এক্সাভেটর (খননযন্ত্র) মেশিন বসিয়ে শত শত বিঘা জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। ভাটা মালিকদের অর্থের লোভে কৃষকরা মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে জমিগুলো উর্বরতা হারাচ্ছে। আর জমিগুলো অনাবাদি হয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনা ঘটছে বগুড়ার ধুনট উপজেলার চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের চৌকিবাড়ী পশ্চিমপাড়া গ্রামে। কৃষকরা বলছেন, প্রশাসন জানলেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভাটা মালিকদের দাবি, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ধুনটের চান্দিয়ার গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আহসান ও সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার পাইকপাড়ার জিয়া প্রমুখ চৌকিবাড়ি গ্রামে ৪/৫টি ভেকু মেশিন দিয়ে সরিষা ক্ষেত ও ধানী জমি থেকে ৬/৭ ফুট করে মাটি কেটে নিচ্ছেন। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যাক ট্রাকে মাটিগুলো ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে। এতে ওইসব জমির পার্শ্ববর্তী মিলন, বেল্লাল ও তোতা মিয়াসহ ৭-৮ জন কৃষকের ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে।
চান্দিয়ার গ্রামের মাটি ব্যবসায়ী আহসান ও পাইকপাড়া গ্রামের জিয়া ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, আমার মতো ধুনটের ব্যবসায়ী ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছে। গভীর করে মাটি কেটে নেওয়ায় পাশের জমির মালিকের ক্ষতির কথাও স্বীকার করেন তারা। এসব মাটি তারা কাজিপুরের সোনামুখি মেসার্স এসভিসি ব্রিক্সের মালিক হাসান আলী, বেলকুচি ইটভাটার টগর ও চালাপাড়ার হায়দার আলী হিন্দোলনসহ বিভিন্ন জনের ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধুনটের এক ইটভাটা মালিক জানান, ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি ইটভাটায় বিক্রি করা মানে ওই জমি ও কৃষকের ক্ষতি করা। ধুনট উপজেলার ১০ ইউনিয়নে অন্তত ৪০টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এসব ভাটা মালিকরা দালালদের মাধ্যমে ফসলি জমি থেকে উর্বর মাটি কিনছেন। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি ব্যবসা চলছে।
চৌকিবাড়ী গ্রামের কৃষক আফসার আলী জানান, বেশি টাকা পাওয়ার কারণে তার দুই বিঘা ফসলি জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছেন। পরে ওই জমিতে আগের মতো আর ফসল হবে কিনা তা তিনি জানেন না।
চৌকিবাড়ী ইউনিয়নের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, জমির মূল উর্বরতা শক্তি থাকে উপরিভাগে। আর এ মাটি (টপ সয়েল) কেটে নিলে জমির উর্বরতা শক্তি সঞ্চয় করতে সময় লাগে অন্তত এক যুগ। ইটভাটা মালিকেরা লোভ দেখিয়ে এক কৃষকের থেকে জমির মাটি কিনতে পারলেই, অন্য কৃষককেও বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ধুনটের মতো সারাদেশেই যেভাবে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে, তাতে আগামী ১০-১২ বছর পর অনেক কৃষি জমি অনাবাদি হবে। আর এতে দেশে ধান-চালের বাম্পার ফলন হবে না। ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার প্রশাসনকে অবগত করলেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক জানান, সরকারি নিয়ম না মেনেই ফসলি জমিতে অনেক ইটভাটা তৈরি হয়েছে। আর এসব ভাটার জন্য মাটির প্রয়োজন। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমির টপ সয়েল তারা নিচ্ছে। এতে ফসলি জমি ও কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আর এ টপ সয়েল কেটে নেওয়া বন্ধ করার ক্ষমতা আমাদের নেই।
এ প্রসঙ্গে ধুনট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, ফসলি জমির মাটি কেটে নেওয়ার কথা মৌখিকভাবে শুনেছেন। খোঁজ নিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।