‘পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দরপত্র থেকে কাগজ সরিয়ে দিয়েছেন হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক। তিনি বিক্রি হয়ে গেছেন। তত্ত্বাবধায়ক যদি বিক্রি হয়ে যান তাহলে স্বাস্থ্যসেবার মান কখনও ঠিক থাকবে না।’ কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এমএসআর (মেডিসিন ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ক্রয়) টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন কুড়িগ্রাম জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মমিনুর রহমান মুমিন।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে সচেতন যুব সমাজের ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন শতাধিক শিক্ষার্থী, তরুণ ও শিক্ষক।
বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কলেজ প্রভাষক মামুন সেলিম, সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদের, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল ইসলাম পলাশ ও ছাত্রনেতা আশিকুর রহমান আশিক প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিধিবহির্ভুত শর্ত জুড়ে দিয়ে এমএসআর টেন্ডার আহ্বান করেছেন। সিন্ডিকেটভুক্ত বিশেষ ঠিকাদারকে বারবার কাজ দিতেই এমন শর্ত দিয়েছেন। যাতে অন্য ঠিকাদাররা কাজ না পান। অর্থের বিনিময়ে তত্ত্বাবধায়ক কুড়িগ্রামের জনগণের স্বার্থ বিক্রি করে দিয়েছেন।’ বক্তারা অবিলম্বে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্ববানের দাবি জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেওয়া সহকারী অধ্যাপক আব্দুল কাদের বলেন, ‘এই তত্ত্বাবধায়ক উৎকোচের বিনিময়ে দুর্নীতির জলে নিজেকে নিমজ্জিত করে পুরো টেন্ডার প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করেছেন। তিনি সিন্ডিকেটের কাছে নিজেকে বিক্রি করে দিয়েছেন। অবিলম্বে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে স্বচ্ছ পদ্ধতিতে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার করার জন্য কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
কাজ বাগিয়ে নিতে আগের ঠিকাদারের সিন্ডিকেট দুই থেকে তিন কোটি টাকার বিনিময়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছেন অভিযোগ করে প্রভাষক মামুন সেলিম বলেন, ‘দরিদ্র এই জেলায় প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যখাতের জন্য যে বরাদ্দ দিয়েছেন, তা লুটে খাচ্ছে এই সিন্ডিকেট। ফলে জনগণ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে পকেটের টাকা খরচ করে ওষুধ কিনছেন। দীর্ঘ ১১ বছর ধরে দুর্নীতিবাজ ও মামলার আসামি বাইরের এক ঠিকাদারের লাইসেন্সের মাধ্যমে একটি সিন্ডিকেট কাজ পাইয়ে দিচ্ছে। ওই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে তত্ত্বাবধায়ক শর্তের বেড়াজালের পাশাপাশি বৈধ ঠিকাদারদের দরপত্র থেকে কাগজ সরিয়ে দিয়ে দরপত্র বাতিলের পাঁয়তারা করছেন। অবিলম্বে এই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করতে হবে।’ পরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে শহর প্রদক্ষিণ করেন বিক্ষোভকারীরা।
তবে বিক্ষোভকারীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন। তিনি বলেন, ‘তাদের (বিক্ষোভকারীদের) এমন দাবি ঠিক নয়। আমি বিধি অনুযায়ী টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি।’
অভিনব শর্তের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘অন্য হাসপাতালেও একই ধরনের শর্ত দেওয়া হয়েছে।’ গ্রুপভিত্তিক দরপত্রে ভিন্ন ভিন্ন জামানত চাওয়া হলেও সব দরপত্রের জন্য একই পরিমাণ ব্যাংক স্থিতি চাওয়া বিধিসম্মত কিনা এমন প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক। তবে বিক্ষোভকারীদের পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি তিনি নাকচ করে দেন।
দরপত্র মূল্যায়ন সম্পন্ন করে সর্বনিম্ন দরদাতাদের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান তত্ত্বাবধায়ক।