বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলাকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে দেখা গেছে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জীববিজ্ঞান প্রশ্নপত্রে। দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষার জীববিজ্ঞান প্রশ্নের এই অংশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হয়। এর আগে উচ্চ মাধ্যমিকের সৃজনশীল প্রশ্নে সাম্প্রদায়িকতা উঠে আসায় দ্রুত ব্যবস্থা নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দশম শ্রেণির নির্বাচনি পরীক্ষার জীববিজ্ঞান প্রশ্নপত্রে বলা হয়েছে, ‘রহমান সাহেবের বয়স ৫০ বছর। তিনি সবসময়ই তার ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নিয়ে টেনশনে থাকেন। একদিন হঠাৎ তার বুকের মাঝখানে, কিছুটা বামদিকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন এবং প্রচুর ঘামতে থাকেন। দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার তাকে ইসিজি করাতে বলেন এবং আপাতত বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলা দেখা থেকে বিরত থাকতে বলেন।’
এই উদ্দীপক থেকে চারটি প্রশ্ন করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে—(ক) স্ট্রোক কী? (খ) ধমনি ও শিরার মধ্যে চারটি পার্থক্য লিখ, (গ) রহমান সাহেবের বুকে এমন ব্যথা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করো এবং (ঘ) ‘প্রতিকার অপেক্ষা প্রতিরোধ উত্তম’- রহমান সাহেবের সমস্যার আলোকে বিশ্লেষণ করো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্ক শুরু হলে এই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, জনপ্রিয় ক্রিকেট খেলাকে বিতর্কিত করতে এমনটি করা হয়েছে। এটি ক্রিকেট খেলা নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র।
বিষয়টি নিয়ে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মরিয়ম বেগমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। মেসেজ দিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনও সাড়া দেননি তিনি।
তবে প্রতিষ্ঠানটির এক শিক্ষক ওয়াহাব বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখতে বলেছেন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিষয়টি ইতিবাচকভাবে ভাবতে পারেন আবার নেতিবাচকভাবেও দেখতে পারেন। আপনি যদি দেশপ্রেমিক হন, তাহলে বাংলাদেশের খেলা হলে আপনার হৃৎস্পন্দন হবে। কোনও দেশপ্রেমিক লোকের হৃৎস্পন্দন হলে তো হার্টফেল করতেই পারে। ’
প্রশ্নকারী শিক্ষকের নাম পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘টেস্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের জন্য সংগঠন থাকে। সেখান থেকে নেওয়া হয়। এই প্রশ্নপত্র বাইরে থেকে কিনে আনা। এই প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আমাদের কোনও শিক্ষক সম্পৃক্ত নন।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সৃজনশীল প্রশ্নের একটি স্ট্রাকচার রয়েছে, নির্দেশনা রয়েছে। সেটি যদি না জানেন তাহলে প্রশ্ন করার তো দরকার নেই। তাছাড়া প্রশিক্ষণ না থাকলেও মানুষের বোধ থাকে। তার নিজস্ব বোধ থেকে লিখলেও তো এমনটা হতে পারে না। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।'
উল্লেখ্য, গত ৬ নভেম্বর বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এবারের এইচএসসি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রশ্নের চতুর্থ পৃষ্ঠার ১১ নম্বর প্রশ্নে এমন বিষয়কে বেছে নেওয়া হয়, যা খুবই সংবেদনশীল। এতে সাম্প্রদায়িক উসকানি রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখিও হয়। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ওই প্রশ্ন প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত চার মডারেটরকে শনাক্তও করে ঢাকা বোর্ড। একইসঙ্গে ঘটনাটি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-
এইচএসসির প্রশ্নপত্রে ধর্মীয় উসকানি, তদন্ত কমিটি গঠন
এইচএসসির প্রশ্নে সাম্প্রদায়িক উসকানি: প্রশ্ন প্রণেতা ও মডারেটররা চিহ্নিত
প্রশ্নকর্তা ও মডারেটরদের আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ শিক্ষামন্ত্রীর