X
রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫
২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যেভাবে গঠিত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড

এস এম আববাস
১০ নভেম্বর ২০২১, ১১:২৭আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, ১৫:২৬

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আদলে সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন করবে সরকার। এই বোর্ডের অধীনে প্রাথমিক স্তরের (পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত) শিক্ষার্থীদের শিখন মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা, জাতীয়ভাবে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন, পরিবীক্ষণ, গবেষণা ও সার্বিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনার গুণগত মানোন্নয়ন করা হবে। এই লক্ষ্য পূরণে ‘প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইন, ২০২১ এর খসড়া তৈরি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।  তবে ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এর বাইরে থাকবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা এখন পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত। সে হিসেবে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড আইনে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এই বোর্ডের আওতায় থাকবে। ’ ইবতেদায়ি এই বোর্ডের অধীনে থাকবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা আইনে (খসড়ায়) সাধারণ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা—এই তিনটি ধারা।  সে কারণে ইবতেদায়ি এই বোর্ডের অধীন থাকবে না। তাছাড়া ইবতেদায়ি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়।’  

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় বিগত কয়েক বছরে ২৫ লাখের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়।  শিক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের বিভিন্ন কাজে প্রতিবন্ধকতা ও ধীরগতি দেখা দেয়। দ্রুত ফল প্রকাশের জন্য অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দৌড়াতে হয় পরীক্ষা ও ফলের পেছনে।  এ কারণে প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর শিক্ষা বোর্ড আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।  এরপর বোর্ড স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে এক বছরের বেশি সময় পর গত ৭ নভেম্বর আইনের খসড়াটি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরে পাঠানো হয় মতামত ও সুপারিশের জন্য। আগামী ২৫ নভেম্বরের মধ্যে খসড়াটির ওপর মতামত ও সুপারিশ পাঠাতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরকে অনুরোধ জানানো হয়।

আইনের খসড়ায় বলা হয়, একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বোর্ডের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জনের ক্ষমতা থাকবে। বোর্ডের অনুমোদনে সম্পত্তি হস্তান্তরের চুক্তি করা এবং এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণ, অন্যান্য কার্যক্রম সম্পাদনের ক্ষমতা থাকবে। তবে স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ও বিক্রির আগে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে।

এই আইনের অধীনে বিধান অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার সংগঠন, শিক্ষা ব্যবস্থাপনা, তত্ত্বাবধান, পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নের জন্য চাহিদাভিত্তিক প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন, স্থানান্তর বা বিলুপ্ত করতে পারবে। প্রাথমিক শিক্ষা সার্বিক মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান, পরিচালনা ও উন্নয়নের ক্ষমতা থাকবে বোর্ডের। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। দেশের অভ্যন্তরে যেকোনও স্থানে এক বা একাধিক বোর্ড স্থাপনে সরকারের অনুমোদন নিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদ গঠন

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ করবে সরকার। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদাধিকার বলে পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকবেন। এছাড়া পরিচালনা পর্ষদে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ শিশু অ্যাকাডেমির মহাপরিচালক, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো মহাপরিচালক, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিবের নিয়ে নয়), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিবের নিচে নয়), লেজিসলেটিভ বিভাগের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিবের নিচে নয়), প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (যুগ্ম-সচিবের নিচে নয়), মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান সদস্য হিসেবে থাকবেন। এছাড়া সরকারি মনোনীত তিন জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বোর্ডের দুই জন পরিচালক, (একজন শিক্ষা পরিসংখ্যান ও মূল্যায়ন বিশেষজ্ঞ) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক কর্তৃক মনোনীত একজন পরিচালক সদস্য হিসেবে থাকবেন। প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব এই বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব থাকবেন।

