X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

মনু ও ধলাই বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে বানভাসি মানুষ

সাইফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
১০ জুলাই ২০১৮, ১৭:১১আপডেট : ১০ জুলাই ২০১৮, ১৭:১১

মনু ও ধলাই বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে বানভাসি মানুষ মৌলভীবাজার জেলায় নতুন করে বন্যা আঘাত হানায় মনু, ধলাই ও কুশিয়ারার বানভাসি মানুষের আতঙ্ক কাটছে না। কারণ ক্ষতিগ্রস্ত সবকটি বাঁধ এখনও ভালোভাবে মেরামত করা হয়নি। ফলে অনেকেই এখনও বাড়ি না ফিরে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপরই আশ্রয় নিয়েছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, ৪ হাজার ৪২৬ মিটার নদীর মূল বাঁধ বন্যার তোড়ে ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্ত অথবা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ নিরূপণে জরিপকাজ এখনও চলছে।
মনু ও ধলাই নদীর তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘদিন নাব্যতা হ্রাস হওয়ায় নদী খনন ও প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত না হওয়ায় এই সংকট তীব্র হচ্ছে। আর এ কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বন্যা আতঙ্কে তাদের থাকতে হয় উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। তাদের সঙ্গে অনেকটা একমত পোষন করে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাও বলছেন, বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে নদী খনন ও পরিকল্পিত স্থায়ী বাঁধের প্রয়োজন।
গত ২৯ জুন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী তীরবর্তী এলাকা পরিদর্শনে আসেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি মো. মাহফুজুর রহমান ও প্রধান প্রকৌশলী (উত্তর পূর্ব অঞ্চল) মো. জুলফিকার আলী হাওলাদার। তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং এই সমস্যা সমাধানে স্থায়ীভাবে নানা পদক্ষেপ ও পরিকল্পনার কথা বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেন। মনু ও ধলাই বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে বানভাসি মানুষ
গত বছর চৈত্র মাসের অকাল বন্যা ও দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হন জেলার হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওরের তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। এ বছরও একই অবস্থা জেলার মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকায়। হঠাৎ উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে নদীগুলোর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও মৌলভীবাজারের ২টি পৌরসভা ও প্রায় ৪৩টি ইউনিয়নের ৪ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন।
আকস্মিক বন্যায় ঘরবাড়ি, ক্ষেতকৃষি, মৎস্য খামার সব হারিয়ে নিঃস্ব হন নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। বন্যার পানির তোড়ে প্রাণ হারান ১০ জন।
মনু নদীর তীরবর্তী কুলাউড়ার শরীফপুর এলাকার একাধিক গ্রামের বাসিন্দারা নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর এখনও আশ্রয়ে আছেন। এর কারণ হিসেবে তারা জানান, নদীর ভাঙা বাঁধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ এখনও মেরামত না করায় তারা বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। এই ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফের বন্যার আশঙ্কা তাদের। একই অবস্থা ধলাই, মনু ও কুশিয়ারা তীরবর্তী অনান্য এলাকার বাসিন্দাদের। তারা জানান, বাঁধ মেরামত না হওয়ায় বন্যা নিয়ে এখনও তাদের উদ্বেগ উৎকণ্ঠার শেষ নেই।
মৌলভীবাজারে মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের ৩৮টি স্থান ভাঙলেও জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড এই পর্যন্ত ১৮টি ভাঙন স্থানে বাঁধ তৈরি শুরু করেছেন। আর অবশিষ্ট ২০টি বাঁধ মেরামতের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হলেও এখনও কাজ শুরু হয়নি। তবে খুব শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে তারা আশ্বাস দিচ্ছেন।

