X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

নদীতে বিলীনের পথে ঐতিহ্যবাহী আটগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়

নওগাঁ প্রতিনিধি
১০ জুলাই ২০২০, ১৮:৩৩আপডেট : ১০ জুলাই ২০২০, ১৮:৩৩

আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৫৭ সালে স্থাপিত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি বর্তমানে ছোট যমুনা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে। নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রতিদিনই স্কুল গ্রাউন্ডের কিছু কিছু অংশ ভেঙে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ স্থান চলে গেছে নদীগর্ভে। তাই ঐতিহাসিক এই বিদ্যাপিঠকে রক্ষার জন্য দ্রুত সরকারকে সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

আটগ্রামের তৎকালীন জমিদার অনগ্রসর এই বিল এলাকার মানুষের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে স্থাপন করেন বিদ্যালয়টি। বিদ্যাপিঠটির এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী এবং আরেক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ছোট যমুনা। বিদ্যালয়টি মূলত ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। বর্তমানে নদী ও বিলে আবৃত ৫টি গ্রামের প্রায় দুইশ' শিক্ষার্থী এই বিদ্যাপিঠে পাঠ গ্রহণ করে। তবে আটগ্রামের মানুষের শিক্ষার উন্নয়ন ঘটলেও পিছু ছাড়েনি তাদের দুর্ভোগ। নদী ভাঙন সঙ্গে উন্নয়ন না হওয়ায় তারা এখনও পিছিয়ে রয়েছে।

আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাংশ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার সঙ্গে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন কালিকাপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম আটগ্রাম। গ্রামের পূর্বদিকে ছোট যমুনা নদী, দক্ষিণে আত্রাই নদী এবং পশ্চিমে রয়েছে বিরাট আকারের বিল। বর্ষাকালে বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী এবং গ্রামের মানুষের এপাড়া থেকে ওপাড়ায় যাতায়াতে একমাত্র ভরসা নৌকা। ছোট যমুনা নদীর তীরেই অবস্থিত আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ে ছয় কক্ষবিশিষ্ট ভঙ্গুর দুটি ভবন রয়েছে।বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের অধিকাংশ অংশ এবং স্থানীয়ভাবে নির্মাণ করা সুরক্ষা প্রাচীর ইতোমধ্যেই চলে গেছে নদীগর্ভে। আর বিদ্যালয়ের দক্ষিণে রয়েছে বড় একটি ভাঙ্গন। ভাঙ্গনটি ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয় ভবনের দিকে এগিয়ে আসছে। বর্তমানে ভাঙন ভবনের কাছাকাছি আসায় বিদ্যালয় রক্ষা করা নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকরা।

এছাড়াও বিদ্যাপিঠটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। ঐতিহাসিক হলেও এখনও এখানে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার। এককথায় বলা যায়, আধুনিকতার ছোঁয়া এখনও স্পর্শ করেনি বিদ্যালয়টিকে। নদী ভাঙনের পর যে খেলার মাঠটি অবশিষ্ট রয়েছে সেটাও ব্যবহারের যোগ্য নয়। কক্ষ সংকটের কারণে ৬টি ভঙ্গুর শ্রেণিকক্ষের মধ্যে ৫টি কক্ষে গাদাগাদি করে পাঠ গ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। নেই একটি ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব। নেই সুরক্ষা প্রাচীর। প্রাচীর না থাকার কারণে যেকোনও সময় শিক্ষার্থীরা সবার অজান্তে নদীতে পড়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক খেলার উপকরণগুলো থাকার কথা থাকলেও নেই এই বিদ্যাপিঠে। নিরানন্দ শিক্ষাগ্রহণ করতে হয় অবহেলিত এই অঞ্চলের শিশুদের। কিন্তু এই সব সমস্যাগুলো দূর করায় সুদৃষ্টি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবতার আলো দেখতে পায় না।

আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের পাশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল উদ্দিন বলেন, ‘এক একর ২৪ শতাংশ জমির ওপর ঐতিহাসিক পলাশী যুদ্ধের সময় বিদ্যাপিঠটি প্রতিষ্ঠিতা করেন তৎকালীন জমিদার। বিদ্যালয়টি পিছিয়ে পড়া এলাকার শিশুদের মাঝে এখনও যথেষ্ট সুনামের সঙ্গে সেবা দিয়ে আসছে।’ তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের ৮-১০ শতাংশ জমি নদীতে চলে গেছে। পানির স্রোত এত বেশি যে ভাঙন ক্রমেই বেড়ে এগিয়ে আসছে বিদ্যালয়ের প্রধান ভবনের দিকে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা নদীর পাড়ে বনজ গাছ রোপণ করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করেও রক্ষা করতে পারছি না।' নানা সমস্যায় বিদ্যালয়টি জর্জড়িত হলেও এখন এটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য জরুরিভাবে উত্তর ও পূর্ব পাশ দিয়ে স্থায়ীভাবে নদীর তীরে প্যালাসাইট, গাইড ওয়াল ও ব্লক দিয়ে সুরক্ষা প্রাচীর দিতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি। তা না হলে ভাঙনে বিদ্যালয়টি যেকোনও সময় নদীতে বিলিন হয়ে যাবে।

আটগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পেছনের পাশ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। উপজেলা মাসিক সমন্বয় কমিটির আগামী সভায় বিদ্যালয় ভাঙনের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান খান বলেন, ‘এই বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থার ওপর একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি অনুমোদন পেয়ে অর্থ বরাদ্দ দিলেই বিদ্যাপিঠটিকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করার কাজ শুরু করা হবে।’

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কুড়িগ্রামে এক বছরে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২২০ জন, অধিকাংশই নারী
কুড়িগ্রামে এক বছরে আইনি সহায়তা পেয়েছেন ২২০ জন, অধিকাংশই নারী
আইপি টিভি চালু করতে চায় ডিএমপি!
আইপি টিভি চালু করতে চায় ডিএমপি!
কাটাখালী পৌরসভায় উপনির্বাচনে মেয়র হলেন মিতু
কাটাখালী পৌরসভায় উপনির্বাচনে মেয়র হলেন মিতু
ঢাকায় পা রেখে চট্টগ্রামে উড়াল দিলো জিম্বাবুয়ে
ঢাকায় পা রেখে চট্টগ্রামে উড়াল দিলো জিম্বাবুয়ে
সর্বাধিক পঠিত
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
ভূমি ব্যবস্থাপনায় চলছে জরিপ, যেসব কাগজ প্রস্তুত রাখতে হবে
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
এমন আবহাওয়া আগে দেখেনি ময়মনসিংহের মানুষ
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
ইমিগ্রেশনেই খারাপ অভিজ্ঞতা বিদেশি পর্যটকদের
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
স্কুলে আসার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষক
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে
‘হিট অফিসার’: পদ কীভাবে নেতিবাচক হয়ে ওঠে