জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার সড়াইল গ্রামের এক বর্গাচাষির সোয়া বিঘা জমিতে লাগানো লাউ গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী জানান, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের কোনও এক সময় বর্গাচাষি আকবর আলী ফকিরের সোয়া বিঘা জমির বেড়ে ওঠা লাউ গাছ কেটে দিয়েছে।
আকবর আলী ফকির জানান, তিনি রাতের বেলায় অন্যের সেচ পাম্পের পাহারাদার হিসেবে কাজ করেন। আর দিনের বেলায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ফসল আবাদ করেন। তিনি ওই গ্রামের বিপ্লব হোসেনের কাছ থেকে আমন ধান মাড়াইয়ের পর ৪০ শতক জমি এক বছরের জন্য ২০ হাজার টাকায় বর্গা নেন। উঁচু জমি বলে তিনি সেই জমিতে পৌষ মাসের প্রথম দিকে লাউ গাছের বীজ বপন করেন। এরপর গাছ বের হতে থাকে। নিজেই পরিচর্যা করেন। গাছগুলোও তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ফুলও এসেছে। প্রতিদিনের ন্যায় বুধবার বিকালে চাষি আকবর আলী ফকির তার লাউ ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করে সন্ধ্যায় বাড়িতে যান। খাওয়া দাওয়া শেষে ক্ষেতের পাশ দিয়ে পাম্পের পাহারার কাজে চলে যান।
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষেতে গিয়ে দেখতে পান, লাউ গাছের পাতাগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। বাঁশের মাচার নিচে তাকিয়ে তিনি দেখেন সব গাছের গোড়া কেটে দিয়েছে। রাতের আঁধারে কে বা কারা তার ক্ষেতের লাউ গাছগুলো কেটে ফেলেছে।
আক্ষেপ করে আকবর আলী ফকির আরও বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে দরিদ্রতার মাঝে বড় হয়েছি। কাউকে তুই বলেও গালমন্দ করিনি। মনে করি, আমার কোনও শত্রু নেই। কিন্তু আজ সেই ভাবনা আমাকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। সংসারে ছেলে-মেয়েদের মুখে দুবেলা খাবার জোগাতে রাতের ঘুম হারাম করে অন্যের সেচ পাম্প পাহারা দেই আমি। দিনের বেলায় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছি। আজ সেটিও তাদের সহ্য হলো না। কয়েকদিন পরই লাউ ধরতো গাছে। আমার সব আশা আজ ভেস্তে গেল। ভেবেছিলাম, লাউ বিক্রি করে একটি গাভী কিনবো, তাও হলো না। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় অভিযোগ করেছি।’
প্রতিবেশী দুলাল মিয়া বলেন, ‘একজনের সঙ্গে আরেক জনের শত্রুতা থাকতেই পারে, তবে ফসলের সঙ্গে কেন? এর একটা বিহিত হওয়া দরকার।’
আরেক প্রতিবেশী ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘যত বড় অপরাধ হোক না কেন- কারও ফসল কেটে ফেলা ঠিক হয়নি। যারা কেটে ফেলেছে তারা আকবর আলীর পেটে লাথি মেরেছে, তার পরিবারের গলায় পা তুলে দিয়েছে। ফসল কাটার বিচার হওয়া দরকার।’
কালাই থানার ওসি সেলিম মালিক বলেন, ‘কৃষক আকবর আলী অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এর আগে, পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় দেলোয়ার হোসেন নামের এক কৃষকের ১০ হাজার তরমুজ গাছ তুলে ফেলা হয়েছে।
