X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১
শত্রুতার জেরে হামলা

ধস্তাধস্তিতে শামুকের স্তূপে পড়ে আহত হন কবি রাধাপদ: প্রত্যক্ষদর্শী

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২:০৬আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ২২:০৬

কুড়িগ্রামের ‘চারণ কবি’ খ্যাত রাধাপদ রায়ের (৮০) ওপর হামলার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, শত্রুতার জেরে রাধাপদকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন রফিকুল। এরপর উভয়ের ধস্তাধস্তিতে শামুকের স্তূপে পড়ে আঘাত পান প্রবীণ এই পল্লিকবি। এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক কিংবা সাংস্কৃতিক কোনও বিরোধ দেখতে নারাজ এলাকাবাসী। সরেজমিন ডুবুরির ব্রিজ এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

হামলায় আহত রাধাপদ রায়ের দাবি, রফিকুল তাকে আকস্মিক বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। রফিকুলের বড় ভাই কদুর রহমানের সঙ্গে ছয় মাস আগের দ্বন্দ্বের জেরে তারই ইন্ধনে রফিকুল এই হামলা করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নের কচুয়ারপাড় গ্রামের ডুবুরির ব্রিজের কাছে কবির ওপর হামলা করেন ওই গ্রামের রফিকুল নামে এক দিনমজুর। এতে পিঠে ও ঘাড়ে আঘাত পেয়ে ওই দিনই নাগেশ্বরী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। পরে কবির ছেলে যুগল রায় বাদী হয়ে অভিযুক্ত রফিকুল ও তার বড় ভাই কদুর রহমানকে আসামি করে নাগেশ্বরী থানায় মামলা করেন। শত্রুতার জেরে এই হামলা বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। হামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিবাদে সোচ্চার হন নেটিজেনরা।

‘শত্রুতা’র জেরে সংঘটিত এ ঘটনাকে ‘সাম্প্রদায়িক’ ও ‘সংস্কৃতিবিরোধী’ হামলা হিসেবে প্রচার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। রাজনৈতিক রং দিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ারও অপচেষ্টা হয়। পুলিশ ও প্রশাসনিক তৎপরতায় গত ৪ অক্টোবর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন মূল অভিযুক্ত যুবক রফিকুল। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়।

এ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানতে ভিতরবন্দের কচুয়ারপাড় ডুবুরির ব্রিজ এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলেছেন এই প্রতিনিধি।

যে স্থানে হামলার শিকার হন কবি

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানান, ঘটনার দিন সকালে অভিযুক্ত রফিকুল তার অপর সঙ্গী নুর মোহাম্মদ, নুরনবী ও নওশাদসহ ডুবুরির ব্রিজের কাছের ডারায় মাছ ধরছিলেন। স্থানীয় আজিজুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন যুবক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে কাঁকড়া কুড়াতে আসেন রাধাপদ রায় ও তার গ্রামের সুবল চন্দ্র। রাধাপদ রফিকুলের মাছের পাতিল থেকে কাঁকড়া নিতে গেলে ঘটে বিপত্তি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শী জেলে নুরনবী বলেন, ‘সকালে রফিকুল আর আমার ভাতিজাসহ (নুর মোহাম্মদ) মাছ ধরি। তখন কাছুয়া দা (রাধাপদ) আসি কয়, হ্যা রে কাঁকড়া নাই রে? আমি কইলাম, দাদা আছে কাঁকড়া, এখনা দেরি কর। এ সময় রফিকুল আসিয়া কয়, মোর ভাইয়োক ডাঙাইস নাই! এলা আছসিস ক্যা। এই কথা কয়া একটা ধাক্কা দিছে। এ সময় কৃষ্ণদা (রাধাপদ) রফিকুলের কলার ধরি ফেলাইল। তখন রফিকুল দাড়ি ধরি দাদাক গডডে শামুকের ওপরা ফেলাইল। তখন আমরা যে পাঁচ সাতজন ছিলাম, আমরা আগে যায়া ওমাক সরে দিলাম। তখন দাদা উঠি রফিকুলক সাও (অভিশাপ) দিতে দিতে গেইল।’

রাধাপদের পিঠে আঘাতের চিহ্ন প্রশ্নে নুরনবী বলেন, ‘পিঠের মধ্যে শামুক দিয়া কাটা গেইছে। রফিকুল কোনও বাঁশ দিয়া মারে নাই। এটাই বাঁশ ছিল না।’ একই বর্ণনা দেন আরেক জেলে ও প্রত্যক্ষদর্শী নুর মোহাম্মদ।