কুলাউড়া শরীফপুর ইউনিয়নের নজরুল ইসলাম, তাজুল ইসলাম, কামরুল ও সুমন মিয়ার দাবি, প্রতি বছর বন্যায় হাজার কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ভাঙা অংশসহ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ পরিকল্পনা অনুযায়ী স্থায়ীভাবে নির্মাণ ও মেরামত করা হয়।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মনু, ধলাই ও কুশিয়ারা নদী ভেঙে যাওয়া ৩৮টি স্থানে বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। স্থানগুলো হলো- কুলাউড়ার শরীফপুরের চাঁনপুর, তেলিবিল-১, তেলিবিল-২, তেলিবিল-৩, চাতলাপুর ব্রিজ, ইটারঘাট, রনচাপ-১, রনচাপ-২, পৃথিমপাশার কলিরকোনা, ডেমরার বাঁধ, বেলেরতলসহ ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে বাঁধ মেরামতের কাজ করা হচ্ছে ও হবে। এতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে চার কোটি টাকা।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শহরের বারইকোনা হলদিগুল ও কালাইগুল বাঁধ মেরামত কাজ শেষ। ২/৩টি বাঁধ ছাড়া সবকটি বাঁধের কাজ চলছে। ১৮টি স্পটে কাজ আশা করি কয়েকদিনের মধ্যে শেষ হবে। আর বাকি ২০টি স্থান বাঁধের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। অল্পদিনের ভেতরে সেসব কাজ করারও জোর প্রচেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে এসব কাজের আনুমানিক ব্যয় সাড়ে চার কোটি টাকা ধরা হয়েছে।’ মনু ও ধলাই বাঁধ নিয়ে আতঙ্কে বানভাসি মানুষ
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘গত বছর যেসব স্থানে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছিল সবগুলো ভাঙন মেরামত করা হয়েছিল এবং এসব স্থানে নতুন করে কোনও ভাঙন দেখা দেয়নি। শুধু চাতলাপুর ব্রিজ এলাকায় ভাঙন ছাড়াও এবার সবগুলো ভাঙন নতুন। চাতলাপুর ব্রিজ এলাকায় মনু নদীর যে ভাঙন দেখা দিয়েছে এই এলাকায় মনু নদীর চর না কাটলে এই ভাঙন রোধ করা যাবে না।’
নদী খননের বিষয়ে রণেন্দ্র বলেন, ‘৮/১০ বছর আগে সর্বপ্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে নদীর ড্রেজিংয়ের গুরুতপূর্ণ বিষয়টি। নদীর নাব্যতা বাড়াতে হলে ড্রেজিং করতে হবে। নদী বাঁচলে আমরা বাঁচবো সে বিষয়টি মানুষের মাথায় এখনও আসেনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি মেঘনা ও পদ্মা নদীর কথা চিন্তা করি তাহলে ধলাই ও মনু নদী খুবই ছোট। কিন্তু এই মনু ও ধলাই নদীতে পলি পড়তে পড়তে এখন বিপদজনক নদী হয়ে গেছে। এখন কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সরকারের উচ্চ মহল চিন্তা করছে মনু নদী ড্রেজিং হওয়া খুব জরুরি। এখন হয়তো হবে। আমাদের পানি উন্নয়নের বোর্ডের টেকনিক্যাল টিম ঢাকা থেকে এসে পরিদর্শন করেছে। শুধু ড্রেজিং করলেতো হবে না, ড্রেজিংয়ের মাটিতে কোথায় ফেলতে হবে এটাও গুরুতপূর্ণ বিষয়। প্রায় ৭৬ কিলোমিটার মনু নদী খনন করে যে পরিমাণ পলি বের হবে, ম্যানেজমেন্ট যদি মাটি না ফেলতে পারে তাহলে নদী ড্রেজিং গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। এজন্য টেকনিক্যাল টিম সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন। তারা নদীর প্রস্থতা বাড়ানো, বাঁধ উঁচু করা ইত্যাদি নিয়ে রিপোর্ট করবে। রিপোর্টের আলোকে প্রকল্প নেবো। প্রকল্প অনুমোদন হলে কাজ বাস্তবায়ন হবে।’

মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে নদী খনন ও বাঁধ মেরামত না করায় জেলার গ্রাম ও শহর নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এবার স্থায়ীভাবে বাঁধ মেরামত করা হয় এবং নদী খনন করা হলে মানুষের দুর্ভোগ থেকেই যাবে।’
এদিকে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মো.তোফায়েল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যায় জেলায় ৪৩টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভায় মোট ৬৩ হাজার ৪৫টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। লোক সংখ্যা ৩ লাখ তিন হাজার ৪৭৯ জন। জেলায় নিহত হয়েছেন ৮ জন। জিআর টাকা ২৯ লাখ ৭৭ হাজার। জিআর চাল ১৫৮১ মেট্রিক টন ও শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে ৫ হাজার প্যাকেট। ২৬টি বাঁধ ভেঙে গেছে। ১ হাজার ৪৬০ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ফসলি জমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বন্যাকবলিত উপজেলার অনুকূলে ১ হাজার ৬২ বান্ডেল ঢেউটিন ও ৩১ হাজার ৮৬ লাখ টাকা উপ-বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।’

/এআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত
যৌথ বাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কেএনএফ সন্ত্রাসী নিহত
ব্রিটিশ নিশানায় হামলার হুমকি রাশিয়ার
ব্রিটিশ নিশানায় হামলার হুমকি রাশিয়ার
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘এ’ ইউনিটের প্রথম মেধাতালিকা প্রকাশ
হার চোখ রাঙালেও সিরিজ জিতলো বাংলাদেশই
হার চোখ রাঙালেও সিরিজ জিতলো বাংলাদেশই
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা