দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন আলোচিত ইউটিউবার আশরাফুল হোসেন আলম ওরফে হিরো আলম। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ পেছানো হলে কুমিল্লা-১০ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কুমিল্লা-১০ আসন থেকে এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এই আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে আ হ ম মুস্তফা কামালের বিপক্ষে লড়তে চান হিরো আলম। গত বধুবার বাংলাদেশ জনদলের (বিজেডি) প্রার্থী হয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসন থেকে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) নেতৃত্বাধীন লিবারেল ইসলামিক জোটের ছয় দলের অন্যতম বিজেডি। ইসলামিক জোটের একক প্রার্থী হিসেবে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। একদিনের ব্যবধানে পরদিন বৃহস্পতিবার দল বদলে বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
শনিবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলা ট্রিবিউনের বগুড়া প্রতিনিধিকে এসব তথ্য জানিয়েছেন আলোচিত এই ইউটিউবার। হিরো আলম বলেন, ‘এর আগে বগুড়ার দুটি আসন ও ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচন করে অনেক পরিচিতি লাভ করেছি। এতে যে কারও সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাহস বেড়েছে। এখন দেশের সব মানুষ আমাকে চেনেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি। সময় বাড়ানো হলে কুমিল্লা-১০ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামালের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। কারণ সেখানে আমার অনেক ভক্ত আছে। কংগ্রেস পার্টি আমাকে পদ দেবে। মনোনয়ন দিয়েছে। এছাড়া যারা নির্ধারিত সময়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সময় বাড়ানো হলে তখন তারাও মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন।’
হিরো আলম জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকালে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামের কাছে বগুড়া-৪ আসনে আমার মনোনয়নপত্র জমা দেন ব্যক্তিগত সহকারী সুজন রহমান শুভ।
এ বিষয়ে হিরো আলম বলেন, ‘ভুল করে সুপ্রিম পার্টির মনোনয়নপত্র তোলা হয়েছিল। এখন বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টি থেকে ভোট করবো। কারণ আমাদের একটা জোট আছে। আশা করছি, জয়ী হবো।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা হিরো আলম শৈশবে চানাচুর বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। একসময় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা (ডিশ সংযোগ) করতেন। ২০০৮ সালে ২৩ বছর বয়সে তিনি মডেলিংয়ে যুক্ত হন। এরপর নিজের অভিনয় ও গানের দৃশ্য রেকর্ড করে ক্যাবল নেটওয়ার্কে প্রচার করতে থাকেন। এতে এলাকার মানুষের কাছে তার জনপ্রিয়তা সৃষ্টি হয়। জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে তিনি এরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে পরপর দুবার সদস্য প্রার্থী হন। প্রতিবারই পরাজিত হন।
হিরো আলম ২০১৬ সালে ‘হিরো আলম’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে তাতে অভিনয় ও গানের দৃশ্য শেয়ার করতে থাকেন। পরবর্তীতে ইউটিউবে সরব হন। দিন দিন তার পোস্টগুলো ভাইরাল হয়। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করা হিরো আলম ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-৪ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হন। পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সিংহ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই সময়ে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নন্দীগ্রাম উপজেলার চাকলমা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে হামলার শিকার হন। সেখানে ৬৩৮ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
এরপর বগুড়া-৬ (সদর) ও বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে বিএনপির প্রার্থীরা দলীয় সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করলে আসনগুলো শূন্য হয়। মনোনয়ন বাতিল, চাহিদামতো প্রতীক না পাওয়াসহ নানা নাটকীয়তা শেষে ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। সিংহ প্রতীক না পেয়ে একতারা প্রতীকে ভোট করেন। বগুড়া সদর আসনে নৌকা মার্কার প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু ৪৯ হাজার ৩৩৬ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এখানে হিরো আলম একতারা প্রতীকে পাঁচ হাজার ২৭৪ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
পাশাপাশি বগুড়া-৪ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাসদের একেএম রেজাউল করিম তানসেন মশাল প্রতীকে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। এখানে তার নিকটতম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম পান ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট। ৮৩৪ ভোটে হিরো আলম পরাজিত হন। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনে কারচুরি অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে রিট করার ঘোষণা দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল তার অভিযোগ তদন্তের নির্দেশও দিয়েছিলেন।
