X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

১১ হাজার জেলেকে সহায়তা না দিয়ে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
০৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৯আপডেট : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:১৯

প্রজনন মৌসুমে সোমবার (০৪ অক্টোবর) থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিন সারাদেশের নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে কুড়িগ্রামের তালিকাভুক্ত সাড়ে ১৮ হাজার জেলের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন। খাদ্য সহায়তার বাইরে থাকছেন ১১ হাজার জেলে।

এসব জেলের জন্য ১৫০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ, মৎস্য বিভাগের নিজস্ব নৌকা ও জনবল না থাকায় মা ইলিশ শিকার বন্ধ রাখতে অভিযান পরিচালনা ও সফলতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। অভিযানে ভাড়া নৌকাই ভরসা বলে জানিয়েছে মৎস্য বিভাগ।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় ১৬টির বেশি নদ-নদী থাকলেও মূলত ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদে ইলিশের বিচরণ। এসব নদ-নদী অববাহিকায় জেলা সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ১২ হাজার ৬৫৭ জেলের মধ্যে সাড়ে সাত হাজার ইলিশ ধরা জেলের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে ভিজিএফ প্রকল্পের আওতায় ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। 

এর মধ্যে সদরে দুই হাজার ৭২৫ এবং উলিপুরে দুই হাজার ৫২০ জেলে চাল পাবেন। শিগগিরই তালিকাভুক্ত জেলেদের মাঝে চাল বিতরণ করা হবে। এই চাল জেলেদের ইলিশ শিকার থেকে বিরত রাখতে সহায়ক হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করছে মৎস্য বিভাগ।

ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ডিএফও)  কালিপদ রায় বলেন, ২২ দিন সারাদেশের নদ-নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। একই সময়ে দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহন, কেনাবেচা, বিনিময় এবং মজুত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে হাট-বাজারে ব্যানার লাগানোসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে মিটিং শুরু হয়েছে। জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় হচ্ছে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করতে মাইকিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সাগর থেকে জেলার জলসীমায় ইলিশ পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয় জানিয়ে কালিপদ রায় বলেন, ‘বাধামুক্ত পথে সাধারণত ইলিশ একদিনে ৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। সে অনুযায়ী জলসীমায় পৌঁছাতে ১২-১৪ দিন লেগে যায়। এরপরই জেলার নদ-নদীতে ইলিশ দেখা যায়।’

তবে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ ও জনবল সংকটে ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে নদীতে অভিযান পরিচালনা ও সফলতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মৎস্য বিভাগ। দীর্ঘ জলসীমা মৎস্য শিকারমুক্ত রাখতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

খাদ্য সহায়তার বাইরে থাকছেন ১১ হাজার জেলে

ডিএফও কালিপদ রায় জানান, এবছর জেলার পাঁচ উপজেলার নদ-নদীকে ইলিশ জোনের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এসব উপজেলায় ২২ দিনের অভিযান ও প্রচারণার জন্য ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সে হিসাবে প্রতি উপজেলায় গড়ে সাত হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এই বরাদ্দ অপ্রতুল। আমাদের নিজস্ব নৌযান নেই। একদিনের অভিযানে নৌকা ভাড়া দিতে হয় পাঁচ হাজার টাকা। এ ছাড়া জনবল খরচ রয়েছে। এই বরাদ্দ দিয়ে ২২ দিন অভিযান পরিচালনা কীভাবে সম্ভব? তবু আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠে কাজ করছি।’

জেলার সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর মৎস্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়ে নদ-নদীতে অভিযান পরিচালনার জন্য যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তা দিয়ে এক-দুই দিনের খরচ মেটে। অভিযানের শিথিলতায় নদীগুলো জালমুক্ত রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে জলসীমার বেশ কিছু অংশে মাছ শিকার বন্ধ করা সম্ভব হয় না।

ডিএফও কালিপদ রায় বলেন, ‘সরকারি আদেশ বাস্তবায়ন করতে প্রচারণার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সময়ে নদীতে অভিযান চলবে। মৎস্য বিভাগ প্রস্তুতি নিয়েছে।’

২০১৭ সালে কুড়িগ্রামকে ইলিশ জোনভুক্ত করা হয়। ২০১৯ সাল থেকে ইলিশ ধরার নিষিদ্ধ সময়ে ইলিশ ধরা জেলেদের জন্য প্রণোদনা বরাদ্দ দেয় সরকার। জেলার প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার নিবন্ধিত জেলে থাকলেও খাদ্য সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন শুধু ইলিশ ধরার জেলেরা। এ ছাড়া খাদ্য সহায়তার বাইরে থাকছেন ১১ হাজার জেলে। এত জেলেকে প্রণোদনার বাইরে রেখে নদীতে মাছ ধরা শতভাগ বন্ধ রাখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন জেলে নেতারা। এমন পরিস্থিতিতে অন্তত নদীতে মাছ আহরণের ওপর নির্ভরশীল জেলেদের প্রণোদনা হিসেবে চাল ও অর্থ সহায়তা দিতে পারলে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

/এএম/
সম্পর্কিত
সুন্দরবনের দুবলার চরকমেছে শুঁটকি উৎপাদন, কষ্টের কথা জানালেন জেলেরা
ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ, জেলেপল্লীতে ঈদের আমেজ
সেন্টমার্টিনে স্পিডবোট-ডুবি, ১৯ যাত্রীকে জীবিত উদ্ধার
সর্বশেষ খবর
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
শেষ ম্যাচে জিতে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
কারাগার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের স্থায়ী ঠিকানা: রিজভী
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
তিন নম্বরে থেকে সুপার লিগে মোহামেডান
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
মুখ থুবড়ে পড়েছে ইউক্রেনের অস্ত্র খাত
সর্বাধিক পঠিত
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
বৈধ পথে রেমিট্যান্স কম আসার ১০ কারণ
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?
ইসরায়েলি হামলা কি প্রতিহত করতে পারবে ইরান?