X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

গ্র্যাজুয়েট চাওয়ালা, মাসে আয় দেড় লাখ

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১০:০০আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৩, ২৩:১৬

চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় চায়ের দোকান দিয়েছেন তিন তরুণ। দোকানের নাম দিয়েছেন ‘গ্র্যাজুয়েট চাওয়ালা’। তারা দিনাজপুর এসআরএ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে জমে উঠেছে দোকানের বেচাকেনা। প্রতিদিন সর্বনিম্ন চার হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকার চা বিক্রি হয়।

দিনাজপুর গোর-এ-শহীদ বড় ময়দান মাঠের এক পাশে দোকানের অবস্থান। দোকানে গিয়ে দেখা গেলো এক তরুণ চা তৈরি করছেন, আরেকজন ট্রেয়ের মধ্যে চা সাজিয়ে ক্রেতাদের পরিবেশন করছেন। অপরজন ক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা বুঝে নিচ্ছেন।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বরে দোকান শুরু করেন। প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। দোকানে চার ধরনের চা পাওয়া যায়। এর মধ্যে গ্র্যাজুয়েট স্পেশাল চা (প্লাস্টিকের কাপ) ১৫ টাকা, গ্র্যাজুয়েট স্পেশাল ক্লে কাপ চা (মাটির কাপ) ২০ টাকা, হরলিক্স ও চকলেট চা ৩০ টাকা এবং জাফরান চা ৫০ টাকা। 

জমে উঠেছে দোকানের বেচাকেনা

তিন তরুণের নাম সুরুজ্জামান ইসলাম সুজন, সাইফুল ইসলাম ও মোজাহিদুল ইসলাম রানা। তারা জানিয়েছেন, চা দোকান শুরুর উদ্যোগটা সহজ ছিল না। পরিবারকে মানিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সমাজের লোকজনের নানা কথা শুনতে হয়েছে তাদের। তবে এখন অনেকে সাধুবাদ দিচ্ছেন।

সুরুজ্জামান ইসলাম সুজন জানান, প্রতিদিন দোকানে ৩৫০ থেকে ৪০০ কাপ চা বিক্রি হয়। হিসাবে সর্বনিম্ন চার হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার টাকা বিক্রি হয়। গড়ে দিনে ছয় হাজার টাকা বেচাকেনা হয়। তবে শুক্রবার ছুটির দিনে বিক্রি হয় সবচেয়ে বেশি। হিসাবে মাসে আয় দেড় লাখের বেশি।

চা পান করতে আসা দিনাজপুর শহরের বাসিন্দা নয়ামি দাস বলেন, ‘এই দোকানে এখন পর্যন্ত দুবার চা পান করেছি। দামের তুলনায় চায়ের স্বাদ অসাধারণ। আমি মনে করি চাকরির পেছনে না ছুটে এসব তরুণ যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অবিশ্বাস্য। কারণ অনেকে শিক্ষিত হয়ে চাকরির আশা করেন, কিন্তু পান না। সেদিকে না ছুটে তারা উদ্যোক্তা হয়েছেন।’

চা পান করছেন ক্রেতারা

সদর উপজেলার উলিপুর গ্রামের বাসিন্দা কৌশিক হোসেন বলেন, ‘আমার যখন মন খারাপ থাকে তখন গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে এসে বসে থাকি। প্রায় দুই মাস আগে হঠাৎ একদিন এসে দেখি গ্র্যাজুয়েট চা দোকান। নামটা অন্যরকম। তারপর একদিন চায়ের স্বাদ নিয়ে দেখি অসাধারণ। মনে হয়েছে তাদের চা-টাও গ্র্যাজুয়েট। এখানে মাটির কাপে চা পাওয়া যেতো না। এখন মাটির কাপে চা পান করছি। দাদা-দাদির কাছে শুনেছি, আগে মাটির কাপে চা বিক্রি হতো। এখানে চা পান করতে এলেই দাদা-দাদির কথা মনে পড়ে।’

বিরামপুর থেকে আসা বোরহান উদ্দীন বলেন, ‘বিরামপুর থেকে গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে ঘুরতে এসেছি। এসে পেলাম গ্র্যাজুয়েট চাওয়ালার দোকান। তাদের চা তৈরি ব্যতিক্রম। পান করে দেখলাম স্বাদ অসাধারণ।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষিত এসব তরুণের এমন উদ্যোগ ভালো লেগেছে। চাকরি না খুঁজে নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়েছেন। ভবিষ্যতে অন্যদের চাকরি দেবেন। একদিন নামিদামি রেস্টুরেন্ট দেবেন তারা—এমটাই প্রত্যাশা করছি।’

চা দোকানের এমন নাম দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুরুজ্জামান ইসলাম সুজন বলেন, ‘একটু ভিন্ন ধরনের চিন্তাভাবনা থেকে গ্র্যাজুয়েট চাওয়ালা নাম দিয়েছি। আকর্ষণ সৃষ্টি ও নিজেদের অবস্থান বোঝানোর জন্য মূলত এই নাম।’

চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হওয়ার আশায় চায়ের দোকান দিয়েছেন তিন তরুণ

শুরুটা অনেক কঠিন ছিল উল্লেখ করে সুজন বলেন, ‘শিক্ষিত হয়ে চা বিক্রির বিষয়টি পরিবার কোনোভাবে নিতে পারেনি। অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে পরিবারকে মানিয়েছি। এরপর ভেবেছি সমাজ বিষয়টিকে কীভাবে নেবে। কারণ সমাজের সবাই চায় শিক্ষিত হয়ে চাকরি করবে। সবাই ভাবে চা, বাদাম, ফুচকা ও ঝালমুড়ি বিক্রি শিক্ষিতদের কাজ নয়। নানা জনের নানা কথা উপেক্ষা করে আমরা যাত্রা শুরু করি।’

পড়াশোনা শেষ না হতেই চা দোকান দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সুজন বলেন, ‘আমরা তিন জনই শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত মানুষ বেকার। চাকরি খুঁজতে খুঁজতে অস্থির। তবু মিলছে না। এ অবস্থায় আমরা চাকরি খোঁজার চিন্তা বাদ দিয়েছি। ভেবেছি, চাকরি না খুঁজে যদি দেওয়ার চিন্তায় থাকি তবে অবশ্যই আমরা সফল হবো এবং একদিন চাকরি দিতে পারবো। এমন চিন্তাভাবনা থেকেই যাত্রা শুরু। বেচাকেনা যেভাবে বাড়ছে আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে কয়েকজনকে চাকরি দিতে পারবো।’

দোকানের নাম দিয়েছেন ‘গ্র্যাজুয়েট চাওয়ালা’

আরও অনেক ব্যবসা থাকতে চা বিক্রি কেন বেছে নিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে মোজাহিদুল ইসলাম রানা বলেন, ‘আমরা অনেকদিন ধরে কলেজের বড় ভাইদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। ভিন্ন কিছু করার কথা ভেবেছিলাম। যেহেতু বর্তমানে চাকরির সংকট সেহেতু অপেক্ষায় বসে থাকা যাবে না। আর এত শিক্ষিত মানুষকে সরকারের পক্ষে চাকরি দেওয়া সম্ভব না। এ অবস্থায় উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করি। সে ভাবনা অনুযায়ী দেখলাম, চায়ের খুব কদর আছে। এজন্য চায়ের দোকান দিয়েছি। প্রতিষ্ঠানটিকে ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড় করানোর ইচ্ছে আমাদের। বর্তমানে যে জায়গায় আছি আগামীতে বড় দোকান নিয়ে সেখানে কার্যক্রম চালাবো।’

এত মজার চা বানানো কোথায় শিখেছেন জানতে চাইলে সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কারও কাছ থেকে চা বানানো শিখিনি। তবে বিভিন্ন জনপ্রিয় চায়ের দোকানে চা পান করেছি। চা বানাতে কি কি লাগছে তা জেনে নিয়েছি। তখন জেনে এসে নিজেরাই প্রথমে তৈরি শুরু করি। প্রথম প্রথম ভালো হয়নি। পরে বানাতে বানাতে অন্যরকম সুস্বাদু হয়েছে। আমরা যেহেতু নিজেদের মতো করে চা বানাচ্ছি সেজন্য আমাদের চা অন্যদের চেয়ে ভিন্ন।’ 

/এএম/
সম্পর্কিত
রিসার্চে ‘ইয়াবা সিনড্রোম’ আর অনলাইন-নীলক্ষেতের প্রভাব
টক-ঝাল-মিষ্টি চা, দিনে বিক্রি ৩০ হাজার টাকা
ঈদে মাংস খেতে বছরজুড়ে সঞ্চয়!
সর্বশেষ খবর
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
গরমে রাস্তায় পানি ছিটানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
মাটি কাটার সময় বেরিয়ে এলো রাইফেল, গ্রেনেড ও মর্টারশেল
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
২৩ মিনিটে জামালকে তিন গোল দিয়ে সেমিফাইনালে পুলিশ
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
অতিরিক্ত সচিব হলেন ১২৭ কর্মকর্তা
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী 
উৎপাদন খরচ হিসাব করেই ধানের দাম নির্ধারণ হয়েছে: কৃষিমন্ত্রী