X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

৪ দিন ধরে দেখা নেই সূর্যের, কম্বলের জন্য হাহাকার

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:২৬আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৩১

‘চার দিন থাকি রইদ (রোদ) নাই। ঠান্ডার মধ্যে কামাইয়ো করবার পাই না। কষ্টে আছি। হামরা নদী এলাকার মানুষ। হামার কাইয়ো খোঁজও নেয় না। এতি কাইয়ো কম্বল-টম্বল ধরিও আইসে না। এই ঠান্ডাত কম্বল পাইলে ভালো হইল হয়।’ কনকনে ঠান্ডায় এভাবেই নিজেদের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদরের ভোগডাঙা ইউনিয়নের ধরলা নদী অববাহিকার চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রামের শ্রমজীবী নারী হাসনা বেগম।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বিকালে হাসনা বেগমের গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নদী তীরবর্তী গ্রামটিতে শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। হাসনা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ির আঙিনায় আগুন জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন। মৃদু বাতাসে আগুনের ধোঁয়া সদস্যদের চোখে লাগছিল। কিন্তু সেই কষ্ট সহ্য করে ঠান্ডায় কাবু মানুষগুলো আগুনের পরশ ছেড়ে উঠছেন না।

শুধু হাসনা বেগমের চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রাম নয়, গত কয়েকদিন ধরে গোটা জেলাজুড়ে শীতের প্রকোপ বাড়ায় নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন লাখো মানুষ। মানুষের সঙ্গে কষ্ট বেড়েছে গবাদিপশুরও। গত চার দিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় এবং ৭-৮ কিলোমিটার বেগে হিমেল হাওয়ার প্রবাহ অব্যাহত থাকায় কষ্টের মাত্রা বহুগুণে বেড়েছে।

রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, শুক্রবার দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে।

দুই তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে জানিয়ে সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘বৃষ্টির পর ঠান্ডার মাত্রা কিছুটা কমতে পারে। তখন আকাশে থাকা মেঘও কেটে গিয়ে রোদের দেখা মিলবে।’  

এদিকে মানুষের কষ্ট লাগবের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ শুরু হয়েছে। তবে সেসব কম্বল প্রান্তিক মানুষজনের কাছে কতটা পৌঁছাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করেছেন সুবিধা প্রত্যাশীরা।

রাতে সদরের পাটেশ্বরী বাজারে শ্রমজীবীদের ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা

শ্রমজীবী নারী হাসনা বেগমসহ চর মাধবরাম গ্রামের একাধিক ব্যক্তি দাবি করেছেন, নদী তীরবর্তী প্রান্তিক এলাকা হওয়ায় তাদের কাছে এসব কম্বল পৌঁছায় না। কেউ তাদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে এলাকায় যান না। ফলে তারা এই হাড়কাঁপা ঠান্ডাতেও কষ্ট করে জীবন যাপন করছেন। তাদের শীতবস্ত্র প্রয়োজন। পাওয়া গেলে তাদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

চর মাধবরাম পশ্চিমচর গ্রামের আরেক বাসিন্দা দিনমজুর হুজুর আলী এমনটাই জানলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এইদিকে খুব শীত। সেই রকম ঠান্ডা। গরম কাপড়চোপড় নাই। ঠান্ডার জন্য কাজ কামায় কিছু করবার পারতেছি না। আমরা খুব কষ্টে আছি। কাপড়চোপড় পাওয়া গেলে কিছু ঠান্ডা নিবারণ করা গেইলো হয়। কিন্তু আমাদের এইদিক কেউ কম্বল নিয়া আইসে না। সরকারি সাহায্যও পাই না।’

হাসনা বেগম ও হুজুর আলীর দাবির সত্যতা মেলে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমানের তথ্যে। চেয়ারম্যান বলেন, ‘ওই গ্রামে শুধু নয়, ইউনিয়নের অনেক হতদরিদ্র  শীতার্ত মানুষ কম্বল পায়নি। আমার এলাকায় অন্তত আড়াই হাজার শীতবস্ত্র প্রয়োজন। কিন্তু সরকারিভাবে পেয়েছি মাত্র সাড়ে তিনশ। তারা কম্বল পাবেন না এটাই স্বাভাবিক।’

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা জানায়, চলমান শীতে প্রায় ৬৩ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা বিতরণ চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও শীতার্ত মানুষের গৃহসংস্কারের জন্য টিন এবং খাদ্য সহায়তার জন্য শুকনো খাবার রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো বিতরণ করা হবে।

প্রান্তিক এলাকার মানুষের কাছে শীতবস্ত্র না পৌঁছানোর খবরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘আমরা গ্রামের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র পৌঁছানো নিশ্চিত করছি। চর মাধবরামসহ যে এলাকায় এখনও শীতবস্ত্র পৌঁছায়নি সেখানে দ্রুত পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

এ ছাড়াও শীতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা বিতরণসহ মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।

/এফআর/
সম্পর্কিত
বইছে শৈত্যপ্রবাহ, কেমন যাবে পুরো সপ্তাহ?
তিস্তার বাঁধ ভেঙে শীতকালেও বন্যা, পানির নিচে পেঁয়াজ-আলু-ভুট্টা
স্টেপিং-স্টোন ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী