X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধ শেষের আগেই কুড়িগ্রামে উড়েছিল বিজয়ের পতাকা

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০৫

৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে কুড়িগ্রামকে হানাদারমুক্ত করেন। পুরো দেশজুড়ে স্বাধীনতা যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হলেও এই অঞ্চলে সেদিন উদিত হয় স্বাধীনতার সূর্য, বাতাসে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার পতাকা।

এই দিনে মুক্তিবাহিনীর কে ওয়ান, এফএফ কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকারের নেতৃত্বে ৩৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল বিকাল ৪টায় কুড়িগ্রাম শহরে প্রথম প্রবেশ করেন। এরপর তারা নতুন শহরের ওভারহেড পানির ট্যাংকের ওপরে (বর্তমান সদর থানার উত্তরে অবস্থিত) স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে চারদিকে ছড়িয়ে দেন বিজয়বার্তা। সেদিন বিজয় মিছিলে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানাতে হাজারো মুক্তিকামী মানুষ রাস্তায় নেমে এসে মিলিত হন জাতির সূর্য সন্তানদের সঙ্গে। ২৩০ দিন হানাদার বাহিনীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে মুক্ত হয় উত্তরের জনপদ কুড়িগ্রাম।

জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে কুড়িগ্রাম জেলা ছিল আটটি থানা নিয়ে গঠিত একটি মহকুমা। ১৯৭১ সালের ১০ মার্চ মহকুমা সংগ্রাম কমিটি গঠিত হয়। ১৭ মার্চ স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতারা চিলড্রেন পার্কে আনুষ্ঠানিকভাবে মানচিত্র আঁকা স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। ২৫ মার্চের কালরাতের পর সংগ্রাম কমিটি ২৮ মার্চ গওহর পার্ক (বর্তমান মজিদা কলেজ মাঠ) ময়দানে জনসভা করার পর বেসরকারি হাইকমান্ড গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে। ৩০ মার্চ রংপুরস্থ ইপিআর উইংয়ের সহকারী অধিনায়ক ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন কিছু সঙ্গী-সাথী নিয়ে কুড়িগ্রামে চলে আসেন। তারই নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ১ এপ্রিল থেকে তিস্তা নদীর পূর্বপাড়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। 

৪ এপ্রিল পাকবাহিনী দালালদের সহযোগিতায় তিস্তা নদী পার হয়ে লালমানিরহাট দখল করে নেয়। হানাদাররা ৭ এপ্রিল কুড়িগ্রাম শহরে প্রবেশ করে বর্তমান সার্কিট হাউজের সামনে অবস্থান নেয় এবং তৎকালীন কুড়িগ্রাম উপ-কারাগারে (বর্তমান জেলা কারাাগার) অতর্কিতভাবে হানা দিয়ে কারাগারের ইনচার্জ শেখ হেদায়েত উল্লাহসহ পাঁচ জন কারারক্ষীকে সার্কিট হাউজের সামনে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে। ২০ এপ্রিল পুরো কুড়িগ্রাম শহর দখল করে নেয় হানাদার বাহিনী।

এরপর থেকে দেশমাত্রিকাকে মুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হয়ে জুলাই মাস থেকে গেরিলা যুদ্ধ করেন। পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিচালনা করতে থাকে একের পর এক সফল অভিযান। ১৩ নভেম্বর উলিপুরের হাতিয়ায় পাকবাহিনী চালায় নৃশংস গণহত্যা। এদিন পাকবাহিনী পাঁচ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ (প্লাটুন কমান্ডার হীতেন্দ্র নাথ, শহীদ গোলজার, শহীদ কাচু, শহীদ নজির হোসেন ও শহীদ নজরুল ইসলাম) সাত শতাধিক নিরীহ মানুষকে দাগারকুটি বধ্যভূমিতে জড়ো করে হত্যা করে। 

১৪ নভেম্বর থেকে মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালিয়ে জেলার ভূরুঙ্গামারী, ২৮ নভেম্বর নাগেশ্বরী, ৩০ নভেম্বর সমগ্র উত্তর ধরলা এবং ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরসহ সমগ্র জেলা হানাদার মুক্ত করেন। এদিন পাকসেনারা দুপুর নাগাদ ট্রেনযোগে কুড়িগ্রাম ত্যাগ করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন কুড়িগ্রাম জেলার অর্ধেক অংশ ছিল ৬ নম্বর সেক্টর এবং বাকি অংশ ছিল ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে। ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রৌমারী ছিল মুক্তাঞ্চল। সেখানে চলতো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কুড়িগ্রামকে হানাদারমুক্ত করতে শহীদ হন ৯৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

যুদ্ধকালীন প্রায় অর্ধশতাধিক অপারেশনে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কুড়িগ্রামে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনে নেতৃত্বদানকারী কে ওয়ান, এফএফ কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক আব্দুল হাই সরকার বলেন, ‘স্বাধীনতার স্থপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণে গণতন্ত্রের পূর্ণাঙ্গ চর্চার মাধ্যমে গোটা জাতি প্রজন্মান্তরে মুক্তিযুদ্ধের সুফল ভোগ করুক। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাম্যবাদের বাংলাদেশ গড়ে তোলার অগ্রযাত্রায় মনোনিবেশ করবে—এটাই আমার চাওয়া।’

দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসন এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুড়িগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ড কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে জেলা শহরের কলেজ মোড়ের বিজয় স্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটির উদযাপনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। 

/এএম/
সম্পর্কিত
৭ দফা আবেদন করেও প্রশাসনের সহায়তা পায়নি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
আলাপচারিতায় ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও মানস ঘোষমুজিবনগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও সংবাদ সংগ্রহ
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা