X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‌‘রমজানে আমার হোটেলে সবার জন্য ইফতার-সেহরি ফ্রি’

হারুনুর রশীদ, জয়পুরহাট
২০ মার্চ ২০২৪, ২১:৩৫আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ২১:৫১

পবিত্র রমজান মাসে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর কলেজ বাজারের রফিক হোটেলে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়ানো হয়। আট বছর ধরে রমজান মাসে এই সেবা দিয়ে আসছেন হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম। এই রমজানেও রফিকের হোটেলে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ব্যক্তি ইফতারি ও সেহরি খাচ্ছেন।

প্রতিদিনের ইফতারিতে থাকে গরুর মাংসের বিরিয়ানি ও সালাদ। সেহরিতে ভাতের সঙ্গে সপ্তাহে তিন দিন গরুর মাংস এবং চার দিন ডিম, মাছ, ছোট মাছ ভাজা, ভাজি ও ভর্তা থাকে। অনেকে ইফতারি ও সেহরি খেয়ে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে হোটেলমালিক রফিকুল ইফতারি ও সেহরির টাকা নেন না। 

প্রতি বছর রমজানজুড়ে রফিকুল ইসলামের এমন উদ্যোগে সবাই খুশি। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ইফতারি ও সেহরি খেতে ছুটে আসছেন। তাদের সেবা দিতে পেরে খুশি রফিকুলও।

আট বছর ধরে রমজান মাসে এই সেবা দিয়ে আসছেন হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম

এ বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বছরের ১১ মাস ব্যবসা করি। সেখান থেকে রমজান মাসের জন্য কিছু টাকা জমিয়ে রাখি। জমানো টাকায় রমজানে ইফতারি ও সেহরি খাওয়াই। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি জন্য করছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও কলেজ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, ১৭ বছর আগে রফিকুল ইসলাম কলেজ বাজারের কাঁচা মালামাল পাইকারিপট্টিতে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ছোট পরিসরে খাবার হোটেলের ব্যবসা শুরু করেন। তখন তার হোটেলে গরুর মাংস ও আটার রুটি বেশি চলতো। গরুর মাংসের স্বাদের কারণে হোটেলের সুনাম এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন গরুর মাংসের ভুনা, রুটি ও ভাত খাওয়ার জন্য এখানে আসতেন। এভাবে রফিকুলের ব্যবসা বড় হয়। হোটেলের জায়গাও বড় করেন। এখন হোটেলে প্রতিদিন প্রায় এক মণ গরুর ভুনা, আধা মণ আটার রুটি ও দুই মণ চালের ভাত বিক্রি হয়। অন্য দিনের চেয়ে শনি ও বুধবার হাটবারের দিন বিক্রি দ্বিগুণ হয়। ২০১৬ সাল থেকে রফিকুল রমজান মাসে বিনা পয়সায় ইফতারি ও সেহরি খাওয়ানো শুরু করেন। প্রতিদিন শতাধিক রোজাদার ইফতার ও সেহরি খেতে আসেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই বাইরের লোকজন। কেউ হাসপাতালে রোগী নিয়ে এসেছেন, আবার কেউ বিভিন্ন কাজে এসে আটকা পড়েছেন। কেউ বাসায় একা থাকেন বলে খেতে আসেন।

এই রমজানেও রফিকের হোটেলে প্রতিদিন গড়ে শতাধিক ব্যক্তি ইফতারি ও সেহেরি খাচ্ছেন

বুধবার (২০ মার্চ) ইফতারের সময় হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, রফিকের হোটেলের ভেতরে-বাইরে চেয়ার-টেবিলে ইফতারির প্লেট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। রোজাদাররা ইফতারির প্লেটের সামনে এসে বসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যে সব চেয়ার ভরে যায়। অনেকে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ইফতার করেন।

