পঞ্চগড়ে উৎপাদিত আলু যাচ্ছে মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায়। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) মাধ্যমে গ্রানুলা ও ডায়মন্ড জাতের এসব আলু বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে বিএডিসি কৃষকদের কাছ থেকে এসব আলু ক্রয় করছে। পঞ্চগড় থেকে ৫০০ মেট্রিক টন আলু রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ পর্যন্ত ৯৮ মেট্রিক টন রফতানি হয়েছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার পঞ্চগড় থেকে ১৪ মেট্রিক টন আলু পাঠানো হয় রফতানির জন্য। তবে আগামী বছর রফতানির পরিধি আরও বাড়বে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। বাজার দরের চেয়ে বেশি দাম পাওয়ায় কৃষকরাও বেশ খুশি।
বিএডিসি পঞ্চগড় অফিস জানায়, পঞ্চগড় থেকে গত ৩০ মার্চ আলু রফতানি কার্যক্রম শুরু করে বিএডিসি। দেশের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান কেএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মাসাওয়া এগ্রো লিমিটেড, এগ্রোটেক বিডি, বরুন এগ্রো লিমিটেড আলু রফতানির কাজে যুক্ত হয়েছে।
বিএডিসি অফিস সূত্র আরও জানায়, সাড়ে ৮ কেজির প্রতি প্যাকেট আলু পঞ্চগড় থেকে ট্রাকে করে প্রথমে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে সেখান থেকে কার্গো জাহাজে করে পৌঁছানো হচ্ছে মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায়। ৯০ থেকে ২০০ গ্রাম ওজনের বড় আলুগুলোই কেবল রফতানির জন্য বাছাই করা হয়। প্রতি কেজি ডায়মন্ড আলু ১৪ টাকা ২০ পয়সা এবং গ্রানুলা ১৩ টাকা ২০ পয়সা দরে কৃষকদের কাছ থেকে কেনা হচ্ছে বিদেশে রফতানির জন্য। সবগুলো রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান একই দামে এভাবে আলু কিনছে। এতে বাজারে আলুর দাম আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। একইসঙ্গে কৃষকরাও লাভের মুখ দেখছেন।
সূত্র জানায়, এবার আলুর মৌসুমে বিএডিসি পঞ্চগড় অফিস থেকে সরকার নির্ধারিত সুলভ মূল্যে রফতানিযোগ্য আলু চাষাবাদের জন্য ৮ জন চাষিকে ৩৫ মেট্রিক টন আলুর বীজ দেওয়া হয়। এছাড়া বীজ, সার, কীটনাশক কেনার জন্য রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পান চাষিরা। তাদের ৫০ একর জমি থেকে আলু উৎপাদন হয়েছে ৩৫০ মেট্রিক টন। ওই চাষিদের উৎপাদিত আলুর বাছাইকৃত একটি অংশ বীজের জন্য ফের কিনে নিচ্ছে বিএডিসি। আর বড় আকারের আলুগুলো রফতানি করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, টিপিএসসহ ২০ টির বেশি জাতের আলুর চাষাবাদ হয়েছে। এবার মোট আলু উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন।
আলু চাষি আব্দুল মতিন জানান, আমাদের উৎপাদিত আলু দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে যাচ্ছে এটা আমাদের জন্য গর্বের। বিদেশে আলু যাওয়ায় আলু বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। না হলে দাম আরও কমে যেতো। তবে দামটা আরেকটু বেশি হলে আমাদের জন্য উপকার হতো। আলু চাষে চাষিরা আরও আগ্রহী হতো।
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া এলাকার আলু চাষি বায়েজীদ বোস্তামী বলেন, চলতি মৌসুমে ২৩ একর জমিতে ডায়মন্ডসহ কয়েকটি জাতের আলুর চাষ করেছি। রফতানির জন্য আমার উৎপাদিত আলুর মধ্যে ৩ মেট্রিক টন আলু দিয়েছি। বাকি আলু বিএডিসি ভিত্তিবীজ, মান ঘোষিত বীজ হিসেবে কিনে নিবে। অবশিষ্ট কিছু আলু সংরক্ষণ করবো। তারপর যা থাকবে বাজারে বিক্রি করে দেবো।
রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বরুন এগ্রো লিমিটেডের মান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশের আলুর বাজার রয়েছে। বর্তমানে আমরা মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায় রফতানি করছি। কেবল ভালোমানের বড় আকারের আলু রফতানিযোগ্য। আগামী বছর রফতানির পরিমাণ আরও অনেক বাড়বে বলে আমরা আশাবাদী।
পঞ্চগড় জেলা বিএডিসি’র উপ-পরিচালক (টিসি) আব্দুল হাই সজিব জানান, আমাদের দেশে আলুর চাহিদা ৬৫ থেকে ৭০ লাখ মেট্রিক টন। সারাদেশে এবার ১ কোটি মেট্রিক টনেরও বেশি উৎপাদন হয়েছে। দেশের চাহিদা পূরণ করে বাকি আলু রফতানির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পঞ্চগড় থেকে ৯৮ মেট্রিক টন গ্রানুলা ও ডায়মন্ড আলু যাচ্ছে মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকায়। এ জেলা থেকে আলু রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ মেট্রিক টন। কিন্তু, এবার হয়তো লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না। আশাকরি আগামী বছর রফতানির পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়বে।
তিনি বলেন, এছাড়া সানসাইন নামে রফতানিযোগ্য নতুন জাতের উন্নত ফলনশীল আলু চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এই আলু ৬৫ দিনেই উত্তোলন করা যায়। প্রতি হেক্টরে এই আলুর ফলন হয় ৪১ মেট্রিক টন পর্যন্ত। আগামী বছর এই আলু ব্যাপক হারে চাষ হবে বলে আশা করছি।