X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শুধুই বিরোধিতার জায়গা নেই

উদিসা ইসলাম
২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩০আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৩:৩০

আগামী বছর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের কয়েকটি শ্রেণিতে নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাক্রম চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এতে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিক্ষকদের একটি অংশ মনে করছেন, এতে শিক্ষার্থীরা উপকার পাবে না। আরেক অংশ বলছেন, নতুন করে শুরু করার এখনই সময়। আর এই শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা ও অভিভাবকদের জানানোয় কিছু ঘাটতি থাকায় ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে, শিক্ষাক্রম নিয়ে আমরা আশাবাদী।

কী করতে যাচ্ছে সরকার? নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া মাধ্যমিকে মানবিক, বাণিজ্য ও বিজ্ঞান; এসব বিভাগ বিভাজনও থাকছে না। তবে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগে পড়তে পারবেন। চলতি বছর প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আগামী বছর বাস্তবায়ন করা হবে তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ শ্রেণিতে এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে ধাপে ধাপে নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কথা রয়েছে।

এই শিক্ষাক্রমের সমালোচকরা বলছেন, নবম শ্রেণিতে বিভাগ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা থাকা দরকার। আর কারিগরির ওপর বেশি জোর দিলেও শ্রমবাজারের বাস্তবতা ভিন্ন হওয়ায় সেটা হিতে বিপরীত হবে। যদিও শিক্ষার্থীদের আনন্দময় পরিবেশে পড়ানোর পাশাপাশি মুখস্থনির্ভরতার পরিবর্তে দক্ষতা, সৃজনশীলতা, শেখাতেই নতুন এই শিক্ষাক্রম চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। 

তাদের দাবি, ১৩ বছরে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে নানা পরিবর্তন করা হয়েছে; যার প্রত্যেকটি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে এবং নতুন এই শিক্ষক্রমও শতভাগ ব্যর্থ হবে। এর মাধ্যমে ইংরেজি মাধ্যম আরও জনপ্রিয় হবে। কী কারণে কোচিং বাণিজ্য হয়, যাদের এই সমন্ধে ন্যূনতম ধারণা নেই, তারাই নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছেন।

এক অংশ কেন এতো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, এমন প্রশ্নে এনসিটিবির শিক্ষাক্রমের দায়িত্বে থাকা বাস্তবায়নকারী সংস্থা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন, ‘দীর্ঘদিনের পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসার কারণেই নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।’

নতুন শিক্ষা পদ্ধতির এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠবে, আশা করছেন তিনি। তার কথায়, ‘যেসব সমালোচনা হচ্ছে, সেগুলো আমরা বিবেচনা করছি। পরবর্তীতে প্রয়োজন মনে করলে কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হবে। আপাতত ছেলে-মেয়েরা নতুন শিক্ষাক্রমেই পড়বে।‘

নিউইয়র্কের আইবিএম থমাস জে. ওয়াটসন রিসার্চ সেন্টারে তত্ত্বীয় কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিজ্ঞানী ওমর শেহাব। তিনি বাংলাদেশে সম্প্রতি শিক্ষাক্রম পরিমার্জন প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি বিষয়ের শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষক নির্দেশিকা রচয়িতাদের একজন। তিনি মনে করেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে যেকোন বিরোধিতার মূল পুঁজি হল সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর অভিভাবকদের বিশ্বাসের অভাব। এই অবিশ্বাস তৈরি হয় যখন অভিভাবকরা মনে করেন— তারা যথেষ্ট তথ্য পাচ্ছেন না। অথবা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে তাদের সন্তানদের জীবনে অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে।

এ কারণে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরকে আরও তৎপর হতে হবে বলে মনে করেন এই বিজ্ঞানী। তার কথায়, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের উচিৎ শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নের প্রক্রিয়াটি সাধারণ মানুষের কাছে পরিষ্কার করা। কীভাবে ২০১৮ সালে থেকে প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করা হয়েছে, প্রত্যেক ধাপে কাদের সঙ্গে রাখা হয়েছে, কেন সেই ধাপটি প্রয়োজন ছিল; এসব সহজ ভাষায় মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। একজন অভিভাবকের চাওয়া খুব সহজ। তারা চান অন্তত ছেলে-মেয়ে যেন পাস করে ভালো চাকরি পায়। আর তারা যেটি চান না সেটি হলো— আগে থেকে না জানিয়ে কোনও কিছু পাল্টানো। কেন নতুন শিক্ষাক্রম তাদের সন্তানকে পাস করে ভালো চাকরি পেতে সাহায্য করবে, এটি সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দেওয়া জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দায়িত্ব। একইভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরকেও অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। 

ওমর শেহাব বলেন, ‘এর আগে যখন বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে; একমুখী শিক্ষা, সৃজনশীল কারিকুলাম, বিজ্ঞান শিক্ষা বিস্তরণ— এগুলোর সবই হয় বিতর্কিত হয়েছে, না হয় ব্যর্থ হয়েছে। কাজেই এবার অভিভাবকরা কেন তাদের বিশ্বাস করবেন, সেটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরকেই নিজে থেকে উদ্যোগ নিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে। তাদের দেখাতে হবে যে, তারা আগের ভুল থেকে শিখে এবার আরও ভালো কিছু করছেন।’

সারা বিশ্বে সরকারের যেসব সাফল্যের কথা বলা হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রেই কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর মানুষের দরজায় বারবার গেছেন বলেও উল্লেখ করেন এই বিজ্ঞানী। তার মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরকেও তাই করতে হবে। এর কোনও শর্টকাট নেই। এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে আমি আশাবাদী যে সরকার সেটি করবে।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
দ্রুতই সংশোধন হচ্ছে পাঠ্যবই
শিক্ষাক্রম নিয়ে পানি ঘোলা করছে উগ্রবাদী গোষ্ঠী: রাশেদা কে চৌধুরী
‘শরীফার গল্প’ পর্যালোচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন
সর্বশেষ খবর
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
টস হেরে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ
বজ্রাঘাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় কারিগরি ত্রুটি, দীর্ঘ যানজট
বজ্রাঘাতে পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজায় কারিগরি ত্রুটি, দীর্ঘ যানজট
স্যালাইনের দাম না বাড়াতে সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্যালাইনের দাম না বাড়াতে সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
শরীয়তপুরে আগুনে পুড়লো ৯ দোকান, ক্ষতি দুই কোটি টাকা
শরীয়তপুরে আগুনে পুড়লো ৯ দোকান, ক্ষতি দুই কোটি টাকা
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র