X
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

ঘুষের টাকাকে সম্মানী বললেন শিক্ষা কর্মকর্তা, দেখাবেন আয়ের হিসাবেও

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৬আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৩, ১২:৪৬

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইল অনলাইনে পাঠাতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে তাকে সরাসরি টাকা দিতে হয়। এ টাকা কম হলে তিনি কটু কথা বলেন। এ ছাড়া শিক্ষক-কর্মচারীদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে তিনি নিজের বিকাশ নম্বরে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত  চেয়ে নেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম স্কুল-মাদ্রাসায় কর্মচারী নিয়োগে ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে টাকা নেওয়ার কথা অকপটে স্বীকারও করেন। তিনি বলেছেন, ‘এই টাকা ঘুষ নয় সম্মানী ও পারিশ্রমিক। নিয়োগে সম্মানী ও অনলাইনে এমপিওভুক্তির ফাইল পাঠাতে পারিশ্রমিক নিই।’

বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ও সুপারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম গত ৫ মে আক্কেলপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এ পর্যন্ত  স্কুল-মাদ্রাসাসহ ৮-১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া নিয়োগ হয়েছে। এসব  নিয়োগে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া ওই নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী ও এনটিআরসি শিক্ষকদের এমপিও ফাইল আগাতে করতে জন প্রতি দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।

এই টাকা কেউ বিকাশে কেউবা প্রতিষ্ঠান প্রধানের মাধ্যমে তাকে দিয়েছেন। তিনি নিয়োগের ও এমপিও ফাইল আগানোর টাকার রসিদও দেওয়ার কথা বলেছেন। তবে তিনি কাউকে এ টাকার রসিদ দেননি।

উপজেলার আরকেএম দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম আযম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি আমার প্রতিষ্ঠানে মারুফ হোসেন নামে একজন পরিচ্ছন্নকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এতে তিনি খুশি হননি। আরও টাকা দাবি করেছেন। এই টাকা বৈধতা রয়েছে বলে তিনি আমাকে এ টাকার রসিদ দিতে চেয়েছেন। তবে রসিদ দেননি। পরে  নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রার্থীর অনলাইনে এমপিও আবেদন ফাইল পাঠানোর জন্য ফোনে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা নিজেই পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে বিকাশে টাকা নিয়েছেন।’

সোনামুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি আমাদের বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে সম্মানী দিয়েছি। তবে টাকার পরিমাণ জানাননি।’

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি  মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে নিজ উপজেলার স্কুল-মাদ্রাসায়  কর্মচারী নিয়োগ বোর্ডের সদস্য। এখানে ডিজির প্রতিনিধিও থাকেন। বেশিরভাগ নিয়োগের ক্ষেত্রে আমাদের সাজানো প্রশ্ন করতে বলা হয়। আমরা নিজেদের মতো করে প্রশ্ন করতে পারি না। আগেই প্রার্থী ঠিকঠাক থাকে। পরীক্ষা শেষে প্রতিষ্ঠান প্রধান একটি খাম ধরিয়ে দেন। খাম খুলে দেখা যায়, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা রয়েছে। এটা ঘুষ নয়, সম্মানী। আমাকে যে টাকা দেওয়া হয় এটা সম্মানজনক নয়।’

তার দাবি, ‘ডিজির প্রতিনিধিকে আমার চেয়ে আরও বেশি টাকা সম্মানী দেওয়া হয়। এনটিআরসি কর্তৃক নিয়োগকৃত শিক্ষকদের অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল পাঠাতে হয়। একজনের ফাইল পাঠাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। এ বাবদ শিক্ষকদের কাছে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা নিই। এটা দোষের কিছু দেখি না।’

সম্মানীর টাকা কোথায় থেকে আপনাদের দেওয়া হয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অপ্রিয় হলেও সত্য যে টাকা ছাড়া কোনও নিয়োগই হয় না। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিলে  প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নেন। সেখান থেকে তারা খরচা করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ডোনেশন দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেই টাকা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে রাখতে হয়। ব্যাংক হিসাব থেকে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তুলে খরচা করতে হয়। কিন্তু ডোনেশনের টাকা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে জমা হয় না।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘দেওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে তিন জন কর্মচারী নিয়োগ হবে। কয়েক দিন আগে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসে আমাকে বললেন, আমরা আপনাকে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হিসেবে ১০ হাজার টাকা দেবো। আমি বললাম, আমাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দেবেন কোনও সম্মানী দিতে হবে না। পরে বিদ্যালয় পরিচালনার কমিটির একজন সদস্য এসে বললেন স্যার নিয়োগে ৪২ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। তাহলে বোঝেন। আমি নিয়োগের সম্মানী টাকার রসিদ দেওয়ার কথা নয় মাস্টার রোলে স্বাক্ষর দেওয়ার কথা বলেছি। এটা আমার প্রাপ্য। সরকার থেকে আমাকে এ বিষয়ে টিএডিএ দেওয়া হয় না। আমি সম্মানীর টাকা আমার আয়কর রিটার্নে দেখাবো।’

/এফআর/
সম্পর্কিত
স্বামীসহ সাবেক হাইকমিশনার সাঈদা মুনার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পিকুল ও তার স্ত্রী-সন্তানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
গরিবের চালের তালিকায় শিক্ষক-ব্যবসায়ী-নেতাসহ ১৮০০ সচ্ছল ব্যক্তি
সর্বশেষ খবর
মে মাসে সীমান্তে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য ও মাদকদ্রব্য জব্দ
মে মাসে সীমান্তে ১৩৩ কোটি টাকার চোরাচালান পণ্য ও মাদকদ্রব্য জব্দ
‘সন্তানরা পর্দায় আমার কান্না দেখতে পছন্দ করে না’
‘সন্তানরা পর্দায় আমার কান্না দেখতে পছন্দ করে না’
ফ্রান্সে এয়ারশোতে ইসরায়েলি অস্ত্র প্রদর্শনী বন্ধ, ক্ষুব্ধ তেলআবিব
ফ্রান্সে এয়ারশোতে ইসরায়েলি অস্ত্র প্রদর্শনী বন্ধ, ক্ষুব্ধ তেলআবিব
সিন্ডিকেটে ডাকসুর তারিখ ঘোষণার দাবি বিন ইয়ামিন মোল্লা
সিন্ডিকেটে ডাকসুর তারিখ ঘোষণার দাবি বিন ইয়ামিন মোল্লা
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
কক্সবাজারে হোটেল থেকে ৪৮ তরুণ-তরুণী আটক
কক্সবাজারে হোটেল থেকে ৪৮ তরুণ-তরুণী আটক
রেমিট্যান্সের জোয়ারে হঠাৎ ভাটার টান
রেমিট্যান্সের জোয়ারে হঠাৎ ভাটার টান
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
মামলাজটে আটকে আছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি
মামলাজটে আটকে আছে প্রাথমিকের ৩২ হাজার শিক্ষকের পদোন্নতি