সংবাদ প্রকাশের জেরে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ‘বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের’ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইমান আলী।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) উপজেলা পরিষদের স্মারক ও নিজ স্বাক্ষরে প্রেসক্লাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পাঠানো নোটিশে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে তাদের উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করার কথাও নোটিশে বলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) ‘বাংলাদেশ প্রেসক্লাব’ রৌমারীর সভাপতি সফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সাংবাদিক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত রবিবার একটি চক্রের ইন্ধনে স্থানীয় কিছু ব্যক্তি অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করার দাবি জানিয়ে উপজেলা প্রশাসন চত্বরে স্মারকলিপি দিতে এলে উপজেলা চেয়ারম্যান ইমান আলী তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার কয়েকজন সাংবাদিক সংবাদ প্রকাশ করেন। “রৌমারীতে অবৈধ ড্রেজার চালুর আশ্বাস দিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান” শিরোনামে কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রকাশের জেরে বাংলাদেশ প্রেসক্লাব রৌমারীর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন চেয়ারম্যান।’
সফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের না ডেকে তিনি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নোটিশ দিয়েছেন। একজন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সাংবাদিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার এখতিয়ার তার নেই। কাজেই তার নোটিশের জবাব কিংবা তার অফিসে উপস্থিত হতে আমরা বাধ্য নই। আমরা তার এমন কাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই।’
রৌমারী প্রেসক্লাবের সভাপতি সুজাউল ইসলাম সুজা বলেন, ‘একজন উপজেলা চেয়ারম্যান এভাবে সাংবাদিকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন না। তিনি প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দিতে পারতেন।’
চেয়ারম্যান ইমান আলী কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক কিংবা কোনও সাংবাদিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন চেয়ারম্যান।
তাকে এ ধরনের প্রশ্ন করায় তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আপনি প্রশ্ন করার কে? আমি উপজেলার অভিভাবক হিসেবে এটা করতে পারি।’
রৌমারীতে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে জানিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, ‘সাংবাদিকরা এসব নিয়ে নিউজ করেন না।’
আমার বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ প্রকাশ করা হয়ছে দাবি করে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা প্রকৃত সাংবাদিক কিনা তা জানতে আমি তাদের ডেকেছি। তারা প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দেবো বলে জানিয়েছি।’
তবে উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে সাংবাদিকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন কিনা তার কোনও সদুত্তর দেননি ইমান আলী। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার সাংবাদিকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, ‘একজন উপজেলা চেয়ারম্যান আইনগতভাবে এভাবে কাউকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে পারেন না। তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন।’