X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

স্বামীকে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধর্ষণ, মারা গেলো গর্ভের সন্তান

পাবনা প্রতিনিধি
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৬:৫৪আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৮:১৭

পাবনার আমিনপুরে স্বামীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এতে তার গর্ভের সন্তানও মারা গেছে। গত শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর ৫ দিন অতিবাহিত হলেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার পর থেকেই নানান চাপে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ভুক্তভোগীরা।

বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঘটনার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ।

সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা হলেন, চরকেষ্টপুরের মাজেদ প্রামাণিকের ছেলে সেলিম প্রামাণিক (২৩), একই এলাকার মো. শরীফ (২৪), আনিছ সরদারের ছেলে রাজীব সরদার (২১), তালেব মণ্ডলের ছেলে রুহুল মণ্ডল (২৬), শফিক সরদারের ছেলে লালন সরদার (২০) ও মো. শামসুলের ছেলে সিরাজুল (২৩)।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে চরকেষ্টপুরের কাদেরিয়া তরিকার ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করা হয়। মাহফিলের ডেকোরেশনের কাজ করছিলেন ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী। টাকার প্রয়োজনে ওই নারী রাতে তার স্বামীর কাছে যান। সেখানে ওয়াজ শুনে রাত ১২টার দিকে স্বামী-স্ত্রী পাশের এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়ার পথে গতিরোধ করেন অভিযুক্ত ৬ যুবক। এ সময় তাদের দুজনকে নানান প্রশ্ন করা হয়। একপর্যায়ে স্বামীকে অস্ত্র ও ব্লেডের মাধ্যমে জিম্মি করে। পরে ওই নারীকে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে অভিযুক্তদের দুই জন পালাক্রমে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে ওই নারীর স্বামী তাদের কাছ থেকে ছুটে এসে স্থানীয় লোকজনকে জানালে তারা এসে একজনকে আটক করে এবং বাকিরা পালিয়ে যায়। এ সময় ওই নারীকে স্থানীয় পল্লি চিকিৎসকের মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘ওয়াজ মাহফিল চলাকালে রাত ১টার দিকে ওই ছেলে ছুটে এসে বললো, কিছু ছেলে তাকে মারধর করে তার স্ত্রীকে ধরে নিয়ে গেছে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয়রা গিয়ে একজনকে হাতেনাতে ধরে ফেলে। এ সময় মেয়েটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরির মাধ্যমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।’

ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ‘আমরা আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া পথে তারা মাঠের মধ্যে আটকায়। আমাদের বলে তোরা স্বামী-স্ত্রী কিনা। আমরা স্বামী-স্ত্রী দাবি করলেও তারা কর্ণপাত করেনি। ফোনে আমাদের মা-বাবার সঙ্গে কথা বললেও ওরা শোনেনি। একপর্যায়ে আমার স্বামীকে ব্যাপক মারধর করে এবং অস্ত্র আর ব্লেডের মুখে তাকে জিম্মি করে আমাকে মাঠের মধ্যে ভুট্টাক্ষেতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ শুরু করে। এ সময় আমার স্বামী ছুটে গিয়ে লোকজনকে ডেকে আনলে তারা একজনকে আটক করে, বাকিরা পালিয়ে যায়।’.

ভুক্তভোগী নারীর স্বামী (মামলার বাদী) বলেন, ‘আমার স্ত্রী তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। এ ঘটনায় তার গর্ভের সন্তান মারা গেছে। মামলা হলেও আমাদের এখনও কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। থানায় গেলে কিছু পুলিশ সদস্য নানান কথা বলেন। আর যারা ধর্ষণ করেছে তাদের পক্ষ থেকেও হুমকি ও চাপ আসছে। বলছে, এ ঘটনায় কিছুই হবে না। তোমাদেরই বিপদ হবে, তাই মীমাংসা করো। আমরা ধর্ষণ এবং সন্তান হত্যার বিচার চাই।’

স্থানীয় পল্লি চিকিৎসক তোফাজ্জল হোসেন কাদেরি বলেন, ‘স্থানীয়রা ওই নারীকে উদ্ধার করে আমার কাছে নিয়ে এলে আমি প্রাথমিক চিকিৎসা দিই। পরে বলি মেয়েটাকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল বা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে।’

অভিযুক্তরা এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগরকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করতে পারছে না। এটা নিয়ে প্রশাসনের তেমন তোড়জোড় আছে বলে তেমনটা মনে হচ্ছে না। আমরা ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাই।’

তবে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে বলে দাবি করেছেন আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘অভিযুক্তরা পলাতক। তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারের বিষয়ে পুলিশি গাফিলতির বিষয়টি মিথ্যা। ধর্ষণের ঘটনা মীমাংসা হয় না। বাদীকে হুমকি-ধমকির বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে। তাদের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।’

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
কেন ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়াচ্ছে কিশোররা?
মেলা থেকে অস্ত্রের মুখে দুই নারীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ
মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে পিতার মৃত্যুদণ্ড
সর্বশেষ খবর
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
উপজেলা নির্বাচন আগের যে কোনও নির্বাচনের চেয়ে ভালো হবে: ইসি হাবিব
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই