X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্লট দেওয়ার নামে শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা, দুই শিক্ষকও জড়িত

এস এম আব্বাস
২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৫আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ০৯:০৫

প্লট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজধানীর মিরপুরে ‘আল ফাতিহা’ নামের একটি সমবায় সমিতির নামে শতাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া সমিতির নামে জমি না কিনে কর্মকর্তারা নিজেদের নামে জমি কিনে সেগুলো আবার অন্যত্র বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে ৬৭ শতাংশের বেশি জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে দুই জন একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী সদস্যরা।

দুর্নীতি দমন কমিশন ও মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, তিন কাঠার প্লট আকারে রেজিস্টি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৭ সালের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে টাকা নেওয়া হয়েছে সদস্যদের কাছ থেকে। ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে সদস্যদের নামে তা রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার কথা থাকলেও সদস্যদের প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হচ্ছে না। টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

ভুক্তভোগীদের অন্যতম রাহেনা আক্তার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তিন কাটার প্লট আকারে রেজিস্টি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ২০১১ সাল থেকে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। অথচ সমিতির সম্পত্তি সদস্যদের না দিয়ে ইতোমধ্যে অন্য জায়গায় জমির একটি অংশ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। যেখানে জমি যিনি কিনেছেন তিনি স্থাপনাও নির্মাণ করছেন। বাকি জমিও বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে তারা। আমি মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন এবং আব্দুস সালামের মাধ্যমে টাকা দিয়েছি। ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে প্লট রেজিস্টি করে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ১১ বছর ধরে প্রতারণা করে চলেছেন।’

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘পরস্পর যোগসাজশে রাজধানীর মিরপুরের আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পত্তি আত্মসাতের চক্রান্তে নেমেছে সমিতির কতিপয় কর্মকর্তা। ইতোমধ্যে ৬৭ শতাংশ জমি বিক্রি করে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে তারা। আর কিং বিডি ফার্মাসিউটিক্যালস্ নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশ করে ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির চার একরের বেশি সম্পত্তি আত্মসাতের গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।’

আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে সাভারের হেমায়েতপুরের পাশে ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিম পাড় সংলগ্ন মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ধল্লা মৌজায় চার একরের বেশি জমি কেনার কথা জানানো হয়েছিল সদস্যদের। তিন কাঠার ১৩০টি প্লট বিক্রির নামে ২০০৭ সাল থেকে কয়েকটি ধাপে সদস্যদের কাছ থেকে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা নেওয়া হয়।

এরপর জমির খাজনা ও আনুসাঙ্গিক কাগজপত্র সম্পন্ন করে দ্রুত রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও সেটা অদ্যাবধি দেওয়া হয়নি। টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। নানা অজুহাতে প্লট রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার নামে বছরের পর বছর সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন আল ফাতিহা বহুমুখী সমবায় সমিতির কর্মকর্তারা। লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, সমিতির যে জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে সেই জমি দখলে নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করছেন কিং বিডি ফার্মাসিউটিক্যালস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। অথচ গ্রাহকরা কোনও কিছুই পাননি।

সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভুক্তভোগী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন ও আবদুস ছালামের মাধ্যমে একটি প্লটের জন্য আট লাখ টাকা দিয়েছি ২০০৯ সালে। এখনও জমি রেজিস্টি করে দেয়নি। টাকা চাইলেও তারা দিচ্ছে না।’

গত সপ্তাহে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ। ডেঙ্গু আক্রান্ত। কয়েকদিন দিন বাসায় এসেছি। বিষয়টি শিগগিরই সপ্তাহের মধ্যে সুরাহা হবে। শরীর সুস্থ হলে আমি আপনার সঙ্গে কথা বলবো।’

জমি বিক্রির কথা স্বীকার করে আল ফাতিহা সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘জায়গা-জমির মধ্যে ঝামেলা আছে। কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, কিছু খাস খতিয়ান আছে। আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আগে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তারা ভুলগুলো করেছে। ৪২৯ শতাংশ জমির মধ্যে আমরা একজনকে ৬৭ শতাংশ রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। জমির ক্রেতা চেক দিলেও টাকা না দেয়নি। টাকা না দিলে আমরা মামলায় যাবো। কিং বিডির রাজ্জাক সাহেব যদি বাকি জমি না কেনে তাহলে আমরা পাওয়ার নিয়ে পুরো জমি বিক্রি করে দেবো।’ কেউ জমি বা টাকা তসরুপ করেনি বলেও দাবি করেন তিনি।

আল ফাতিহা সমবায় সমিতির বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এ এস এম জসিম উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা ১৫ কোটি টাকায় সব জমি বিক্রি করেছি, কিন্তু টাকা পাইনি। তাতে কোনও সমস্যা হবে না। কারও টাকা মার যাবে না। যাদের কাছে বিক্রি করেছি, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছেএ মাসেই টাকা ফেরত দেবে না হয় জমি ফেরত দেবে। শিগগিরই সমিতির চেক দেওয়া হবে। যদি দেওয়া সম্ভব না হয়, তাহলে যেসব সদস্য আমার মাধ্যমে এসেছেন- তাদের টাকা আমি প্রয়োজনে রিটায়ারের টাকা পেলে দিয়ে দেবো। অভিযোগকারীর ২১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ফেরত দেবো, কিন্তু সময় দিতে হবে।’

প্রতারণায় অভিযুক্ত মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আরেক সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সমিতির জমি বিক্রির কথা স্বীকার করে আল ফাতিহা সমবায় সমিতির সাবেক কোষাধক্ষ্য অসবরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য সার্জেন্ট ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কিং বিডি নামের প্রতিষ্ঠানকে ৬৭ শতাংশের কিছু বেশি জমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলাম। সেই জমির মূল্য বাবদ ২ কোটি ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকার চেক দিয়েছে। কিন্তু টাকা দেয়নি। টাকা না দিতে পারায় জমিটি এখন ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুরো জমির দাম ধরা হয়েছিল ১৫ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি সমাধান করার কথা হয়েছে।

আরও পড়ুন: 

‘চাকরি সরকারি স্কুলে, করেন জমির দালালি ও প্রতারণা’

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!