দুই তিন মিনিটের মধ্যে আকস্মিক এই ঘটনা ঘটে বলে জানান ঘটনাস্থলে থাকা যুবক আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘কাঁকড়া নিতে গেইলে বড় ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের আক্রোশে রফিকুল কাকার দাড়ি ধরি ধাক্কা দেয়। দুই জনে রাস্তার নিচের শামুকের পালার (স্তূপ) ওপরে পড়ি যায়। উনি (রাধাপদ) খালি গায় থাকায় শামুক লাগি ওনার পিঠ কাটা গেইছে।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার সাক্ষী সুবল চন্দ্র (৫০) বলেন, ‘আমি মারতে দেখি নাই। খালি দেখলাম ধস্তাধস্তি। মুরুব্বি মানুষের সঙ্গে ওই অবস্থা দেখিয়া সবাই যায়া ওদেরকে ছাড়াছাড়ি করি দিছি। যা দেখি নাই তা বলতে পারবো না।’

এলাকাবাসী বলছেন, একজন বয়স্ক মানুষের গায়ে হাত দেওয়া ঠিক হয়নি। তবে বিষয়টা গ্রামে বসে ফয়সালা করা যেত।

ধস্তাধস্তিতে এই স্থানে শামুকের স্তূপের ওপর পড়ে আহত হন তিনি

ডুবুরির ব্রিজের ঠিক পশ্চিমে নিজ বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখেছিলেন গৃহবধূ সাবিনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘দুই জনের মধ্যে ধস্তাধস্তি হইছে। মুরুব্বি শামুকের মধ্যে পড়ি যায়া ক্ষত হইছে। যেটা সত্য সেটাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা দুজনই আমাদের গ্রামবাসী। কেউ শত্রু না। কারও পক্ষ বিপক্ষ নাই। এখানে বাড়াবাড়ির কিছু নাই। সত্য ঘটনা সেটা কিছুই না, মিথ্যা নিয়া তোলপাড়।’

রফিকুলের বড় বোন মাবিয়া খাতুন বলেন, ‘ছোট ভাই ভুল করছে। কদুর ওই জায়গায় আছিলো না। পরে জানার পর রফিকুলক ধরি মারছে। মুরুব্বিক দেখার জন্য ফল নিয়া হাসপাতাল গেইছে। ছোট ভাইয়ের হয়া ক্ষমা চায়া ফয়সালা করার কথাও বলি আসছে। রফিকুল মাছ মারি খায়। বাড়িত বউ বাচ্চাগুলা কাঁন্দিকাটি করি আছে।’

এদিকে রফিকুলকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে কুড়িগ্রাম পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রফিকুল দাবি করেছেন, ওই দিন তার মাছ রাখা পাতিল থেকে রাধাপদ রায় কাঁকড়া নেওয়ায় তিনি রাধাপদকে ধাক্কা দেন। এতে সেখানে থাকা বেশকিছু শামুকের ওপর পড়ে গিয়ে রাধাপদ আঘাত পান। তাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করার কথা রফিকুল অস্বীকার করেছেন।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যের বিষ‌য়ে রাধাপদ ব‌লেন, ‘তারা মিথ্যা বল‌ছেন। আমি কি তাহ‌লে মিথ্যা মামলা করেছি? আমা‌কে বাঁশের লাঠি দি‌য়ে দুই তিনবার মারছে। তারা সেটা দেখ‌লো না শুধু দা‌ড়ি ধরা দেখ‌লো!’ এই ব‌লে তি‌নি এক‌টি ক‌বিতাংশ শোনান, ‘চো‌রে চো‌রে মাইস্তা‌তো ভাই, সাধু লো‌কের কাই‌য়ো নাই।’

রাধাপদের দুই ছেলে মাধব রায় ও যুগল রায় বলেন, ‘বাবা বলেছেন, তিনি কাঁকড়া কুড়াচ্ছিলেন। এ সময় রফিকুল তাকে হঠাৎ বাঁশ দিয়ে মারতে থাকেন। পরে ধাক্কা দিলে তিনি শামুকের ওপর পড়েন।’ শত্রুতা থেকে রফিকুল এমনটা করেছেন বলেও দাবি করেন কবির এই দুই ছেলে।

/কেএইচটি/
সম্পর্কিত
কষ্টিপাথর কিনে প্রতারিত হয়ে অপহরণ, গ্রেফতার ৭
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
সর্বশেষ খবর
জন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
৩৫তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত উৎসবজন্ম আর মৃত্যুর সুরেলা মেলবন্ধনের প্রতিধ্বনি
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
দারুণ সেঞ্চুরিতেও রাব্বির কাছে ম্লান সাকিব
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা: স্টেশন মাস্টারসহ ৩ জন বরখাস্ত
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
খিলগাঁওয়ে ছাদ থেকে পড়ে যুবকের মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