রংপুরে কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় চলছে ভয়াবহ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। সরকার নির্ধারিত দাম থাকলেও তা মানছেন না আড়তদাররা। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করে তাদের ‘পানির দামে’ চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মাত্র ৫ জন আড়তদার সিন্ডিকেট গড়ে পুরো রংপুর অঞ্চলের চামড়ার বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে চামড়ার প্রকৃত মূল্য না পেয়ে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। তদারকির অভাবে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর হয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
সরকার প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করলেও আড়তদাররা সেটি মানছেন না। ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকালে রংপুর নগরীর শাপলাচত্বরের চামড়া পট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী ট্রাক, রিকশা ও অটোভ্যানে করে চামড়া নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আড়তদাররা ৪০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫৫০ টাকায় প্রতিটি গরুর চামড়া কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
রংপুরের সিও বাজার থেকে শতাধিক চামড়া নিয়ে আসা মৌসুমি ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া বলেন, ‘প্রতিটি মাঝারি গরুর চামড়া ১,০০০-১,২০০ টাকা ও বড় গরুর চামড়া দেড় থেকে ২ হাজার টাকা দরে কেনা উচিত। আমি গড়ে ৮০০ টাকায় কিনেছি। পরিবহন ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে খরচ দাঁড়িয়েছে ৮৫০-৮৭০ টাকা। কিন্তু আড়তদাররা বলছেন, ৫০০ টাকার বেশি দামে কিনবেন না।’
মর্ডান মোড়ের ব্যবসায়ী আঞ্জু মিয়া বলেন, ‘আমি ৬০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছি, আড়তদাররা সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা দিতে রাজি। এভাবে আমাদের বিশাল ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।’
বাস টার্মিনাল এলাকার রোস্তম আলী ও পালিচড়ার মমতাজ একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, চামড়ার আকার ও গুণমান বিবেচনায় না নিয়ে মাঝারি চামড়া ৩০০-৪০০ এবং বড় চামড়া ৫০০-৫৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বলছেন আড়তদাররা। এ অবস্থায় তারা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
চামড়া বাজারের এই নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ ব্যবসায়ীদের।
রংপুর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. সালাম বলেন, ‘একটি সিন্ডিকেট তাদের মনোপলি দিয়ে ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করছে। সরকারের নির্ধারিত মূল্য কার্যকর করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এবারে রংপুর মহানগরী ও জেলায় প্রায় ২ লাখ গরু ও প্রায় এক লাখ খাসি কোরবানি দেওয়া হয়েছে। অথচ এই বিশাল চামড়া বাজারে কার্যকর কোনও মনিটরিং ছিল না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পক্ষ থেকেও তৎপরতা না থাকায় বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য ঠেকানো যায়নি।
রংপুরের চামড়া আড়তদার মকবুল হোসেন বলেন, ‘চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ প্রতিটি চামড়ায় ৪০০-৫০০ টাকা খরচ পড়ে। তাই সরকারের নির্ধারিত দামে চামড়া কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।’