কুড়িগ্রামের রৌমারীতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন আয়োজিত কৃষক সমাবেশে হামলার অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রবিবার (০১ ডিসেম্বর) রাতে সংগঠনের জেলা শাখার সেক্রেটারি মাওলানা নিজাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার দুপুরে রাজধানীর তোপখানা রোডে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা বলেছেন, কৃষক সমাবেশে হামলার বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। তারা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার কৃষক সমাবেশে পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় জামায়াতে ইসলামী হামলা চালায়। হামলায় আহত হন দলের ন্যায়পাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য, রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক এবং শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান উকিল রায়হান কবীর, প্রধান অতিথি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ট্রাস্টি নাহিদ হাসান, বাংলাদেশ ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির উদ্দিন ও স্থানীয় সংগঠক সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানসহ আরও কয়েকজন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, যে সময় দেশের প্রয়োজন ছিল গণঐক্য নিশ্চিত করে সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়া, সে সময় পরিকল্পিতভাবে প্রশাসন ও পুলিশের ছত্রচ্ছায়ায় জামায়াতের নেতা-কর্মীদের এ হামলা ভিন্ন বার্তা দেয়। নিশ্চিতভাবে পরিচয় জানার পরও শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী রায়হান কবীরের ওপর হামলা ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা পরিপন্থি।
জেলা জামায়াতের প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জামায়াত-শিবিরের হামলায় কৃষক সমাবেশ পণ্ড শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদটি আমাদের দৃষ্টিগোচরে আসার পর থেকে আমরা মর্মাহত হয়ে সংবাদের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে জড়িয়ে ভিত্তিহীন যে সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী এবং ছাত্রশিবিরের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার যে অপচেষ্টা করা হয়েছে, আমি তার নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন মিথ্যা, ভিত্তিহীন অপপ্রচারমূলক সংবাদ প্রচার ও প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে সবার প্রতি অনুরোধ করছি।
হামলার ঘটনার সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রতিবাদ বার্তায় জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি দাবি করেছেন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে কৃষক সমাবেশে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের দূরতম কোনও সম্পর্ক বা সম্পৃক্ততা নেই।
প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দায় চাপানো হচ্ছে জামায়াতের ওপর।
এদিকে জামায়াতের রৌমারী উপজেলার নেতৃবৃন্দ আরেকটি প্রতিবাদলিপি দিয়ে বলেছেন, কৃষক সমাবেশে হামলার ঘটনায় জামায়াত কিংবা শিবিরের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। মূলত শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে রৌমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। বিকাল ৫টার দিকে উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইউএনও, ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপারের (রৌমারী সার্কেল) অপসারণসহ হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। তা একেবারেই সংকীর্ণ মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। ওই সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ হাসান নলেজ অভিযোগ করে বলেছেন, পুলিশের আচরণ দেখে মনে হয়েছে, তারা আগে আওয়ামী লীগের কথা শুনতেন এখন জামায়াত-শিবিরের কথা শুনছেন। তাহা সঠিক কথা নয়।
এই প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশি-বিদেশি চক্রান্তের মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে গত শুক্রবার রৌমারী উপজেলায় কৃষক সমাবেশের ব্যানারে রাষ্ট্র সংস্কারের নামে একটা সমাবেশের ডাক দেয়। যেখানে সরকার নিজেই রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্কারের কাজে ব্যস্ত, সেখানে হঠাৎ গজে ওঠা ভুঁইফোড় একটা সংগঠন রাষ্ট্র সংস্কারের ডাক দেয়। যেখানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কাউকে দেখা যায়নি। বরং ফ্যাসিবাদী সরকারের অনেক দোসরকে দেখা যায়। যেটাকে সুস্পষ্টভাবে মনে হয়েছে, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনও ষড়যন্ত্রের ডাক। তাই স্থানীয় সাধারণ জনতা নিজেরাই প্রতিহতের ঘোষণা দেয়। পরবর্তীতে এ ঘটনায় জামায়াত ও শিবিরের নাম জড়িয়ে অপপ্রচারের হীন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। রৌমারী উপজেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
জামায়াতের রৌমারী উপজেলা শাখার আমির হায়দার আলী বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন যে কৃষক সমাবেশের আয়োজন করেছিল, তার কোনও প্রশাসনিক কিংবা পুলিশের অনুমতি ছিল না। বাস্তবতা হলো কৃষক সমাবেশের আড়ালে সেখানে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত লোকজন সংগঠিত হয়েছিল। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা সেখানে বাধা দিয়েছে। জামায়াত বা শিবির সে ঘটনায় কোনোভাবে জড়িত নয়।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের কাছে প্রশ্ন রেখে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘তারা দাবি করেছেন হামলায় চার-পাঁচ জন আহত হয়েছেন। হামলা কিংবা হামলায় আহত হয়ে থাকলে আয়োজক ও নেতৃবৃন্দ তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করলেন কীভাবে? আহত হয়ে থাকলে তাদের তো চিকিৎসা নেওয়ার কথা। মূলত তারা নিজেদের আওয়ামী সংশ্লিষ্টা ঢাকতেই জামায়াতের ওপর ঢালাও অভিযোগ তুলেছেন।’
তবে ঘটনার দিন বিকালে রাষ্ট্র সংস্কারের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক এবং শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী রায়হান কবীর বলেছেন, আমাদের পূর্বনির্ধারিত কৃষক সমাবেশ ছিল। পুলিশ স্টেজ ও সামিয়ানা সরিয়ে দেয়। সমাবেশস্থলের কাছে জামায়াত-শিবির পরিচয়ে কয়েকজন যুবক এসে সমাবেশ করতে নিষেধ করে। এতে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। কিল-ঘুষি ও লাথি মারে। আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনু, ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি নাহিদ হাসানসহ আমাকে মারধর করে।’
সামাবেশকে রাষ্ট্রবিরোধী দাবি করে শেখ ফরিদ বলেন, ‘ সেখানে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত লোকজন উপস্থিত হয়েছিল। কোনও কৃষক ছিল না। কৃষকদের নাম করে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসন করার প্রস্তুতি চলছিল।’
তবে হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, ‘হামলা নয়। সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।’
সমাবেশ নিয়ে জামায়াতের বিরোধিতার প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘তারা (জামায়াত) বলেছিল যে এই সমাবেশের আয়োজকরা আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। এজন্য সমাবেশ নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল।’