রাজশাহীর আমের জন্য অপেক্ষা ফুরালো। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে জেলার বাগানগুলো থেকে গাছপাকা আম নামানো শুরু হয়েছে। শুরুতে নামছে ‘গুটি’ হিসেবে পরিচিত সাধারণ জাতের আম। পরে পর্যায়ক্রমে আসবে নানা উন্নতজাত। বাগানিরা বলছেন, এবার ফলন কিছুটা বেশি, তবে দাম তুলনামূলক কম।
জেলা প্রশাসন অপরিপক্ব আমের বাজারজাত ঠেকাতে গেলো আট বছরের মতো এবারও জাতভেদে আম নামানোর তারিখ ঘোষণা করেছে। অনেকের কাছে এটি ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ হিসেবে পরিচিত। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বৃহস্পতিবার গুটি জাতের আম গাছ থেকে নামানোর পর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর হাটে নিয়ে আসেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
বাগানিদের মতে, এবার আমের ফলন গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও বাজারমূল্য তুলনামূলক কম। তবে সময়মতো আম পাড়ার সুযোগ পাওয়ায় সন্তুষ্ট তারা। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে নামানো হবে গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, ফজলি, আশ্বিনাসহ উন্নতজাতের আম।
চলতি বছর রাজশাহীতে ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার ৬ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে আমের চাষ হয়েছিল ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে।
ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, গোপালভোগ আম নামানো যাবে ২২ মে থেকে। লখনা (লক্ষণভোগ) ও রানীপছন্দ ২৫ মে থেকে, হিমসাগর ও খিরসাপাত ৩০ মে থেকে, ল্যাংড়া ও ব্যানানা ম্যাংগো ১০ জুন থেকে, আম্রপালি ও ফজলি ১৫ জুন থেকে, বারি-৪ আম ৫ জুলাই, আশ্বিনা ১০ জুলাই এবং গৌড়মতি ১৫ জুলাই থেকে, এ ছাড়া কাটিমন ও বারি আম-১১ জাতের আম পাকলেই নামাতে পারবেন চাষিরা।
গত আট বছরের মতো এবারও অপরিপক্ব আম বাজারজাতকরণ ঠেকাতে জাতভেদে আম নামানোর নির্দিষ্ট সময়সূচি ঘোষণা করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। এই সময়সূচিই ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী শুক্রবার (১৫ মে) থেকে গুটি আম পাড়া শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকালে রাজশাহী মহানগর, পুঠিয়া ও বাঘা উপজেলার বিভিন্ন বাগানে গিয়ে দেখা যায়, আমচাষিরা গাছপাকা গুটি আম নামিয়ে বানেশ্বর হাটসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে আসেন।
রাজশাহী নগরীর গণকপাড়া এলাকায় ভ্যানে আম বিক্রি করছিলেন মোখলেসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি গোপালভোগ ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। আজকে (বৃহস্পতিবার) আম নামানোর প্রথম দিন। তাই অল্পকিছু আম নিয়ে এসেছিলাম বাজার যাচাই করার জন্য। কিন্তু এখনও আমি পুরোপুরি পরিপক্ব হয়নি। তবে ক্রেতাদের বলে দিচ্ছি। এখন খেলে টক হবে। কয়েকদিন আমগুলো পাকিয়ে খাবেন। তা না হলে মিষ্টি হবে না।’
নগরীর শালবাগান এলাকার ফল ব্যবসায়ী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজকে গুটি আম নামানোর কথা। কিন্তু ক্রেতারা গুটি জাতের আম খেতে চায় না। তাই আমি দোকানে এখনও আম উঠাইনি।’
রাজশাহী মহানগরীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার এক বাগানে আম নামাচ্ছিলেন চাষি আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাগানে এখন যেসব আম নামানো হচ্ছে, এর মধ্যে সাগরিকা নামানো শুরু হলো। এবার যে সময়সূচি ঘোষণা করা হয়েছে, তা সময়মতোই কার্যকর হওয়ায় আমাদের জন্য সুবিধা হয়েছে। গাছে আমও ভালোভাবে পেকেছে।’
এসব আমকে অনেকেই আঁটি আমও বলেন। এই গুটি জাতের প্রায় ৩০০ রকমের আম আছে, যেগুলো অন্য জাতের চেয়ে আগেভাগেই পাকতে শুরু করে। চোষা বা চোরষা, বৈশাখী ও চাপড়া নামের গুটি আমও নামানো শুরু হয়েছে।
বাঘা উপজেলার আমচাষি আনোয়ার হোসেন পলাশ জানান, প্রথম দিন বাগান থেকে বড় আকারের গুটি আম মণপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। আর ছোট আমের দাম ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে। গত বছরের তুলনায় এবার শুরুতেই দাম কিছুটা কম।
তিনি আরও বলেন, ‘এবার এলাকার অন্য বাগানগুলোতে আমের ফলন ভালো হলেও আমার বাগানে কিছুটা কম হয়েছে। তবু বাজারে যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে দাম কমে শুরু হওয়ায় আমরা একটু হতাশ।’
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা জানিয়েছেন, চাষিরা আম নামানো শুরু করেছে। এই আম নামানো চলবে আগামী জুলাই মাস পর্যন্ত। এবার আশা করা যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।