তৃতীয় দফার ইউপি নির্বাচনে জেলাগুলোয় বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ছাড়া ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা যায়। প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদের ভিত্তিতে উল্লেখযোগ্য সংঘাতময় পরিস্থিতিগুলোর বিবরণ নিম্নরূপ:
গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয়া ইউনিয়নের রূপার বাজারে তৃতীয় দফা ইউপি নির্বাচনের পর দুই দলের মধ্যে এক সংঘর্ষে ওই ইউনিয়নের নবনির্বাচিত ৪নং ওয়ার্ড সদস্য মাহবুবার রহমানসহ তার সমর্থক সাতজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন নারী রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, রবিবার বিকেলে মাহবুবার রহমান তার ফকিরপাড়া বাড়ি থেকে কয়েকজন সমর্থকসহ ঘাগোয়া ইউনিয়ন সদরের রূপার বাজারে কাজে আসলে নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী সাজু মিয়া ও তার লোকজন আকস্মিকভাবে তাদের ওপর হামলা চালান। এতে মাহবুবার রহমান ও তার সমর্থক রেনুকা বালাসহ সাতজন আহত হন।
আহত মাহবুবার রহমান, মঞ্জু মিয়া, সাজু রহমান ও রেনুকাকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়।
গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মেহেদি হাসান জানান, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মীমাংসিত হয়েছে।
এদিকে বগুড়ার ধুনটে একটি কেন্দ্রে সংরক্ষিত আসনের এক নারী সদস্যকে ‘ফলাফল জালিয়াতি করে’ বিজয়ী করার অভিযোগ এনে পরাজিত সদস্য প্রার্থীর বিপুল সংখ্যক সমর্থক রবিবার বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ভাঙচুর করেছেন।
পরে একজন পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর লোকজন মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদে এসে একই দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পর বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের পারনাটাবাড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অভিযুক্ত প্রিজাইডিং অফিসার স্থানীয় বিএমসি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জুলফিকার আলী ফটিককে আটক করা হয়েছে।
জুলফিকার আলী ফটিক জানান, সংরক্ষিত সদস্য পদপ্রার্থী পারভিন আকতারের প্রাপ্ত ভোট ৩৬২ এর স্থলে ভুলক্রমে ৬৬২ লেখা হয়। আর এ ভুলে অপর প্রার্থী ঝর্না খাতুনের পরিবর্তে পারভিন আকতারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তিনি দাবি করেন, অনিচ্ছাকৃত ভুলের বিষয়টি রিটার্নিং অফিসার উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবাইদুল হককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
অপরদিকে সিরাজগঞ্জের তাড়াশে আওয়ামী লীগ ও দলটির বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ ও দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের মহিষলুটি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের স্থানীয় তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে চক রসুল্লা গ্রামের মৃত ঠান্ডু মাস্টারের ছেলে আলো (৪৫) ও চাঁদ (৩৫) এর নাম জানা গেছে।
তাড়াশ থানার উপ-পরিদর্শক অনুজ কুমার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে গাজীপুরের শ্রীপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। রবিবার বেলা ১১টায় উপজেলার বরমী ইউনিয়নের পরাজিত দুই মেম্বার প্রার্থী মারুফ শেখ মোক্তার ও শামীম আহমেদের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে গুরুতর আহত হয়েছেন আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রফিকুল ইসলাম(৫০), আব্দুস ছাত্তারের ছেলে শাকিব (২৪), মৃত আজম আলীর ছেলে নিজাম উদ্দিন(৪৫), সুলতানের ছেলে রহিম(১৯) ও করিম(৩৫), মৃত আব্দুল মতিনের ছেলে জমির উদ্দিন(৩৪)। জমির উদ্দিনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
অপর আহত মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে সাকিব(২২), শিখন(২৬), মৃত জোবেদ আলী সরকারের ছেলে ফজলুল হক (৪০) ও অজ্ঞাত কমপক্ষে ১১ জনকে স্থানীয় ক্লিনিক ও শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক সেলিনা পারভীন বলেন, গুরুতর আহত ৬ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের দু’একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।
আরও পড়ুন: মাদারীপুর সদর হাসপাতালে তৃতীয় দিনের মত ধর্মঘট, ভুগছেন রোগীরা
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, সংঘর্ষের খবর শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে সেখানে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় কোনও পক্ষ এখনও অভিযোগ দেয়নি।
অপরদিকে নীলফামারীতে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে পরজিত প্রার্থীদের কর্মী ও সমর্থকদের ওপর হামলা ও বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল সাড়ে ৯টায় ও ভোটের দিন শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর নীলফামারীর রামনগর ও সংগলশী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন ১৩ জন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে তিন রাউন্ড রাবার বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ালশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে ১৩ জনকে নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হামলাকারীরা তাদের পাঁচ পরিবারের ১১টি বসত ঘরের চটিবেড়া ভাঙচুর করেন। সংঘর্ষে আহতরা হলেন, আব্দুল হামিদ(৪৫) ও তার স্ত্রী নুর নাহার(৪০), মেয়ে লায়লা (২৪), ছেলে নুর মোহম্মদ(২৬), ভাতিজা জাহাঙ্গীর আলম(২৭), শ্যালিকা পাকিজাসহ(৩৫) আবুল কালাম(২৫), রশিদুল ইসলাম (৫২), ফারুক (২৩), মনি(১৯) ও শিউলী (৩০)।
আহতদের মধ্যে আবুল কালাম(২৫), রশিদুল ইসলাম (৫২), ফারুক (২৩), মনি(১৯) ও শিউলীকে(৩০) নীলফামারী সদর আধুনিক হামপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানায় পরে ইট-পাটকেল ও টিয়ালশেলে আহত আরও দুই জনকে নীলফামারী আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরা হলো তারেক(২৮) ও আলমগীর ইসলাম(১৭)।
এ সময় হামলাকারীদের মধ্যে চারজন নারী ও তিনজন পুরুষসহ সাতজনকে আটক করে পুলিশ। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন নীলফামারী সদর থানার ওসি শাহজাহান পাশা।
/এইচকে/