X
শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
১৪ আষাঢ় ১৪৩২

কষ্টে দিন কাটছে দর্জিদের

আলমগীর চৌধুরী, জয়পুরহাট
২৩ আগস্ট ২০২০, ১১:৩২আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২০, ১২:০৩

রেলালাইনের পাশে দর্জিরা এক বছর আগে জয়পুরহাট শহরের রেললাইনের পাশে (অস্থায়ী রেলওয়ে হর্কাস মার্কেট) সেলাই মেশিনে কাজ শুরু করেন দুই সন্তানের জনক দীপু। দিনে খরচ বাদ দিয়ে তার আয় হয় তিনশ’ টাকা। তাতেই খুশি ছিলেন তিনি। শহরের সবুজনগর মণ্ডলপাড়া মহল্লায় ভাড়ার বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কোনোরকমে দিন কাটছিল তার। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী লকডাউন শুরু হলে কাজ বন্ধ থাকায় বেকার হয়ে পড়েন দীপু। এই অবস্থায় গত পাঁচ মাস ধরে সংসার চালাতে গিয়ে জমানো আয় শেষ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ঋণের কিস্তিও আটকে যায়। লকডাউন ওঠে গেলে কোরবানি ঈদের পর আবারও কাজ শুরু করেন তিনি। কিন্তু আগের মতো মানুষের ভিড় না থাকায় কাজ নেই। দিনে এখন কাজ হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৫০ টাকার। সামান্য এই আয় দিয়ে সংসারের খরচ জোগানোর পাশাপাশি ঋণ পরিশোধের চিন্তা এখন কুঁড়ে কুঁড়ে মারছে দীপুকে।

এভাবেই করোনায় থমকে যাওয়া জীবন চলার বর্ণনা দেন জেলা শহরের অস্থায়ী রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের দর্জি শ্রমিক দীপু। কাজ বন্ধ হওয়ায় দীর্ঘ পাঁচ মাস অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন চলার এমন চিত্র শুধু দীপুর নয়; সবুজ, সুলতান, দেলোয়ার, এরফান, আশরাফ ও রাসেলসহ শতাধিক দর্জি শ্রমিকের। যাদের দিন চলতো হকার্স মার্কেট থেকে কেনা নিম্ন আয়ের মানুষের পোশাক ফিটিং করার পারিশ্রমিক দিয়ে। পোশাক ফিটিং এর সেলাইয়ের কাজ করে দিনে যাদের আয় হতো তিন থেকে চারশ’ টাকা। করোনা প্রতিরোধে গত মার্চের শেষ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত বন্ধ থাকার পর আগস্টে সবাই আবারও কাজ শুরু করলেও এখন আর আগের মতো পারিশ্রমিক মিলছে না। এখন দিনে কাজ হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার।

করোনায় লকডাউনের পর কড়াকড়ি শিথিল হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য গড়ে ওঠা রেলওয়ে হকার্স মার্কেটেও। কেনাকাটা নেই বললেই চলে। তবে শীত মৌসুমে সবচেয়ে বেশি পুরাতন গরম কাপড় বেচা-কেনা ও দর্জির কাজ হওয়ায় তারা অপেক্ষায় আছেন শীত মৌসুমের জন্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের রেললাইনের পাশে রেলের জায়গায় গড়ে ওঠা অস্থায়ী হকার্স মার্কেটে ব্যবসা করছেন শতাধিক দর্জিসহ সাড়ে তিনশ’ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ক্ষুদ্র এই ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ধর্ণা দিয়েও তাদের ভাগ্যে কখনও জোটেনি ব্যাংক ঋণ। কারণ সবকিছুই তাদের অস্থায়ী। ফলে বাধ্য হয়ে চড়া সুদে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে দৈনিক কিস্তির শর্তে ঋণ নিয়ে তারা ব্যবসা করছেন। কিন্তু গত মার্চের ২৬ তারিখ থেকে দেশে করোনা প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনায় লকডাউন শুরু হয়। এরপর থেকে অন্য মার্কেটগুলোর সঙ্গে বন্ধ হয়ে যায় রেলওয়ে হকার্স মার্কেটও। এতে শুধু দর্জি শ্রমিকরা নয়, রোজগার বন্ধ হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিসহ কষ্টে পড়েন ওই মার্কেটের ক্ষুদ্র প্রায় আড়াই শতাধিক পোশাক ব্যবসায়ী। এ সময়ে ঋণের কিস্তিও তারা দিতে পারেননি। ঈদের পর লম্বা লাইনে সেই আগের মতো দর্জিরা তাদের কাজ শুরু করলেও মানুষের আনাগোনা না থাকায় এখন অলস সময় কাটছে তাদের।

