লালমনিরহাট শহরে ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীর মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন ২২ জন নারী-পুরুষকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ২১ জন নারী এবং একজন পুরুষ। আটককৃতদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় সদর থানায় শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত আটটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত লালমনিরহাট রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত তাফসিরুল কোরআন মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সদর থানায় মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনায় আটটি জিডি করেন ভুক্তভোগীরা। পুলিশ বলছে, জিডির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট রেলওয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে ‘ইসলামিক সোসাইটি’ নামের একটি সংগঠন। মাহফিলের সময় দেওয়া ছিল সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। দুপুর ২টার দিকে বক্তব্য শুরু করেন মাহফিলের প্রধান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও আরও তিনটি জায়গায় প্রজেক্টরের মাধ্যমে মাহফিল শোনানোর ব্যবস্থা রাখা হয়। এর মধ্যে নারীদের জন্য লালমনিরহাট স্টেডিয়াম, কালেক্টরেট মাঠ ও রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। এতে বিভিন্ন জায়গায় জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরনবী বলেন, ‘বিকাল থেকে ভুক্তভোগীরা থানায় জিডি করতে আসেন। শহরের চারটি পৃথক জায়গায় মাহফিল উপলক্ষে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটেছে। পুলিশের তৎপরতা ছিল। এরপরও ভিড়ের মধ্যে মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনা ঘটেছে। ইতিমধ্যে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। আটকদের বাড়ি সিলেট, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।’
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) এ. কে. এম ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে, তাদের ২১ জনই নারী। মূলত একটি চক্র মাহফিলকে টার্গেট করে বিভিন্ন জেলা থেকে নারীদের এনে মোবাইল ও স্বর্ণালঙ্কার চুরির ঘটনা ঘটায়। তাদের নামে মামলার প্রস্তুতি চলছে।’
মাহফিলের আয়োজক ইসলামিক সোসাইটির চেয়ারম্যান খালিদ সাইফুল্লাহ জানান, মাহফিল ঘিরে এক বা একাধিক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা ভিড়ের সুযোগে চুরিসহ অপকর্মে লিপ্ত হয়। যাদের অধিকাংশ লালমনিরহাটের বাইরের জেলা থেকে এসেছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভিড়ের মধ্যে নিজের মোবাইল খোয়ান সদর উপজেলার গবাই গ্রামের মো. রহিম বাদশা ও কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার টুপামারি গ্রামের মফিজুল হক। তারা জানান, মোবাইল হারানোর ঘটনায় থানায় জিডি করেছেন। সংঘবদ্ধ একটি চক্র এসব ঘটনা ঘটিয়েছে।
সদরের বাসিন্দা আবু নাশের বিপ্লব বলেন, মাহফিলে ভিড়ের মধ্যে আমার মোবাইলটি চুরি হয়ে গেছে। আমি থানায় জিডি করতে এসেছি।
মাহফিলের আয়োজক কমিটির কো-অর্ডিনেটর রায়হান রাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠুভাবে মাহফিল আয়োজনের চেষ্টা করেছি। এরপরও এই ধরনের চুরির ঘটনা দুঃখজনক।’