ধরলার চরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে গিয়ে নিখোঁজের দুই দিন পর মিলেছে আজগার আলীর (৬০) লাশ। শনিবার (২ এপ্রিল) সকালে ধরলা অববাহিকার উত্তর কদমতলা এলাকায় স্থানীয় দুই কৃষক নদীতে তার লাশ দেখতে পান। তারা লাশটি চরের কিনারে নিয়ে আসেন। পরে সদর থানা পুলিশের একটি দল লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আজগার আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াবশ গ্রামে। তার পরিবারে স্ত্রী এবং ছয় ছেলে-মেয়ে ( তিন ছেলে তিন মেয়ে) রয়েছেন। এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) সকালে ধরলার চরে গরুকে ঘাস খাওয়াতে যান আজগার আলী। সেদিন সন্ধ্যার আগে তার গরুগুলো চেনা পথ ধরে নদী পার হয়ে বাড়িতে ফিরে আসে। তবে ফেরেননি আজগার। শুক্রবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ দল অনুসন্ধান চালালেও খোঁজ মেলেনি তার।
দিন শেষে গরু বাড়ি ফিরেছে, ফেরেননি আজগারএদিকে আজগারের লাশ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজগারের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার আগে কেউ তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে থাকতে পারে।
নিহতের বড় ছেলে আজিজুলের দাবি, বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে তিনি বলেন, ‘বাবার নিয়ে যাওয়া গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি ও তার ছেলে লাঠি দিয়ে বাবাকে আঘাত করেছিল। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তিনি সেটা সহ্য করতে পারেননি, এটা হত্যাকাণ্ড। বাবার গলার কাছে আমি আঘাতের চিহ্ন দেখেছি।’ এ ঘটনায় তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী পারভেজসহ কয়েকজন জানান, লাশের ঘাড়ে ও পাঁজরে বড় বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। পরে স্থানীয়রা লাশ গামছা দিয়ে ঢেকে রাখেন।
পাঁচগাছী ইউপির ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম সরকার ওয়াসিম বলেন, আজগার আলীর লাশ উদ্ধার হয়েছে। তিনি নিখোঁজ হওয়ার আগে তাকে মারপিট করা হয়েছে বলে ৪-৫ জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য ওয়াসিম আরও বলেন, আজগার আলীর গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি নৌকায় করে এসে আজগারকে লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। এরপর নদী পার হওয়ার পথে আজগার হঠাৎ নদীতে হারিয়ে যায়।
স্থানীয় জেলে নুর হোসেনের বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য বলেন, নৌকায় করে মাছ ধরার সময় তিনি দেখেছেন একজন লোক গরু নিয়ে নদী পার হচ্ছিল। হঠাৎ তিনি দেখতে পান গরু পার হচ্ছে কিন্তু লোকটি নেই।
ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা বলেন, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল প্রতিবেদন ও ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
সদর থানার ওসি খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।