X
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পাশাপাশি ভবনে দুই পলিটেকনিক, সাফাই গাইলেন বোর্ড চেয়ারম্যান!

এস এম আববাস
০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২৪, ২৩:৫৯

নিয়ম অনুযায়ী, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হলে নির্ধারিত দূরত্ব মানতে হয়। মেট্রোপলিটন সিটি, শিল্প এলাকা ও পৌরসভা এলাকার জন্য কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান থেকে দূরত্ব হতে হবে কমপক্ষে এক কিলোমিটার। আর এর বাইরে হলে দূরত্ব হতে হবে কমপক্ষে তিন কিলোমিটার। অথচ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদরে হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের ভবনে মাত্র ৩৬০ মিটার দূরে নতুন একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট অনুমোদন পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন পায় দুই দফা তদন্তের পর। প্রথমে দূরত্বের সনদের জন্য তদন্ত প্রতিবেদন প্রয়োজন হয়। তারপর শিক্ষা বোর্ডর সরেজমিন প্রতিবেদনের সুপারিশের পর পাঠদান অনুমোদন দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

দেবীদ্বার উপজেলার নিউ মার্কেট এলাকার হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পাঠদানের অনুমোদন নিয়ে আগে থেকেই পরিচালিত হচ্ছে। গত ৬ নভেম্বর পাশাপাশি অন্য একটি ভবনে ইন্টিগ্রেটেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পাঠদানের অনুমোদন পায়। শিক্ষা বোর্ডের সরেজমিন প্রতিবেদনের পর ‘অবৈধ লেনদেনের’ মাধ্যমে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এ ব্যাপারে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান দোষ চাপালেন উপজেলা নির্বাহী অফিস ও শিক্ষা অফিসের ঘাড়ে। আর সাফাই গাইলেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সরেজমিন তদন্তের পক্ষে।

পুরাতন প্রতিষ্ঠানের পাশের ভবনে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পাওয়ায় গত ৯ নভেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর কাছে একটি অভিযোগ করে হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগে বলা হয়, হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশে আরেকটি ভবনে ইন্টিগ্রেটেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট নামে নতুন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ড টানানোর বিষয়টি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু তারপরও প্রতিষ্ঠানটিকে পাঠদানের অনুমতি দিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। লিখিত অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির পাঠদানের অনুমোদন স্থগিত রাখার ব্যবস্থা নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল হক অপু।

কীভাবে অনুমোদন পেলো তার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেবীদ্বার উপজেলার নিউ মার্কেট এলাকার হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হাজী তাহের মঞ্জিলে অবস্থিত। প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমোদন পায় ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। এই প্রতিষ্ঠানটির পাশে ৩৬০ মিটার দূরে ফয়েজ ম্যানশন দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা ঠিকানা দেখিয়ে আবেদন স্থাপন ও পাঠদানের জন্য আবেদন করে ইন্টিগ্রেটেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। শিক্ষা বোর্ড পরিদর্শন করে দূরত্ব বেশি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। প্রতিষ্ঠানটি স্থাপনের সময় এবং পাঠদান অনুমোদনের সময় দূরত্বের সনদ দেওয়া হয় বেশি দূরত্ব দেখিয়ে। দূরত্বের সনদ বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানটি পাঠদানের অনুমোদন পায় গত ৬ নভেম্বর।

প্রতিষ্ঠান স্থাপন নীতিমালা অনুযায়ী মেট্রোপলিটন সিটি, শিল্প এলাকা ও পৌরসভা এলাকার মধ্যে আগে প্রতিষ্ঠিত একই ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে এক কিলোমিটারের কম দূরত্বে নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদনের কোনও সুযোগ নেই। অথচ ইন্টিগ্রেটেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট গত ৬ নভেম্বর পাঠদানের অনুমোদন পায়।

হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হাজী মো. ফজলুল হক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. জহিরুল হক অপু বলেন, সকল নিয়ম-নীতি ফলো করে আমাদের প্রতিষ্ঠান পাঠদানের অনুমোদন হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ড দুই বার ইন্সপেকশন করেছে। এটি একটি মফস্বল এলাকা। এখানের ছেলেমেয়েরা এমনিতেই পড়তে চায় না। প্রতিষ্ঠানটি তিন বছরে মাত্র ৩০ জন ছাত্র পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে নীতিমালা লঙ্ঘন করে মাত্র ৩৬০ মিটার দূরে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিলে দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে। এতে কারিগরি শিক্ষাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ‘

মো. জহিরুল হক অপু আরও বলেন, ‘দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটির অনুমোদনে অনেক টাকা-পয়সার লেনদেন হয়েছে শুনেছি। তা নাহলে নীতিমালা লঙ্ঘন করে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন হতে পারে না। একটি  প্রতিষ্ঠান স্থাপনের আগে একবার ইন্সপেকশন হয়, আর পাঠদানের আগে আবারও ইন্সপেকশন হয়। দুই বার ইন্সপেকশন করার পর এতো বড় ভুল কীভাবে হয়? তাছাড়া প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা বোর্ডে আছে। আমাদের প্রতিষ্ঠান পৌরসভার ভেতরে। তাও শিক্ষা বোর্ড জানে। তারপর ও কীভাবে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয় তা আমি বুঝতে পারছি না।’

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলেন, ঘুষ দিলে দূরত্বের সনদ দেয় সংশ্লিষ্ট অনেক কর্মকর্তা। আর শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শন প্রতিবেদনও ঘুষের মাধ্যমে ইচ্ছামতো করিয়ে নেওয়া যায়। তাই একই ভবনে নতুন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহজ শর্তে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকায় প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পাঠদান অনুমোদন এবং অ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি নিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। ঘুষ দিয়ে দূরত্ব সনদ নিয়ে স্থাপন ও পাঠদানের অনুমোদন পাওয়া যায়।

পাশাপাশি ভবনে কীভাবে নতুন প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেলো জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খান উপজেলা নির্বাহী অফিস ও শিক্ষা অফিসের ঘাড়ে দোষ চাপান। বোর্ডের তদন্তের পক্ষ নেন চেয়ারম্যান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শিক্ষা অফিস যদি রিপোর্ট দেয়, দূরত্ব এক কিলোমিটার বলে তাহলে আমরা কী করবো বলেন? ’

শিক্ষা বোর্ড সরেজমিন পরিদর্শন করে তাহলে কীভাবে অনুমোদন পায়, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এইপারে একটি প্রতিষ্ঠান ওইপারে আরেকটি প্রতিষ্ঠান, তাহলে কীভাবে বুঝবো? ঘটনাস্থলে তো চেয়ারম্যান যায় না। ’

কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি, মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট করেছি। মন্ত্রণালয় বিবেচনা করে নতুন যারা প্রতিষ্ঠান করেছে তারা ঠিকানা পরিবর্তন করলেই হয়ে যাবে, অসুবিধা নেই।‘

/ইউএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এতিমখানায় খাবার দেবে আ.লীগের উপ-কমিটি
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এতিমখানায় খাবার দেবে আ.লীগের উপ-কমিটি
রিজার্ভ আর সরকারের পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না: এবি পার্টি
রিজার্ভ আর সরকারের পতন কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না: এবি পার্টি
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল: হাইকোর্টের রায় স্থগিত
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের কনডেম সেল: হাইকোর্টের রায় স্থগিত
খুলনায় হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড
খুলনায় হত্যা মামলায় ২ জনের মৃত্যুদণ্ড
সর্বাধিক পঠিত
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
সোনার অলংকার কেনাবেচায় নতুন হার নির্ধারণ
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
পেঁয়াজ আমদানি শুরু
নিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি টাকা আত্মসাৎনিজের বাসায় পরীক্ষা নিয়েছিলেন কর কর্মকর্তা!
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
একীভূত হতে পারে কেউ পাস না করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল
যে কারণে রাজশাহীর তিন প্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী ফেল