রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে ‘রাজনীতি না করার’ বিষয়ে সতর্ক করে রাকসুর সাবেক ভিপি ও ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘রাবি ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক ধারা আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি। এসব করতে গিয়ে আমার মিছিলের অনেককে মৌলবাদীরা হত্যা করেছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা সবসময় বুক দিয়ে আগলে রেখেছি। এর সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। সুতরাং এই বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে কেউ অপরাজনীতি করতে চাইলে তার যথাযথ জবাব দেওয়া হবে।’
বুধবার (২৬ অক্টোবর) বিকালে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে জেলা ও মহানগর ছাত্রমৈত্রীর ২৭তম সম্মেলন উপলক্ষে আয়োজিত ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। ছাত্রমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ইয়াতুন্নেসা রুমা তার বক্তব্যের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
ছাত্র সমাবেশে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল ধারা প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা সবময় সংগ্রাম করেছি। কখনও সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপস করে ক্যাম্পাসকে বিপদের মুখে ঠেলে দেইনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা সবসময় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির ঘাঁটি হিসেবে দেখতে চেয়েছি। আমি শিক্ষকদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনারা সঠিক কাজ করছেন কিনা, একটু ভেবে দেখবেন। আমি আজও আমার শিক্ষকের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে পায়ের ধুলো নেই। আর আজকে রাজনীতিতে অজ্ঞ কিছু ছাত্র জামায়াতের ঘাড়ে এক হাত আর আপনার ঘাড়ে দ্বিতীয় হাত রেখে কথা বলে! পরিস্থিতি খারাপ হলে আরও অবনতি হবে। এখনই সাবধান ও সতর্ক হোন!’
রাকসুর সাবেক ভিপি বাদশা বলেন, ‘আমি যখন ছাত্রনেতা ছিলাম, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছিলাম। তার মন্ত্রিসভার দুই জন প্রভাবশালী মন্ত্রীকে সেদিন ক্যাম্পাসের গাছের সাথে বেঁধে জুতাপেটাও করেছিলাম। কারণ আমরা দাবি করেছিলাম, কোনও রাজাকারকে আমরা ভিসি হিসেবে দেখতে চাই না। এর জন্য আমাকে ৯ মাস জেল খাটতে হয়েছে। জেল খেটে এসে সেদিন অসংখ্য শিক্ষার্থীদের ভোট ও সমর্থনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম। আমাকে রাজাকাররা সেদিন ভোট দেয়নি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণরাই ভোট দিয়েছিল।’
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রধানতম এই নেতা আরও বলেন, ‘আমি ছাত্রজীবনে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে গেছি। যুদ্ধের প্রথম দিনেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছি। আজকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অপমাণ করা হয়। শিক্ষার্থীরা নয়, রাজনৈতিক স্বার্থে কয়েকজন রাজাকারের বন্ধু ক্যাম্পাসে আমাকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। এসব নিয়ে আমি চিন্তিত, বিচলিত কোনোটাই নই। কারণ আমরা যারা এই দেশ স্বাধীনের জন্য যুদ্ধ করেছি, ওই সময় পাকিস্তানও আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল। তাহলে কী দাঁড়ায়? আপনারাতো জামায়াতকে নিয়ে শক্তিশালী হতে চাচ্ছেন। আমরা স্বাধীনতাবিরোধীদের নিয়ে শক্তিশালী হতে চাই না। তারা বিষাক্ত সাপ, তারাই একদিন আপনাদের ছোবল মারবে।’
রাবি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুর প্রসঙ্গও উঠে আসে এমপি বাদশার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘সেই মেধাবী ছাত্রটি কীভাবে মারা গেল আমরা কেউ জানি না। তবে আমরা একটি বিষয় জানি, সেই ক্যাম্পাসেই অনেক ছাত্র-শিক্ষকদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আজকে মেডিক্যালের পরিচালনা পর্ষদের সভা ছিল। সভায় রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ও গত ১৯ অক্টোবর রাতের ঘটনায় চিকিৎসকদের কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চিঠিতে উচ্চ পর্যায়ের আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য অনুরোধ করা হবে। তদন্ত কমিটি গঠন করে তারাই সরেজমিনে এসে এ ঘটনার প্রকৃত সত্য উন্মোচন করবেন।’
ছাত্রসমাবেশে আওয়ামী লীগে জামায়াতের অনুপ্রবেশের অভিযোগ করে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফজলে হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই, আওয়ামী লীগে জামায়াতের অনুপ্রবেশ ব্যাঙের ছাতার মতো বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকে জামায়াতের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তাদের দল থেকে বের করতে হবে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনদিন বিজয় লাভ করবে না। আওয়ামী লীগের যে বন্ধুরা এখনও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বিশ্বাস করেন, আপনারা আসেন; আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আমরা ঐক্যবদ্ধ হলে জামায়াত-বিএনপিকে তুড়ির তাসের মতো উড়িয়ে দিবো। তারা যতোই লাফালাফি করুক, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে, তবে কোনোকালেই তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। কারণ মানুষ বিশ্বাসই করে না, খালেদা জিয়ার দল বাংলাদেশে উন্নয়ন করবে।’
‘আমরা কোনোদিন আদর্শ বিক্রি করিনি’, মন্তব্য করে বর্ষিয়ান এই রাজনীতিক বলেন, ‘আজকে আমানা, আল-আকসার মতো গ্রুপ রাজশাহীতে একচেটিয়া ব্যবসা করছে। তারা জামায়াত ইসলাম করে। তাদের অর্থ, সমর্থন নিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন? আমাদের বিরুদ্ধে কথা লাভ নেই। আমাদের নীতি, বিশ্বাস ও আদর্শ আছে। আমাদের শক্তি আছে, আমরা লড়াই করতে জানি। রাতের অন্ধকারে জামায়াত-বিএনপির সাথে আঁতাত করে আমি রাজশাহীতে রাজনীতি করতে চাই না। তার আগেই যেন আমার মৃত্যু হয়। রাজশাহীর নেতাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেখা হোক। কার কাছে কত টাকা আছে, তারা কতো সম্পদের মালিক; এসব মানুষের কাছে প্রকাশ করা হোক। চোর-ডাকাত ধরা পড়ে যাবে। মীর জাফর, বিশ্বাসঘাতকেরাও ধরা পড়ে যাবে।’
জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ এনে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘কয়েকদিন আগে হয়ে যাওয়া রাজশাহী জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন নেতা কার পক্ষে ছিলেন, তার একটি হালখাতা হবে। সেই হালখাতা দেখে সিদ্ধান্ত হবে- তারা আওয়ামী লীগের লোক নাকি, জামায়াতের লোক, বিএনপির লোক-নাকি মুখোশধারী আওয়ামী লীগের লোক! আমাদের দলীয় প্রার্থী না থাকায় মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক দলের ২৫ জন ভোটারকে সাথে নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে। আমাদের ঈমান যা, কাজও তাই। শেষে কী হলো? ওয়ার্কার্স পার্টির ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান, আর মীর জাফরেরা কুপোকাত।’
রাজশাহী জেলা ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজের সঞ্চালনায় ছাত্রসমাবেশে বক্তব্য দেন, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, কেন্দ্রীয় ছাত্রমৈত্রীর সাংগঠনিক সম্পাদক অদিতি আদৃতা সৃষ্টি, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা প্রমুখ।
আরও পড়ুন: