জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বগুড়া জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলালকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। তবে একই মামলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজম নাজিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে স্বামী-স্ত্রী দুজনে বগুড়ার বিশেষ জজ (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) মো. শহীদুল্লাহর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে এ আদেশ দেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামছুদ্দিন শেখ হেলাল ও তার স্ত্রী আবে জমজম নাজির বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭০ লাখ ৩১ হাজার ৫৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলা রয়েছে দুদকের। এই মামলায় তারা গত মার্চ মাসে উচ্চ আদালত থেকে ছয় সপ্তাহের জামিন পান। এরপর নিম্ন আদালতে হাজির না হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়া স্পেশাল জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে সামছুদ্দিনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। বিকালে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। পাশাপাশি স্ত্রী আবে জমজম নাজির জামিন মঞ্জুর করেন।’
এর আগে গত বছরের ১২ নভেম্বর সামছুদ্দিন ও তার পরিবারের মালিকানায় থাকা চারটি বাড়ি ও ৯টি গাড়ি জব্দের নির্দেশ দেন বগুড়ার বিশেষ জজ আদালত। গাড়িগুলো বিআরটিসির কাছে হস্তান্তর করতে বলা হয়। এর মধ্যে সামছুদ্দিন নিজেই তিনটি গাড়ি বিআরটিসির কাছে হস্তান্তর করেন। তবে বাকি ছয়টি গাড়ি হস্তান্তর করেননি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সামছুদ্দিন এবং তার স্ত্রী-সন্তানের নামে থাকা চারটি বাড়ি জব্দ করা হয়। দুদকের করা মামলায় আদালতের নির্দেশে বাড়িগুলো গণপূর্ত অধিদফতরের জিম্মায় নেওয়া হয়।
সামছুদ্দিন শেখ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে বগুড়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। তিনি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া পৌরসভার সাবেক প্যানেল মেয়র। প্রায় ১২ কোটি টাকার বেশি জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে সামছুদ্দিন শেখ ও তার স্ত্রী-সন্তানের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করেন। সামছুদ্দিন শেখ ছাড়া তার প্রথম স্ত্রী হেলেনা পারভীন ও ছেলে হোসাইন হাবীবের বিরুদ্ধে একটি করে মামলা করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দুদক থেকে সামছুদ্দিন শেখ ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণীর হিসাব চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়। ২০২১ সালের ২৫ মে তারা দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এরপর অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্তে নামে দুদক। তদন্তে দুদকে দাখিল করা বিবরণীর সঙ্গে প্রায় ১২ কোটি টাকার সম্পদের গরমিল পাওয়া যায়।
দুদকের মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সামছুদ্দিন ছাড়াও তার প্রথম স্ত্রী হেলেনা পারভীন জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে দুই কোটি ৪১ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৩ টাকা অর্জন করেছেন। এর মধ্যে সম্পদ বিবরণীতে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ১৮৯ টাকা ভিত্তিহীন হিসাব দেন তিনি। এ কারণে তার বিরুদ্ধেও এসব অভিযোগে দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় মামলা হয়।
একইভাবে সামছুদ্দিনের ছেলে হোসাইন হাবীবের বিরুদ্ধেও দুই কোটি ৮০ লাখ ৫ হাজার ৩৪৯ টাকা অবৈধ আয় অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক। এজন্য দুদক আইন ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় তাকেও মামলার আসামি করা হয়। এছাড়া আরও এক কোটি দুই লাখ টাকার বেশি সম্পদ তার দ্বিতীয় স্ত্রী আবে জমজম নাজির কাছে স্থানান্তরের প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য তাকে আসামি করা হয়।