মঙ্গলবার রাতে সেহরির সময় দেখা গেছে, হোটেলে ৩৫ জন সেহরি খাচ্ছিলেন। রফিকুল নিজেই খাবার পরিবেশন করছেন। তাকে দুজন স্বেচ্ছাসেবী সহযোগিতা করছেন। অনেকে সেহরি খেয়ে ক্যাশে গিয়ে বিল দেওয়ার জন্য জোরাজুরি করছিলেন। তবে হোটেলমালিক কারও কাছ থেকে বিল নেননি।

ইফতার করতে আসা মিঠু হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়ি পাশের রোয়ার গ্রামে। বিকালে বাজারে করতে এসেছিলাম। ইফতারের সময় হয়ে যাওয়ায় রফিকের হোটেলে বিনা পয়সায় ইফতারি করেছি। আমরা একসঙ্গে ৭০-৮০ জন গরুর মাংসের পোলাও দিয়ে ইফতার করেছি। ইফতারি সুস্বাদু ছিল।’

ফিকুল নিজেই সেহেরির খাবার পরিবেশন করছেন

আওয়ালগাড়ী গ্রামের নান্টু হোসেন বলেন, ‘উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম সেহরির সময় ভাত খেতে পারবো না। হাসপাতালের এক নার্স বললেন, সেহরির সময় কাঁচাবাজারের রফিকের হোটেল খোলা থাকে। হোটেলে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ সেহরি খাচ্ছেন। আমিও পছন্দমতো গরুর মাংস আর ভাত খেয়েছি। খাওয়া শেষে বিল দিতে গিয়ে জানলাম, হোটেলমালিক বিনা টাকায় খাওয়ান। আমার মতো অনেকে টাকা দিতে চেয়েছেন। কিন্তু হোটেলমালিক টাকা নেননি।’

হোটেলমালিকের প্রশংসা করে আক্কেলপুর কলেজ বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল হোসেন বলেন, ‘রফিক হোটেলে আট বছর ধরে রমজান মাসে রোজাদারদের বিনা পয়সায় ইফতারি ও সেহরি খাওয়ানো হচ্ছে। ভালো কাজের জন্য অনেক বেশি টাকা-পয়সা লাগে না। ভালো মন হলেই হয়।’

প্রতি বছর রমজানজুড়ে রফিকুল ইসলামের এমন উদ্যোগে সবাই খুশি

রফিক হোটেলের মালিকের এমন মহতী উদ্যোগে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত জানিয়ে আক্কেলপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুর ইসলাম পল্টু বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে রমজান মাসজুড়ে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াচ্ছেন রফিকুল। এটি আসলেই মহতী উদ্যোগ।’

প্রায় ১৭ বছর ধরে হোটেলের ব্যবসা করছি জানিয়ে হোটেলের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে অনেক ভালো রেখেছেন। রমজানের জন্য টাকা জমিয়ে রাখি। সেই টাকায় পুরো রমজান মাসে ইফতারি ও সেহরি খাওয়াই। প্রতিদিন আট কেজি গরুর মাংস আর ১৬ কেজি চালের বিরিয়ানি রান্না করা হয়। ইফতারিতে বিরিয়ানি ও সালাদ করা হয়। সেহরিতে সপ্তাহে তিন দিন গরুর মাংস থাকে। এছাড়া মাছ-ডিম, ভাজি-ভর্তা থাকে। প্রতিদিন শতাধিক রোজাদার ইফতারি ও সেহরি খান। রমজানে এমন সেবা দিতে খুব ভালো লাগে। যতদিন বেঁচে থাকবো, ১১ মাস ব্যবসা করবো। আর রমজান মাসে আমার হোটেলে সবাইকে বিনা পয়সায় ইফতার ও সেহরি খাওয়াবো।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ঈদুল ফিতরে করণীয়
চাঁদ দেখা যায়নি, ঈদ বৃহস্পতিবার
রমজানে নবীজির রাতের আমল
সর্বশেষ খবর
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস আজ
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আরও ৩ নেতাকে বহিষ্কার বিএনপির
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু