বগুড়ায় মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে অশালীন আচরণ করায় স্বেচ্ছাসেবক দলের তিন নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে তাদের আটক করা হয়। সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহবুব তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন।
বুধবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাদের বগুড়া জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহরের মালগ্রাম চাপড়পাড়ার মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে রুহুল আমিন (৩৬), স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী একই এলাকার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে আহসান হাবিব (১৮) ও একই এলাকার হেকমতের ছেলে নুরুল ইসলাম (১৮)।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত দেড়টার দিকে এক পুলিশ কর্মকর্তা তার সরকারি গাড়িতে স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সাতমাথায় চা পান করতে আসেন। তারা চা পানের জন্য গাড়ি থেকে নামলে সেখানে মদ্যপ অবস্থায় আসেন রুহুল আমিন, তার সহযোগী আহসান হাবিব ও নুরুল ইসলাম। এ সময় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রুহুল আমিন পুলিশ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন, এতো রাতে আপনার সঙ্গে থাকা মহিলা কে? জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, স্ত্রী-সন্তান। এরপর আজেবাজে কথা বলতে শুরু করেন রুহুল আমিন। এ নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে রুহুল আমিনের তর্কবিতর্ক হয়। ঘটনাস্থলে থাকা সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সিরাজুল হকের হস্তক্ষেপে ওই পুলিশ কর্মকর্তা স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে চলে যান। এ সময় উপস্থিত লোকজন পুলিশের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে গেলে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা তাদের মারধর শুরু করেন। এ দৃশ্য দেখে উপস্থিত আরও লোকজন তিন জনকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। পরে সদর থানা পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নেয়। সেখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর সিরাজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানালে স্থানীয় লোকজনকে মারধর করেন তারা। পরে স্থানীয় জনতা জড়ো হয়ে তিন জনকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এ ঘটনায় সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মাহমুদ বাদী হয়ে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।’
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, ‘মাতাল অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী-সন্তানের সামনে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তারা। পরে উপস্থিত লোকজন প্রতিবাদ করলে তারা জনগণের ওপর চড়াও হন। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে এবং রাতেই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। হাসপাতালের সনদ অনুযায়ী, মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন তারা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তিন জনকে আদালতের মাধ্যমে বগুড়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এ ব্যাপারে বগুড়া শহর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক হোসেন আলী বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এ ধরনের কর্মীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’