বগুড়ার ধুনট মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এস এম জিয়াউল হক ও সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আসিফ ইকবাল সনির বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য এবং নানাভাবে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিচার দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠেছেন। তারা রবিবার (১৮ আগস্ট) দুপুরে প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অধ্যক্ষ পদত্যাগ না করলে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কলেজের শিক্ষক হায়দার আলী, নুরে আলম, মোজাহেরুল আনোয়ার প্রমুখ জানান, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের সাবেক এমপি হাবিবর রহমানের ছেলে আসিফ ইকবাল সনি ক্ষমতার দাপটে ধুনট মহিলা ডিগ্রি কলেজের সভাপতি হন। ২০১৫ সালে তিনি এস এম জিয়াউল হককে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেন। এরপর থেকে অধ্যক্ষ এস এম জিয়াউল হক ও সভাপতি আসিফ ইকবাল সনি নিয়োগ বাণিজ্য, কলেজের অভ্যন্তরীণ আয়, শিক্ষকদের টিউশন ফি আত্মসাৎ করা শুরু করেন। তারা গত ১০ বছরে শিক্ষকদের টিউশন ফির প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
এ ছাড়া কলেজে ল্যাব নির্মাণ বাধ্যতামূলক হলেও তা না করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চার জন ল্যাব সহকারী নিয়োগ দিয়ে দুজন প্রায় ৮০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
উপাধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘হাবিবর রহমান তিন মেয়াদে এমপি থাকার সুবাদে তার ছেলে আসিফ ইকবাল সনি ক্ষমতার দাপটে একই সঙ্গে ধুনট মহিলা ডিগ্রি কলেজ, গোসাইবাড়ি ডিগ্রি কলেজ ও জোড়খালি সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সভাপতি হন। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।’
তিনি জানান, সভাপতি ও অধ্যক্ষ শুধু তার কাছেই দেড় লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া কলেজের ১৬ জন শিক্ষক, পাঁচজন প্রদর্শক ও নয়জন কর্মচারীর উচ্চতর বেতন স্কেল দেওয়ার সময় এক লাখ ৫২ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়ার নামে জনপ্রতি ১০০ টাকা হিসাবে প্রায় ২০ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেন। গত তিন বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ব্যবহারিক খাতা অবৈধভাবে বিক্রি করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। ২০২৩ সালের এইচএসসি ব্যবহারিক পরীক্ষার ফি বাবদ দুই লাখ টাকা শিক্ষকদের মাঝে বণ্টন না করে সভাপতি ও অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেছেন।
কলেজের শিক্ষক মোজাহেরুল আনোয়ার বলেন, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাবিবর রহমান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তখন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকলেজ পরিদর্শক প্রফেসর হারুন উর রশিদ সরেজমিনে তদন্ত করে সাবেক সভাপতি এমপিপুত্র সনি ও অধ্যক্ষ এস এম জিয়াউল হকের নিয়োগ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতির সত্যতা পান। তিনি আসিফ ইকবাল সনিকে সভাপতির পদ থেকে অপসারণ ও অধ্যক্ষকে সতর্ক করেন। এরপর অধ্যক্ষ আরও বেপরোয়া হয়ে শিক্ষক ওঠেন। তিনি কলেজের কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও নানাভাবে হয়রানি করেন।’
কলেজের সাবেক সভাপতি, ধুনট উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল সনির মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে অধ্যক্ষ এস এম জিয়াউল হক তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি পরিস্থিতির শিকার।’