প্রাথমিক শিক্ষা বোর্ডের কাজ

প্রাথমিক শিক্ষায় সুষ্ঠু মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে নীতি, পরিকল্পনা ও গাইডলাইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করবে বোর্ড। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম সম্পাদনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সঙ্গে কাজের সমন্বয় করবে। প্রাথমিক শিক্ষার সুষ্ঠু মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে বিষয়ভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রক্রিয়াজাত করবে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার যাবতীয় কার্যাবলী সম্পাদন করবে বোর্ড। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে পরীক্ষা কেন্দ্র ও ভেন্যু অনুমোদন, শিক্ষার্থী অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান বিভাজন, ডেসক্রিপটিভ রেজিস্ট্রেশন, বিজি প্রেসে প্রশ্নপত্রের চাহিদা পাঠানো ও মুদ্রণ প্রভৃতি।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার শিখন মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশ, প্রচার ও বিতরণ; শিখন মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয় পরিবীক্ষণ ও গবেষণা করে মানোন্নয়নের সুপারিশ দেওয়া এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করবে বোর্ড। ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে বোর্ড প্রয়োজনীয়তার পরিপ্রেক্ষিতে বৃত্তি দেওয়ার সূচক সংশোধনের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে সনদ প্রদান, নাম ও বয়স সংশোধন, ডুপ্লিকেট সনদ প্রদান ও প্রয়োজনে প্রদত্ত সনদ প্রত্যাহার করবে।

প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অনুপস্থিতি, রিপোর্টেড শিক্ষার্থী, এন্ট্রি, এডিটিং, টেবুলেশন ও ডিকোডিং সংক্রান্ত পরিসংখ্যান মুদ্রণ ও প্রকাশ করবে শিক্ষা বোর্ড। জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়নে শিখন-শেখানো মূল্যায়ন সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যাবলী যেমন: প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশন, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও মডারেশনে কর্মশালা পরিচালনা, বিজি প্রেস থেকে মুদ্রণ, প্রশ্নপত্র বিতরণ ব্যবস্থাপনা, উত্তরপত্র নমুনা প্রণয়ন, প্রবেশপত্র নমুনা প্রণয়ন, নিরীক্ষক ও মূল্যায়নকারী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রভৃতি কাজ করতে হবে বোর্ডকে।

জাতীয় শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদন যেমন: শিখন মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশ, প্রতিবেদন প্রণয়ন, প্রচার ও বিতরণ, শিখন মূল্যায়ন সংক্রান্ত বিষয়াদি পরিবীক্ষণ ও গবেষণা করে মানোন্নয়নের সুপারিশ প্রদান প্রভৃতি।

বোর্ড কার্য সম্পাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কমিটি যেমন: নির্বাহী কমিটি, অ্যাডহক কমিটি, রেগুলার কমিটি, স্পেশাল কমিটি, অর্গানাইজিং কমিটি প্রভৃতি কমিটি গঠন এবং বিধিমালা ও প্রবিধানমালা অনুসারে তাহার ক্ষমতা ও দায়িত্বগুলো নির্ধারণ।

আগে সরকারের অনুমোদন নিয়ে বোর্ডের আধিকারিক এবং এই আইনে বিধানগুলো প্রতিপালনের উদ্দেশ্যে নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ পরামর্শকদের পদ সৃষ্টি ও বিলুপ্তি করাসহ সংখ্যা, পদবি বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য প্রাপ্তি নির্ধারণ করবে।

প্রবিধানমালায় ফি নির্ধারণ, দাবি ও আদায়, উপহার ও দান করা সম্পদ গ্রহণ ব্যবস্থাপনা, বৃত্তি, পদক ও পুরস্কার প্রচলন এবং বিতরণ করবে।

এই আইন এবং প্রবিধানমালায় ন্যন্ত দায়িত্ব পালন এবং ক্ষমতা প্রয়োগ করে চুক্তি সম্পাদন ও বাস্তবায়ন করবে।

সরকারের কাছে বোর্ড সংশ্লিষ্ট যেকোনও বিষয়ে মতামত পেশ করবে।

 

/এমআর/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
লন্ডনে ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে চান টিউলিপ সিদ্দিক
ঢাকায় সিঙ্গাপুর দল
ঢাকায় সিঙ্গাপুর দল
করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ, বন্দরে সতর্কতা জারি
করোনার নতুন উপধরনের সংক্রমণ, বন্দরে সতর্কতা জারি
ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়
ইউক্রেনে রুশ হামলায় নিহত ৬, অনিশ্চয়তায় যুদ্ধবন্দি বিনিময়
সর্বাধিক পঠিত
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
অবশেষে জুলাইয়ে চালু হচ্ছে ভূমি মালিকানা সনদ
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
মায়ের কবরে আবেগঘন শুভ: আকাশটাও কাঁদছিলো…
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
কমিটি গঠনের দুই দিনের মধ্যে এনসিপির দুই নেতার পদত্যাগ
কমিটি গঠনের দুই দিনের মধ্যে এনসিপির দুই নেতার পদত্যাগ