নতুন করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলেও কুড়িগ্রামে এই ভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার কোনও কিট নেই। এমনকি নমুনা পরীক্ষাকারী স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষা সরঞ্জামও নেই। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন অফিস এবং কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস ও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সিভিল সার্জন অফিস ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, কোভিড-১৯ সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার কিটসহ যেসব সরঞ্জাম কুড়িগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগে মজুত রয়েছে সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এসব সরঞ্জাম দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। এতে সঠিক ফল যেমন পাওয়া যাবে না তেমনি নমুনা সংগ্রহকারী স্বাস্থ্যকর্মীর সংক্রমণ ঝুঁকিও থাকবে।
সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে কিট ও অন্য সরঞ্জামের চাহিদা চাওয়া হয়েছে। জেলা থেকে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও কোনও সরঞ্জাম জেলায় এসে পৌঁছায়নি।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতাল চত্বরে পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন) ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। তবে শুধু অবকাঠামো (ভবন) দাঁড়িয়ে আছে। এতে নমুনা পরীক্ষার যন্ত্রাংশ ও জনবল নেই। ল্যাবটি চালু করা হলে এতে নিরাপদ ও সঠিকভাবে নমুনা পরীক্ষা করা সম্ভব হবে।
হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘করোনা টেস্ট কিটসহ অন্য সরঞ্জামের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক নতুন করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।’
পিসিআর ল্যাব প্রশ্নে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘ল্যাবের অবকাঠামো প্রস্তুত হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও যন্ত্রাংশ ও জনবল নেই। কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও জনবল দিলে ল্যাবটি চালু করা যাবে।’
সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নমুনা পরীক্ষার কিট নেই। নতুন করে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। ঈদের ছুটিতেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলার ৯ উপজেলাতেই নমুনা পরীক্ষাসহ অন্য সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআর,বি) জানিয়েছে, বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট, তবে এটি এখনও আশঙ্কার বড় কারণ নয়।
আইসিডিডিআর,বি জানায়, বাংলাদেশে ওমিক্রনের (ভাইরাস) দুটি নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি ও এক্সএফসির আবির্ভাব হয়েছে, যা সম্প্রতি কোভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। এই বছরের এপ্রিলে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শনাক্ত হওয়া এই জেএন.১ গ্রুপের ভ্যারিয়েন্ট এখন বেশ কয়েকটি অঞ্চলে শনাক্ত করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, এই বছরের মে মাসে কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনা, যশোর, সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও দিনাজপুরে অবস্থিত আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালভিত্তিক ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিল্যান্স স্টাডি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে এই ভ্যারিয়েন্ট ৭ শতাংশ ছিল।
আতঙ্কিত হওয়ার কারণ না থাকলেও আইসিডিডিআর,বি পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটি পরামর্শ হিসেবে বলেছে, সুরক্ষিত থাকুন, অসুস্থ লাগলে বাড়িতে থাকুন। এ ছাড়া টিকা নিন, বিশেষত যদি বয়স্ক বা ইমিউনোকম্প্রোমাইজড বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়। জনাকীর্ণ স্থানে মাস্ক পরুন, নিয়মিত আপনার হাত ধুয়ে নিন বা স্যানিটাইজ করুন।
এদিকে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে।