X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তরপত্র সরবরাহ, জড়িতদের খোঁজে গোয়েন্দারা

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৪ জুন ২০২২, ২২:০০আপডেট : ০৪ জুন ২০২২, ২২:০৪

কুড়িগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে দুই প্রার্থীসহ এক শিক্ষককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। শনিবার (৪ জুন) তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আয়শা সিদ্দিকা। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই হাফিজ এ তথ্য জানিয়েছেন।

এদিকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও উত্তরপত্র সরবরাহে একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় আছে বলে খবর পেয়েছে পুলিশ ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেই সিন্ডিকেট ও তার সদস্যদের খোঁজে পুলিশ-গোয়েন্দারা মাঠে নেমেছেন।

কারাগারে পাঠানো আসামিরা হলেন-ভূরুঙ্গামারী উপজেলার কামাত আঙ্গারিয়া গ্রামের ফাতেমা তুজ জোহরা। তিনি পুলিশ লাইন্স স্কুল কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ছিলেন। তাকে মোবাইল ফোন সরবরাহের অভিযোগে ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার আরেক পরীক্ষার্থী সদরের কালে রেল স্টেশন এলাকার বাসিন্দা তহিদুল হাসান। তিনি রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকের নিয়োগ পরীক্ষার হল থেকে আটক ২ পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা

শুক্রবার (৩ জুন) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা (জেলায় দ্বিতীয় ধাপ) অনুষ্ঠিত হয়। কুড়িগ্রামে ১৮টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের অভিযোগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ২৪ পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে মোবাইল ফোনে প্রশ্নপত্র ও উত্তর আদান প্রদানের অভিযোগে এক নারীসহ দুই পরীক্ষার্থীকে আটক করে কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার দিনভর মামলা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর মধ্যরাতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবরা বাদী হয়ে মামলা করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, দুই পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকের বিরুদ্ধে পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ আইন, ১৯৮০ এর ৪/১৩ ধারায় পৃথক মামলা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষায় মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নকল করা ও নকলে সহায়তার অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে এ মামলা দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গ্রেফতার ফাতেমা তুজ জোহরা পুলিশ লাইন্স স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি হলে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ না করলেও পরে তাকে মোবাইল সরবরাহ করেন ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আরিফুর রহমান। তিনি ফাতেমার কক্ষে পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একই সঙ্গে ওই স্কুলের আরও এক সহকারী শিক্ষককে খুঁজছে পুলিশ। উত্তরপত্র প্রস্তুত করে পাঠানোর সিন্ডিকেটে ওই শিক্ষকেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে পুলিশ।

গ্রেফতার জোহরার এক আত্মীয় জানান, দুই বন্ধুর খপ্পরে পড়ে জোহরা ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একজন অন্য একটি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। আরেকজন কেন্দ্রের বাইরে থেকে উত্তর সরবরাহ করছিলেন। ফোনে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে সেখানে প্রশ্নপত্র ও উত্তর সরবরাহ করেছিলেন তারা।

আরেকটি সূত্র জানায়, রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আটক পরীক্ষার্থী তহিদুল হাসানের কাছ থেকে হলের ভেতর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। পরে তার ফোনেও বাইরে থেকে উত্তরপত্র আসার প্রমাণ পায় কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, তহিদুলের বাড়ির পাশে একজন ব্যবসায়ীর বাড়িতে কয়েকজন উত্তরপত্র প্রস্তুত করে মোবাইল ফোনে সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। পরীক্ষা উপলক্ষে ওই দলের কয়েকজন সদস্যকে জেলার বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়। যার বাড়িতে তারা উত্তরপত্র প্রস্তুত করছিলেন, সেই ব্যবসায়ীর পুত্রবধূও পরীক্ষার্থী ছিলেন।

আরও পড়ুন: শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন, বহিষ্কার ২৪

সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যমতে, শুক্রবারের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র সমাধানে কুড়িগ্রাম জেলায় একাধিক সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। তারা বিভিন্ন কেন্দ্রের হল পরিদর্শকদের টাকার বিনিময়ে চুক্তি করে বাইরে থেকে মোবাইল ফোনে উত্তর সরবরাহের কাজ করেছে। একাধিক বাড়ি ছাড়াও আবাসিক হোটেলে এসব সিন্ডিকেট তাদের কার্যক্রম চালিয়েছিল। ১৮টি কেন্দ্রের দুই একটি বাদে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে তারা সফলও হয়েছে। এসব সিন্ডিকেটে এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ জেলার প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও জড়িত বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সিন্ডিকেটের খোঁজে সদরের খলিলগঞ্জ এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ সময় সিন্ডিকেটের সব সদস্য পালিয়ে গেলেও এক সদস্যকে আটক করেন তারা। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে শর্তসাপেক্ষে ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই সিন্ডিকেটের বাকি সদস্যদের খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

এদিকে এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘মামলায় আসামি গ্রেফতারের পাশাপাশি এ ঘটনায় সম্পৃক্ত সন্দেহভাজনদের খোঁজে কাজ করছে পুলিশ। জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’

/এসএইচ/
সম্পর্কিত
শিক্ষক নিয়োগে বৈষম্য, আদালতের আদেশ মানছে না এনটিআরসিএ
কানে ডিভাইস নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্রে বোন, বাইরে উত্তর বলার অপেক্ষায় ভাই
‘জুনের মধ্যে ১০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সম্পন্ন হবে’
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিলেন মিয়ানমারের আরও ১৩ সীমান্তরক্ষী
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
ভাসানটেকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ: ঝরে গেলো আরেকটি প্রাণ
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
আজকের আবহাওয়া: ঢাকাসহ ৩ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী: ওয়াশিংটনে অর্থমন্ত্রী
সর্বাধিক পঠিত
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
সয়াবিন তেলের দাম পুনর্নির্ধারণ করলো সরকার
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
ডিএমপির ৬ কর্মকর্তার বদলি
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
নিজ বাহিনীতে ফিরে গেলেন র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মঈন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
পরীমনির বিরুদ্ধে ‘অভিযোগ সত্য’, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন
আমানত এখন ব্যাংকমুখী
আমানত এখন ব্যাংকমুখী