রেলালাইনের পাশে দর্জিরা শনিবার (২২ আগস্ট) সকাল ১১টার দিকে স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, স্টেশনের উত্তর পাশে রেললাইন ঘেঁষে লম্বা লাইনে সেলাই মেশিন নিয়ে বসে আছেন শতাধিক দর্জি। দুই-একজন পুরাতন কাপড় সেলাইয়ে মনোযোগী থাকলেও যাদের অধিকাংশই কাজ না পেয়ে একে অপরের সঙ্গে খোশগল্প করছেন।

এ সময় দর্জি দেলোয়ার হোসেন জানান, করোনার কারণে তারা পাঁচ মাস কাজ করতে পারেননি। কাজ না হওয়ায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কেটেছে তাদের। গত ১৫ দিন থেকে কাজ শুরু হলেও কাস্টমার না থাকায় প্রায় সময় বসে থাকতে হচ্ছে।

তার পাশেই থাকা দর্জি সবুজ হোসেন বলেন, ‘দিনে ৫০ টাকার বেশি কাজ হচ্ছে না। পাঁচ মাসের কিস্তি বন্ধ আছে। এ ছাড়া বেকার সময়ে সংসার খরচ চালাতে অনেক ঋণ করতে হয়েছে। এ অবস্থা কীভাবে সামলে নেবো বুঝতে পারছি না।’

মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক লালচান শেখ বলেন, ‘স্থায়ী কোনও জায়গা না পাওয়ায় রেলের জায়গায় দোকান দিয়ে আমরা কোনোরকমে বেঁচে আছি। জায়গা স্থায়ী না হওয়ায় ব্যাংক আমাদের ঋণও দেয় না। তাই চড়া সুদ হলেও বাধ্য হয়ে স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিতে হয়।’

তিনি অভিযোগ করেন, ‘করোনায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে প্রায় খেয়ে না খেয়ে আমাদের দিন চলছে। এ অবস্থায় স্থানীয় রেল কর্তৃপক্ষ জায়গার জন্য টাকা চাচ্ছে। দিতে পারিনি তাই তারা রাগ করে সান্তাহার জংশনে থাকা একটি মালবাহী ট্রেন ইচ্ছেকৃতভাবে জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় ফেলে রেখেছে। এতে রেলরাইন এলাকায় মানুষ আর কেনা-কাটা করার জন্য আসতে পারছেন না।’

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন জয়পুরহাট স্টেশন মাস্টার হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রেলের জায়গায় অবৈধভাবে ওই মার্কেট গড়ে ওঠলেও ভাড়া নেওয়ার এখতিয়ার আমাদের নেই। কাজেই তারা টাকা চাওয়ার যে অভিযোগ করছেন, সেটি সঠিক নয়। রেল কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনেই অকেজো মালট্রেনটি জয়পুরহাট স্টেশন এলাকায় রাখা হয়েছে। আদেশ পাওয়া মাত্র এটি ওয়ার্কশপে পাঠানো হবে।’ 

 

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (২৮ জুন, ২০২৫)
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
পড়াশোনার জন্য শাসন করায় স্কুলশিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
চীন সফর ছিল রাজনৈতিক: দেশে ফিরে মির্জা ফখরুল
সর্বাধিক পঠিত
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
বিরোধীদের নিষিদ্ধ করা বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথ নয়: দ্য ইকোনমিস্ট
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
যমুনা সেতু থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে রেলপথ
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
মিরপুরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়ক বিভাজকে উঠে গেলো বাস, একজন নিহত
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ
এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ দফতরে উপস্থিতি ও সেবা নিশ্চিতের নির্দেশ