয়াতে হবে।

শ্যামপদ মুণ্ডা বলেন, ধর্মীয় রীতিতে তারা সনাতন ধর্মাবলম্বী। চার বেদের মধ্যে ঋগবেদের অনুসারী। মুণ্ডাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পাহাড়িয়া পুজা ও শ্যামা কালী পুজা। পাহাড়িয়া পুজা হয় পারিবারিকভাবে এবং শ্যামা কালীপুজা হয় গোত্রগতভাবে।

তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতি পালনে কঠোর হওয়ার কারণে এক সময় তারা কুসংস্কারাচ্ছন্ন ছিলেন। অন্যের বাড়িতে খেতেন না। এখন সেগুলোর পরিবর্তন হচ্ছে।

তিনি নিজেকে ডিগ্রি পাস দাবি করে বলেন, শিক্ষার বিস্তারে আমূল পরিবর্তন হয়েছে কয়রার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারগুলোর মধ্যে। শুধু ছেলেরাই নয়, মেয়েরাও এখন লেখাপড়ায় বেশ এগিয়ে। মুণ্ডাদের মধ্যে প্রায় ১০০ ছেলেমেয়ে এখন উচ্চশিক্ষিত। শিক্ষার প্রসার ঘটায় তাদের জীবনযাত্রায়ও বেশ পরিবর্তন এসেছে। তবে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন।

তিনি বলেন, চাকরির ক্ষেত্রে তার বয়স এবার শেষ হবে। বিভিন্ন পদে তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ২০ বার পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি হয়নি। ভাইভা পর্যন্ত গেলেই টাকার চায়। টাকা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় এখনও বেকার রয়েছেন তিনি।

সঞ্জিত, প্রভাত জয়দেবসহ স্নাতক ডিগ্রীধারীরা বলেন, তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেও টাকা দিতে না পারার কারণে চাকরি পাচ্ছেন না।

কয়রা কপোতাক্ষ ডিগ্রি কলেজের বাংলা প্রভাষক

আ ব ম আব্দুল মালেক বলেন, ১৮৩০ সালের দিকে জমিদাররা যখন এখানে আসেন। তখন মুণ্ডাদেরকে আনা হয় সংশ্লিষ্ট এলাকা আবাদী উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য। সেই থেকে মুণ্ডারা এখানেই বসবাস করছেন।

এনজিও কর্মী পরিমল কর্মকার বলেন, এক সময় মুণ্ডারা নিজেদের বাইরে কোনও কিছু চিন্তা করত না। এদের জীবনযাত্রা বিকশিত করতে মুণ্ডাদেরকে অন্যান্য মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা শুরু করেন। অধিকার নিয়ে তাদের সচেতন করা হচ্ছে। এভাবে নিজেদের মত প্রকাশ করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। ধীরে ধীরে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কেও তারা সচেতন হয়ে ওঠে। ফলে তাদের ছেলেমেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে শুরু করে। এখন মুণ্ডা সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেকেই রয়েছে উচ্চ শিক্ষিত।

 

/এসটি/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
ফরিদপুরে দুই শ্রমিক হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার দাবিতে খেলাফত মজলিসের মিছিল
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মশা তাড়ানোর ৫ প্রাকৃতিক উপায়
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
তীব্র গরমে সিল্কসিটি ট্রেনে আগুন
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!